প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বাড়িতেই চলছে ইউপি চেয়ারম্যানের কাজ ॥ সেবা প্রার্থীদের পদে পদে হয়রানি
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে চেয়ারম্যানের অফিসে তালা ঝুলছে। ইউপি সচিবসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইউনিয়ন পরিষদের অফিস করলেও নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম করেন নিজের বাড়িতেই। এ কারণে সেবা প্রার্থীদের নিদারুণ হয়রানি হতে হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদে এসে নিবন্ধনসহ অন্য কার্যক্রম করলেও শুধুমাত্র চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের জন্যে তাদেরকে যেতে হয় চেয়ারম্যানের বাড়িতে। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মিরাজের। ইতিপূর্বে গণ-অভ্যুত্থানের কারণে চেয়ারম্যান আত্মগোপনে আছেন জানিয়ে তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মসহ নানা অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন কয়েকজন ইউপি সদস্য। এর আগে স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজ ও স্থানীয় জনতা দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান আখ্যা দিয়ে চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা মেরে দেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মিরাজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম, টাকা আত্মসাৎ এবং সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে থাকার অভিযোগ আনেন তার ইউপি সদস্যদের একাংশ।
লিখিত বক্তব্যে তারা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হোল্ডিং ট্যাক্সের ১ কোটির অধিক টাকা ব্যাংকে জমা না দেয়া, কাজ না করে কাবিখা-কাবিটা প্রকল্পের টাকা উত্তোলন, নিজস্ব বাহিনীর সিম কার্ড ব্যবহার করে ৪০ দিনের কর্মসূচি প্রকল্পের টাকা উত্তোলন এবং উল্লেখিত টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন। এছাড়াও জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, ওয়ারিশ সনদ, নাগরিকত্ব সনদসহ সেবাখাতসমূহ থেকে সরকারি ফি-এর অতিরিক্ত বহুগুণ ফি আদায়েরও অভিযোগ করেন তারা।
ইউপি সচিব আব্দুল মান্নান এসব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্সের টাকা ব্যাংকে জমা হয়নি। প্রকল্পের টাকা, ৪০ দিনের কর্মসূচির অর্থসহ সকল বিষয়ে চেয়ারম্যান মহোদয় অবগত আছেন। তাছাড়া অফিস ম্যানেজ করতেই জন্ম নিবন্ধন ফি বাবদ ২৯০ টাকা থেকে ৫ শতাধিক টাকা নেয়ার কথা তিনি স্বীকার করেন ।
এদিকে চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের বাসিন্দা শাহআলম (৫৫), ইব্রাহিম মিয়া (৪৫), গৃহবধূ নুরজাহান বেগম (৩০)সহ আরো কয়েকজন জানান, শিশুদের জন্মনিবন্ধনের জন্যে আমাদের একবার ইউনিয়ন পরিষদে আরেকবার চেয়ারম্যানের বাড়িতে আসা যাওয়া করতে হয়। একদিকে সময় নষ্ট, অন্যদিকে অনেক অর্থের অপচয় হচ্ছে।
ইউপি সদস্যদের একাংশের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে সরেজমিন গিয়ে চেয়ারম্যান মিরাজকে বাড়িতেই পাওয়া গেল । সেখানেই করছেন সালিস। প্রয়োজনীয় স্বাক্ষরাদিও সারছেন সেখানেই। বাড়িতেই বিকল্প ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় গড়ে তুলেছেন তিনি!
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, নৌকার মনোনয়নে চেয়ারম্যান হয়েছি। সরকার পতনের পর সাবেক চেয়ারম্যান বাছির আহমেদের নেতৃত্বে আমার কার্যালয়ে তালা দেয়া হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। পরিষদে গেলে লাঞ্ছিত হবার আশঙ্কা করছি। তাই বাড়িতেই বসে কাজ করতে হচ্ছে।
তিনি জানান, স্থানীয় বেড়ি বাজারে আরেকটি অফিস রয়েছে তার। সেখানেও তিনি সেবা দিচ্ছেন নিয়মিত।
তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মিরাজ বলেন, নাগরিক সেবা খাতসমূহে যে সকল অনিয়মের অভিযোগ এসেছে তার দায় মূলত সচিব আব্দুল মান্নান এবং উদ্যোক্তার। কাজ সম্পন্ন করার স্বার্থে কাবিখা-কাবিটা প্রকল্পের কিছু টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে ইউনিয়নের উন্নয়ন কাজে ট্যাক্সের টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এর হিসাব আমার কাছে আছে। সিম কার্ডের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।