শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

চাঁদপুর পৌরসভার নগর সমন্বয় কমিটি (টিএলসিসি) সভা

গোলাম মোস্তফা ॥
চাঁদপুর পৌরসভার নগর সমন্বয় কমিটি (টিএলসিসি) সভা

চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসক একরামুল ছিদ্দিক বলেছেন, আমি চাঁদপুর পৌরসভার দায়িত্ব নিয়েছি ১ মাস হলো। আর চাঁদপুরে এসেছি ৬ মাস আগে। তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, দেশের একটি পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে পৌরসভার দায়িত্ব নেই। আমি যেদিন এ পৌরসভায় আসি, তখন দেখি হামলার কারণে ভাংচুরসহ বিধ্বস্ত এ পৌরসভা। তখনই পৌরসভার কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ অনলাইন উন্নয়ন, পৌরসভার অরক্ষিত ভবনকে রক্ষিত করার জন্যে একটি গেট করার সিদ্ধান্ত নেই। পরবর্তীতে সকলের সাথে আলোচনা করে জনগণের নিত্য সমস্যা সমাধান, জন্ম নিবন্ধন, নাগরিক সনদসহ অন্য সেবাগুলো আগে চালুর ব্যবস্থা নেই।

তিনি চাঁদপুর পৌরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আমি যেনো একটি বিশাল জাহাজ নিয়ে নেমেছি। এটি এখন ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। আশা করি স্থিতিশীল হবে। নাগরিকদের সুবিধার্থে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে নিয়ে সড়ক ও ড্রেনেজসহ অন্যান্য সমস্যা দেখে আগে মূল সড়কগুলো সংস্কারে বা উন্নয়নে হাত দিয়েছি। আশা করছি শীঘ্রই সড়ক, ড্রেন, সড়কের ল্যাম্প পোস্টের বাতির সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

তিনি পৌরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, নাগরিকদের জন্যে যতো ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, তা আমি করবো। কিন্তু এই শহর আপনাদের, তাই একটি সুন্দর পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলতে আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। আপনাদের সহযোগিতা নিয়েই একটি সুন্দর শহর গড়ে তুলবো। তিনি জানান, পৌরসভার চলমান উন্নয়ন কাজ চলছে, আমি প্রতিনিয়ত সেটি তদারকি করি, এই কাজ আপনারাও দেখবেন। এজন্যে আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার নাম্বার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের নাম্বার দিয়েছি, যাতে কোনো সমস্যা হলে আমাকে বা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানাতে পারেন। তিনি জনস্বার্থে সকলকে সচেতনতার সাথে নজরদারি করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কেউ যেন রাস্তার কোনো ফুটপাত দখল করতে না পারে সেটি খেয়াল রাখবেন। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর কয়েকজন দখলদার বিভিন্ন স্থানে দখল করতে আসে, তা শোনার সাথে সাথে প্রতিহত করেন। তিনি বলেন, এ সময় অনেক প্রভাবশালীর তদবির আসলেও তা কর্ণপাত করিনি।

তিনি উক্ত সভায় পৌর নাগরিকদের পক্ষ থেকে আসা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। এজন্যে তিনি নাগরিকদের পক্ষ থেকে বারবার সহযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাতে সম্পন্ন করার প্রস্তাবসহ অন্য ভালো প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা হবে। তবে একটু সময় তো দিতে হবে। সমস্যা অনেক, তাই স্বল্প সময়ে সমাধান সম্ভব নয়। তাছাড়া নিশ্চয়ই আপনারা অবগত আছেন, পৌরসভায় তেমন কোনো বরাদ্দ নেই। পৌরসভার চলমান কাজের মধ্যে ২/১ টি কাজ পূর্বে টেন্ডার করা। বাকি সকল কাজে এখন পর্যন্ত আমরা কোনো বরাদ্দ পাইনি, পৌরসভার নিজস্ব আয় থেকে আমরা চলমান রেখেছি।

তিনি বলেন, আমার ওপর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সারাদিন ব্যস্ত থাকি। এরপরও পৌরসভার উন্নয়নের কাজ করছি। এতে আমার কোনো স্বার্থ নেই বা পৌরবাসীর কল্যাণে কাজ করলে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হবো না। কিন্তু আমি নীতি এবং নৈতিকতার কারণে, বিবেকের তাড়নায় এবং সরকারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে জনস্বার্থে সকল কার্যক্রম করছি এবং আগামীতেও করবো। আপনাদের পৌরসভা সুন্দর করতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।

চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসক একরামুল ছিদ্দিক গতকাল সোমবার চাঁদপুর পৌরসভার হলরুমে চাঁদপুর নগর সমন্বয় কমিটি (টিএলসিসি)-এর সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপর্যুক্ত কথাগুলো বলেন।

তিনি বলেন, চাঁদপুর পৌরসভায় প্রশাসকের দায়িত্ব নেয়ার পর আমি প্রথমে প্রকৌশলীকে নিয়ে সড়কের সমস্যা ঘুরে দেখতে গিয়েছি। বিশেষ করে পুরাণবাজার লোহার পুল-দোকানঘর, আঃ করিম পাটোয়ারী সড়ক ও ট্রাক রোড। এরপর পর্যায়ক্রমে গুরুত্ব বুঝে কাজ শুরু করি।

তিনি বলেন, রঘুনাথপুরে কবরস্থান দখল করার কথা জানতে পেরে রাতেই দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে তা রক্ষা করেছি। পুরো শহরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নেয়া প্রয়োজন। আমাদের সবার দায়িত্ব পুলিশের পাশে দাঁড়ানো। আমরা মন খুলে কাজ করতে চাই। আমি আমজনতার কথা শুনতে প্রস্তুত। অনেকেই বিভিন্ন কাজের ছবি-ভিডিও আমাকে ম্যাসেজে দিচ্ছেন। আমি প্রতিদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এডিএম হিসেবে বিচার কার্য পরিচালনা করতে হয়, ডিডিএলজি হিসেবে জেলার সকল পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম মনিটরিং করতে হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (মানবসম্পদ) হিসেবেও কাজ করতে হয়। এসব রুটিন দায়িত্বপালনশেষে পৌরসভায় কাজ করতে আসতে হয়। আমি সবার কথা শোনার চেষ্টা করি। তারপরও যাদেরটা শুনতে পারি না, তাদের সুবিধার্থে আমি চাঁদপুর পৌর প্রশাসক নামে একটা গ্রুপ খুলেছি। আমি যদি আপনাদের কল ধরতে না পারি, তবে আমাকে ম্যাসেঞ্জারে নক করবেন। আমি যতো রাত হোক কল দিয়ে অভিযোগ শুনবো। তিনি বলেন, কাউন্সিলরদের বলা হয়েছে, আমি অনেককেই চিনি না, তাই আপনারা যারা জনপ্রতিনিধি আছেন তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, নিজ নিজ এলাকার নাগরিক সুবিধাদি নিশ্চিত করবেন। তিনি বলেন, পৌরসভায় কাউন্সিলরদের উপস্থিতি পূর্বের চেয়ে বেড়েছে, পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছে। আশা করি একমাস পর বর্তমানের চেয়ে ভালো পরিস্থিতি ও অগ্রগতি দেখতে পাবেন।

পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় টিএলসিসি সভায় মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন টিএলসিসি সদস্য সর্বজনাব ডাঃ এসএম মোস্তাফিজুর রহমান, কাজী শাহাদাত, তমাল কুমার ঘোষ, রাধা গোবিন্দ গোপ, রূপালী চম্পক, অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, সমাজসেবা কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম, পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজিব শর্মা৷ এনজিও কর্মকর্তা সেলিম পাটওয়ারী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নাজমা আলম সহ আরো অনেকে। পৌরসভার সাম্প্রতিক উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম সামসুদ্দোহা। আরো বক্তব্য রাখেন নগর পরিকল্পনাবিদ সাজ্জাত ইসলাম।

সভায় চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তমাল কুমার ঘোষ জানান, চাঁদপুর পৌর এলাকায় ৩৬টি পূজামণ্ডপে পূজা হবে। এ প্রতিমাগুলো বিসর্জনের জন্যে পৌরসভা থেকে স্থান নির্ধারণ করাসহ নানা বিষয়ে পূজা উদযাপন ও পূজামণ্ডপ কমিটির সাথে মতবিনিময় সভা করার আহ্বান জানান।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত পৌর প্রশাসকের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের পট পরিবর্তনে পৌর নাগরিকরা যখন অনেকটা হতাশায় ভুগছিলেন, তখন আপনি দায়িত্ব নিয়ে আপনার উদ্যোগ, জবাবদিহিতা ইত্যাদি নিশ্চিত করে আশান্বিত করেছেন। এজন্যে পৌর নাগরিকদের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ। তিনি ফুটপাত দখলের বিষয়ে বলেন, জিটি রোড দক্ষিণে এক প্রভাবশালী তার দোকান তিন ফুট রাস্তায় নিয়ে এসেছে। এ বিষয়টি নজর দেয়ার জন্যে পৌর প্রশাসকের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি চাঁদপুরকে নান্দনিক করার কাজ চলমান রাখার আহ্বান জানান। এদিকে নগর উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সদস্যদের নানামুখী সমস্যা তুলে ধরার পর কীভাবে সেগুলো সমাধান করা হবে এবং পর্যাক্রমে কী, কী কাজ করা হবে তা পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম সামছুদ্দোহা তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন।

উল্লেখ্য, চাঁদপুর পৌরসভার এবারের নগর সমন্বয় কমিটি (টিএলসিসি)-এর সভায় পৌরসভার মোট ১৫টি ওয়ার্ডের ১৫জন ও সংরক্ষিত ৫ নারী কাউন্সিলরসহ ২০ জনের মধ্যে ৭ জন উপস্থিত ছিলেন। এরা হছেন কাউন্সিলর চান মিয়া মাঝি, ইউনুছ শোয়েব ও সাইফুল ইসলাম, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর আয়শা রহমান, খালেদা রহমান, ফেরদৌস আক্তার ও শাহিনা সুলতানা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়