প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
চরবাগাদী পাম্প হাউস এলাকায় পাউবোর ভরাটকৃত বিশাল জায়গাটি ব্যক্তিস্বার্থে নয়, জনস্বার্থে শিশু বিনোদন কেন্দ্র করার দাবি
চাঁদপুর জেলায় শিশুদের জন্যে বিনোদনের নির্ধারিত কোনো জায়গা নেই। এতে করে কোমলমতি শিশুরা বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সুস্থ বিনোদনের সাথে শিশুরা নিজেদেরকে জড়িত করতে না পেরে তারা একঘেঁয়ে হয়ে যাচ্ছে। তারা সারাক্ষণ মোবাইল ফোন ও টিভি দেখে সময় কাটায়। এতে তাদের মানসিক বিকাশ ঘটে না। তাই চাঁদপুর জেলায় শিশু বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করা এখন সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে ব্যক্তিমালিকানা নয়, সরকারি জায়গাই হতে পারে শিশু বিনোদনের জন্যে উপযুক্ত স্থান।
এ ধরনের একটি স্পট চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নে রয়েছে। ইউনিয়নের চরবাগাদী পাম্প হাউস (নানুপুর) স্লুইচ গেইট এলাকায় পাউবোর কয়েক একর সম্পত্তি নদী খননের মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। এমনকি ভরাটকৃত স্থানের উত্তর পাশে নদী তীরবর্তী পর্যন্ত জায়গা ভরাট করা হলে এই কয়েক একর জায়গার উপর শিশু বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করা যেতে পারে। এতে সহস্রাধিক শিশু এক সঙ্গে বিনোদন করতে পারবে। সচেতন মহল বলছেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তিতে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে গিয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে জমি ক্রয় করতে হয়। এতে অনেক সময়ক্ষেপণ হয়। সরকারি এই কয়েক একর সম্পত্তির ওপরে বিনোদনের স্থান স্বল্প সময়ের মধ্যে গড়ে তোলা সম্ভব। বিনোদন কেন্দ্রে কমিউনিটি সেন্টার একপাশে নির্মাণ করা হলে সেখানে বিয়ে, বনভোজনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্যে ভাড়া দেয়া হলে সে টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। এতে সরকার অনেক লাভবান হবে। কিন্তু ভরাটকৃত স্থান ব্যক্তির নিকট ইজারা না দিয়ে অথবা বালু সিন্ডিকেটের কাছে ইজারা না দিয়ে শিশু বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করলে সরকার যেমন লাভবান হবে তেমনি কোমলমতি শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি বিনোদনের জন্যে চমৎকার একটা স্পট হবে। এমনকি বেকার লোকজন সরকারি এ বিনোদন স্থানে চাকুরি করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। কিন্তু একটি কুচক্রী মহল ভরাটকৃত স্থানকে পুঁজি করে নিজেদের আখের গোছানোর জন্য এখানে বালু মহাল করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে। এতে চিহ্নিত সিন্ডিকেটের কিছু লোক লাভবান হবে ঠিক, কিন্তু সমাজের কোনো উপকার হবে না।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও বাগাদী ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব বেলায়েত হোসেন গাজী বিল্লালসহ সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি বিবেচনা করে এখানে শিশু বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করলে চাঁদপুরবাসী তাদেরকে আজীবন স্মরণে রাখবে বলে জানান এলাকাবাসী। জানা গেছে, ২/৩ বছর আগে বাগাদী ইউপি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন গাজী বিল্লাল চরবাগাদী পাম্প হাউস এলাকায় শিশু পার্ক করার প্রস্তাবনা দেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে। তখন তাঁরা বলেছেন এটি মহতী প্রস্তাব। কিন্তু ওইসময় মাঠ ভরাট ছিলো না। এখন মাঠ ভরাট হয়ে গেছে। তাহলে সেই উদ্যোগকে এখন কাজে লাগানো প্রয়োজন। এখন কম অর্থায়নে শিশু বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করা সম্ভব।
সরজমিনে গেলে জানা যায়, ডাকাতিয়া নদীর গভীরতা বৃদ্ধির জন্যে নদী খনন করা হচ্ছে। বাগাদী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের হাজরা গ্রামের প্রবেশ মুখ থেকে নদী খনন কাজ শুরু হয়। প্রথমে নদী খননের মাটি স্থানীয় লোকজন কেউ নিজেদের ডোবা ও পুকুর ভরাট করার জন্যে নিয়ে যায়। আবার অনেকে লাভবান হওয়ার জন্যে নিজেদের আয়ত্তে মাটি নিয়ে স্তূপ করে রাখে বিক্রি করার জন্য। সর্বশেষ মাটি দিয়ে চরবাগাদী পাম্প হাউসের পূর্ব পাশের কয়েক একর নিচু মাঠ ভরাট করা হচ্ছে। ভরাটকৃত জায়গা এখন বাঁধের সমান হয়ে বিশালাকার মাঠে পরিণত হয়েছে। যে জায়গাটুকু ভরাট করা হয়েছে সেই জায়গার উত্তর পাশে প্রায় ৩ একর জায়গা লীজবিহীন বালু উত্তোলন করে ব্যবসা করা হলেও বর্তমানে জায়গাটুকু খালি পড়ে আছে। সে জায়গাটুকুও ভরাট করা হলে প্রায় ৮/১০ একর জায়গা জুড়ে বিশাল খালি জায়গা হয়ে যাবে। শিশু বিনোদন কেন্দ্রের জন্যে একটি উপযুক্ত স্থান হবে এটি। স্থানীয়দের দাবি, বালু বিক্রি করার জন্য ইজারা না দিয়ে এখানে শিশু বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে সরকার অধিক লাভবান হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি ও চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব বেলায়েত হোসেন গাজী বিল্লাল বলেন, এই এলাকায় এবং এর আশপাশের কোথাও কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। বাগাদী ইউনিয়নের চরবাগাদী পাম্প হাউজ সংলগ্ন মাঠটি বর্তমানে ভরাটের কাজ চলছে। সেই মাঠটিতে শিশুদের বিনোদনের জন্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি। আমি কয়েক বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রিফাত সাহেবের সাথে এই মাঠটিতে শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দিলে তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান মহোদয়সহ সরজমিনে দেখার জন্যে যাওয়া হয়। কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলী মহোদয় কিছুদিন পর বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় আর এগোনো যায়নি। শিশুদের বিনোদনের জন্যে এই জায়গাটিই উত্তম জায়গা। এই জায়গাটি ৮নং বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদকে দেয়া হোক। আমি ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে একটি নান্দনিক বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করবো। উক্ত মাঠটি ৮নং বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদকে হস্তান্তর করার জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমি জোর দাবি জানাচ্ছি।
চাঁদপুর পাউবোর নির্বাহী কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের জরুরি প্রয়োজনে এ স্থানটুকু যে কোনো সময় কাজে লাগতে পারে। যেমন : পাম্পের মেরামত ও মেশিন রাখা। এখন যেমন কাজে লেগেছে-বালু রেখেছি।