প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মোলহেডকে দৃষ্টিনন্দনের কাজ শুরু করেছে রেলওয়ে
চাঁদপুরে অনেক দর্শনীয় জায়গার মধ্যে বড় স্টেশন মোলহেড অন্যতম। মোলহেডের সাথে পদ্মা-মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থল সব বয়সী মানুষকে আকৃষ্ট করে চলছে। তাই মোলহেডের স্থানকে আরো আধুনিকায়ন ও দৃষ্টিনন্দন করতে রেলওয়ে বিভাগ নানা উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করেছে।
মোলহেডের অধিকাংশ ভূমি রেলওয়ের। পূর্বদিকে রেল স্টেশন, দক্ষিণে ডাকাতিয়া নদী ও তার পাশে দেশের বৃহৎ মাছঘাট যেখানে রূপালি ইলিশের বিপণন কেন্দ্র। মোলহেডের পশ্চিমে রয়েছে বিশাল পদ্মা-মেঘনা নদী। অসংখ্য ভ্রমণপিপাসুকে আকৃষ্ট করছে এই তিন নদীর মিলনস্থল। বর্তমানে নদীর পানি কমে যাওয়ায় মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা বিভিন্ন চরও ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করছে। ইতোমধ্যে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে মোলহেডের নানা উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। ১৩শ’ ফুট অত্যাধুনিক ওয়াকওয়ে করার কাজ করা হচ্ছে।
রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পূর্ত)-এর অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত লিয়াকত আলী মজুমদার জানান, বড় স্টেশন মোলহেডকে আকর্ষণীয় করতে সেখানে গ্রিলের রেলিং, অত্যাধুনিক ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণ, পার্কিং টাইলস বসানোসহ প্রায় পঞ্চাশটি বসার বেঞ্চ, মাঝখানে একটি গোলচক্করের ঘর নির্মাণ করা হবে। যার উপরে ছাতার ন্যায় থাকবে। যাতে বৃষ্টি হলে দশনার্থীরা সেখানে বসতে পারেন।
তিনি আরো জানান, এখানে একটি আকর্ষণীয় পানির ফোয়ারা করা হবে। এছাড়া বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্যে নদীর সাথে ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখা হবে। চলতি বছরের জুন-জুলাই মাসের মধ্যে এসব কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি জানান। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে রূপ দিতে রেলওয়ের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিহাদ এন্টারপ্রাইজ এসব উন্নয়নমূলক কাজ করছে।
চাঁদপুরের সুস্বাদু রূপালি ইলিশকে দেখানোর জন্যে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন এখানে নির্মাণ করেছে নান্দনিক ‘ইলিশ সেলফি স্ট্যান্ড’। এখানে ঘুরতে আসা বেশির ভাগ ভ্রমণপিপাসুদের প্রতীকী রূপালি ইলিশ আকৃষ্ট করছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ তিন নদীর মিলনস্থলের বিশাল জলরাশি দেখতে মোলহেডে ভিড় করছে। বর্তমানে এই মোলহেড ও বিভিন্ন চরে ছবি তোলার জন্যে রয়েছে প্রায় বিশজনের একঝাঁক ফটোগ্রাফার। যারা সামান্য খরচে পর্যটকদের চাহিদানুযায়ী ছবি তুলে তাদের সরবরাহ করে। তবে এখানে নানা ধরনের হকার ও কিছু বখাটের তৎপরতা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন পর্যটকদের অনেকে।
বর্তমান শুষ্ক মওসুমে মেঘনা নদীর পশ্চিমে রয়েছে বেশ ক’টি জেগে ওঠা চর। ভ্রমণপিপাসুরা ট্রলারযোগে ওইসব চরে গমন করেন এবং মানসিক প্রশান্তি লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদাররা টর্চারসেল গঠন করে মুক্তিযোদ্ধা জোয়ান ও নারীদের তুলে এনে তাদের ওপর যে বর্বরতা চালিয়ে হত্যা করেছে, তাদের স্মরণে এবং নতুন প্রজন্মকে পাকিস্তানি দানবদের নির্মমতা জানান দিতে এই মোলহেডে তৈরি করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ ‘রক্তধারা’। যা পর্যটকদের আকর্ষণ করছে।
লক্ষ্মীপুর শহর থেকে এখানে ঘুরতে আসা সানজিদ আখন্দ জানালেন, তিনি একঝাঁক বন্ধু নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। সাথে রয়েছেন পরিবারের সদস্যরাও। ইলিশের সেলফি স্ট্যান্ড ও ‘রক্তধারা’র সামনে ছবি তুলেছেন সবাই।
চাঁদপুরে ইলিশ উৎসবের রূপকার হারুন আল রশীদ বলেন, ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ নামে আমাদের জেলা ব্র্যান্ডিং হয়েছে। যার কারণে ইলিশকে ঘিরেই আমাদের সব। বড় স্টেশন মোলহেডকে আরো আকর্ষণীয় ও সুন্দর করা দরকার। সেজন্যে রেলওয়ে যে উন্নয়ন কাজ শুরু করেছে তাদের যাবতীয় সেই কাজ শেষে এটিকে সংরক্ষিত রাখার স্বার্থে পাবলিক সেক্টরে বন্দোবস্ত দেয়ার দাবি জানাই। তাতে রেলওয়ের আয় যেমন হবে তেমনি পর্যটকদের সেবার মান বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।