প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:১৯
রাজরাজেশ্বরে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বাঁশগাড়ি গ্রামে অগ্নিকাণ্ডে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি ২০২৫) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাঁশগাড়ি চর খান বাজারে আকস্মিক এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে মুদি মালামাল, কসমেটিক্স, তৈরি পোশাক, গ্যাস সিলিন্ডার, ফ্রিজসহ পুরো দোকান দুটি পুড়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত দুটি দোকানের ব্যবসায়ীরা হলেন স্থানীয় নুর মোহাম্মদ বন্দুকশীর পুত্র মো. নজরুল বন্ধকশীর (৩৭) ও আব্দুর রহমান মোল্লার পুত্র মো. কামাল মোল্লা (৪০)। খবর পেয়ে রাতেই আশপাশের ব্যবসায়ী ও গ্রামবাসী ছুটে এসে পার্শ্ববর্তী খাল থেকে হাতে এবং পাম্প মেশিন দিয়ে পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে করে বাজারের ১৫ থেকে ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুন থেকে রক্ষা পায়।ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী নজরুল বন্দুকশী বলেন, বহু বছর ধরে আমি এই বাজারে ব্যবসা করছি। আমার দোকানে মুদি, কসমেটিক্স এবং সিলিন্ডার গ্যাসসহ বিভিন্ন মালামাল ছিলো। প্রতিদিনের ন্যায় বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় দোকান বন্ধ করে বাড়িতে যাই। রাত ১টার দিকে খবর পাই আমার দোকানে আগুন লেগেছে। ছুটে এসে দেখি দোকানে আগুনের লেলিহান শিখা জ্বলছে। চোখের সামনে আমার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেল। অগ্নিকাণ্ডে তার প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে বলে জানান তিনি।
ব্যবসায়ী নজরুলের স্ত্রী সাথী বেগম বলেন, আমার স্বামী ধার-দেনা এবং কিস্তি উঠিয়ে এই দোকানটি চালাতো। এই দোকান থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে আমাদের বড়ো একটি পরিবার চলতো। আজকে আমরা পথের ফকির হয়ে গেলাম। তিনি জেলা প্রশাসক, ইউএনও এবং ইউনিয়নের প্রশাসক মহোদয়ের কাছে সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কামাল মোল্লা বলেন, চোখের সামনেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অল্প অল্প করে সঞ্চয় করা অর্থ দিয়ে এই দোকানটি আমি গড়ে তুলেছি। এর সাথে অনেক টাকা কিস্তি উঠিয়ে দোকান বড়ো করেছি। দোকানের ফ্রিজ, বিদ্যুতের মিটার, মালামাল, আসবাবপত্র, সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। খেয়ে পরে বাঁচবার মতো আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সরকারি সাহায্য না পেলে আমাকে স্ত্রী- সন্তান নিয়ে পথে বসতে হবে।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি বাচ্চু বেপারী, বাজারের মালিক মো. মজিবুর রহমান খান জানান, বহু বছরের পুরানো এই বাজারে ১৫ থেকে ২০টি দোকান রয়েছে। এক রাতের অগ্নিকাণ্ডে বাজারের দুটি বড়ো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। বাজারের ব্যবসায়ী এবং গ্রামের নারী-পুরুষরা যদি তাৎক্ষণিক পানি ছিটিয়ে আগুন না নিভাতো, তাহলে বাজারের একটি দোকানও অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা পেতো না। বদু নামের স্থানীয় এক লোক বুদ্ধি খাটিয়ে পাম্প মেশিন দিয়ে পাশের খাল থেকে পানি উঠিয়ে আগুনে ছিটিয়েছিল বলে জানান তারা।
এলাকার মুরুব্বী হেদায়েত উল্লাহ বন্দুকশী ও শাহজালাল বন্দুকশী বলেন, বাজারের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো দোকানগুলোর মধ্যে এই দুটি দোকান ছিলো। এখানে মুদি, কসমেটিক, ডিজেল, গ্যাস সিলিন্ডারসহ গ্রামের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল মালামাল বিক্রি করা হতো। এক রাতের আগুনে তাদের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমরা মাননীয় জেলা প্রশাসক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক মহোদয়ের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করবো, যেন এই পরিবার দুটোকে সরকারিভাবে সহায়তা করা হয়। তারা যাতে সরকারি সহায়তা নিয়ে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এই দুটি দোকানের উপার্জিত অর্থের ওপর নির্ভর করে তাদের পরিবারগুলো খেয়ে পরে বেঁচে আছে। এদিকে গণমাধ্যমকর্মীর মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাখাওয়াত জামিল সৈকত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন। তাৎক্ষণিক তিনি ক্ষতিগ্রস্ত দুজন ব্যবসায়ীকে দশ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ এবং শীতবস্ত্র কম্বল প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর উপজেলা বিএনপি নেতা সোলেমান ভুট্টু মাঝি, ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী প্রধানীয়াসহ অন্যরা।