প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:৪৭
নতুন বছরে মুমিনের পরিকল্পনা
একটি সুন্দর পরিকল্পনাই পারে আপনার জীবনকে সফল করতে। জীবন থেকে একটি বছর প্রায় শেষ হয়ে নতুন বছর শুরু হচ্ছে। আগত বছরকে ঘিরে একজন মুমিনের পরিকল্পনা কেমন হবে, কোন বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে পালন করা উচিত কিংবা কোন কাজ গুলো বর্জন করা আবশ্যক ইত্যাদি পরিকল্পনা করে সাজানোই একজন সফলতাকামী মুমিনের কর্তব্য। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেন," তুমি যা কিছু পরিকল্পনা করবে,তার সাফল্য আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।"( সূরা আল-ইনশিরাহ,আয়াত:১১) রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "তোমরা আল্লাহর নাম স্মরণ করে এমন ভাবে পরিকল্পনা করবে, যেন তোমরা জানো যে তোমরা একদিন মরে যাবে এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুত নিবে। (আবু দাউদ,হাদিস:২৮৫৬)
১.কোরআন হাদিসে থেকে বুঝে অধ্যায়ন করা:
নিয়মিত কোরআন হাদিস অধ্যায়ন করা একজন মুসলমানের গুরুত্বপূর্ণ দিক। এতে আত্মিক উন্নতি , আল্লাহর সাথে সম্পর্ক শক্তিশালীকরণ এবং জীবনের সঠিক দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। নিয়মিত কোরআন হাদিসের অধ্যায়নের মাধ্যমে আল্লাহর আদেশ পালনে সক্ষম হয় এবং রবের নিকট হতে পরিপূর্ণ নৈকট্য লাভ করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,"যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে এবং তা বাস্তবায়ন করে, তার জন্য জান্নাতে একটি বিশেষ মর্যাদা থাকবে।"(সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৮০৮)
২.যথাসময়ে খুশু -খুজুর সাথে নামাজ আদায় করা:
যথাসময়ে খুশু-খুজুর সাথে নামাজ আদায় করা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথ। সময়মতো নামাজ পড়া আমাদের ঈমানের পূর্ণতা এবং মহান রবের আনুগত্যের প্রকাশ। রাসূল (সা.) বলেছেন,"নামাজ সময়মতো আদায় করা মুমিনের জন্য সবচেয়ে বড় আমল।"(সুনান আত তিরমিজী, হাদিস:৩৬৫)
৩. আত্মীয় স্বজনদের খোজ খবর রাখা: আত্মীয়তার সম্পর্ক ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এমন অনেকেই আছে বছরের পর বছর চলে গেলেও আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা সাক্ষাৎ বা খেঁাজখবর নেয় না। এমনটি না করা।যদি সম্ভব হয় সপ্তাহে একবার অথবা মাসে একবার আত্মীয়স্বজনের খবর নেওয়া। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, "তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। অভ্যস্ত মদ্যপায়ী, আত্মীয় বন্ধন ছিন্নকারী,জাদুতে বিশ্বাসী।"(সুনানে আহমদ, :১৯৫৮৭)
৪.অন্যায় অপরাধ থেকে বিরত থাকা:
একজন মুসলমানের জন্য নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য অন্যায় অপরাধ থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই মিথ্যা কথা বলা, অহংকার করা, গিবত করা ও পরনিন্দা করা হতে নিজেকে বিরত রেখে হতে পারে নতুন বছরের শুভ সূচনা। এছাড়া রাসূল (সা) বলেছেন ,“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য অন্যায় থেকে বিরত থাকে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।”(সহীহ বুখারি, হাদীস: ৬৫০১)
৫. সাওম পালন করা:
রমজানের রোজা পালন করা ছাড়াও প্রত্যেক সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখাও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ন। রাসূল (সা) সপ্তাহের এই দুই দিন রোজা রাখতেন।রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,"তোমরা সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখো, কারণ এ দুদিন আল্লাহ তাআলা তঁার বান্দাদের আমল উপস্থাপন করেন। আমি চাই, যে সময় আমার আমল উপস্থাপন হবে, সে সময় আমি রোজা অবস্থায় থাকি।"(সুনান তিরমিজি, হাদিস : ৭৪৪)
৬ . প্রত্যেক মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ দান করা: আমাদের মাসিক মোট উপার্জন থেকে সামথর্য অনুযায়ী কিছু টাকা প্রত্যেক মাসে দান করবো। হয়তো এই সামান্য টাকা কোনো অসহায় মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করবে। এবং দানকারীর চূড়ান্ত সফলতার পথ প্রশস্ত হবে। দানের ব্যাপারে রাসূল (সা.) বলেছেন,"যে ব্যক্তি তার সম্পদ থেকে তার পেট পূর্ণ করার আগে, তার দান করল, সে সফল।" (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৩৯)
৭.রবের সাহায্য ও সম্পর্ক : সুনির্দিষ্ট কল্যাণমূলক পরিকল্পনা তৈরি করে তা বাস্তবায়ন জন্য মহান রবের কাছে প্রার্থনা করতে হবে। পাশাপাশি নফল নামাজ, রোজা, দান-সদকা করা এবং তাহাজ্জুদের নামাজে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ তায়ালার বলেন—"তুমি যদি আল্লাহর সাথে সম্পর্ক রাখো, তবে আল্লাহ তোমাকে সাহায্য করবেন এবং তোমার পায়ে শক্তি দিবেন।" (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ৭)
আবদুল্লাহ আল কাফি, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ, কুষ্টিয়া।