শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

রহস্যজনক আগুন ফরিদগঞ্জের রূপসা দক্ষিণ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে

সেবা প্রদান বন্ধ

প্রবীর চক্রবর্তী ॥
রহস্যজনক আগুন ফরিদগঞ্জের রূপসা দক্ষিণ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে

নিভৃত পল্লীর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র মাতৃত্বকালীন সেবাদানে ইতিমধ্যেই পুরো উপজেলার গণ্ডি ছড়িয়ে জেলা পর্যায়ে পৌঁছছে। সিজারিয়ান প্রসবের পরিবর্তে এই সেবা কেন্দ্রটি স্বাভাবিক প্রসবে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে কয়েক মাস পূর্বে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের ফান্ডে দুজন মিডওয়াইফ যোগদানের পর থেকে সেবাদান দ্রুত বেড়েছে। আবার স্বাভাবিক প্রসবকে উৎসাহিত করতে কেন্দ্রটিতে কাজ করা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিজেদের ব্যক্তিগত তহবিল দিয়ে প্রসূতিকে গাছ উপহার দিয়ে আসছেন। এছাড়া সেবা কেন্দ্রের সকলে মিলে এর সৌন্দর্য বর্ধনেও কাজ করেছেন। কিন্তু রহস্যজনক আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হলো ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে নিরাপদ মাতৃত্বের সেবাদান ও স্বাভাবিক প্রসব প্রক্রিয়া। সেবাদান কেন্দ্রের দুই তলা ভবনের পুরো নিচতলা অংশটি আগুনের ধোঁয়ার কারণে কালো হয়ে গেছে।

অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনা ৩ মার্চ রোববার সকালে ঘটে। সংবাদ পেয়ে ফরিদগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে উপস্থিত হলেও ততক্ষণে আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী। এ ব্যাপারে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আয়া নাছরিন আক্তার।

জানা গেছে, রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ৩ মার্চ রোববার সকাল ৭টার দিকে আগুন লেগে যায়। আগুনে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিচতলায় থাকা একটি মোটরসাইকেল পুড়ে যায় এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। পুরো নিচতলা আগুনের ধোঁয়ায় কালো হয়ে গেছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবা প্রদান কার্যক্রম।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আয়া নাছরিন আক্তার জানান, সকালে ছাদে পায়চারী করার সময়ে নিচতলা থেকে আগুনের ধোঁয়া উঠতে দেখেন। তাৎক্ষণিক তিনিসহ দোতলায় থাকা স্টাফ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা নিচে নামতে গিয়ে দোতলায় ওঠার দরজা বন্ধ পান। এ সময় তিনি, সোনিয়া ও তানিয়া গাছ বেয়ে নিচে নামেন। তাৎক্ষণিক বাইরে থাকা পিয়ন জামাল তালুকদারকে ফোন দিলে তিনি দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিলে দোতলায় আটকে থাকা বাকিরা বেরিয়ে আসেন। আগুনে তার মোটরসাইকেলটি পুড়তে দেখেন। তিনি জানান, নিচতলায় অফিসের কাজ চলে। দোতলায় স্টাফরা বসবাস করেন।

নাছরিনের মা ফরিদা বেগম বলেন, আমরা সকাল ৬টা থেকে ছাদে পায়চারি করছিলাম। হঠাৎ করেই কালো ধোঁয়া উঠতে দেখে আমরা দ্রুত আমাদের কক্ষগুলো চেক করলাম। পরে নিচে নামতে গিয়ে দেখি, দোতলায় ওঠার দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমার মেয়েসহ আরো দুজন ছাদ থেকে গাছ বেয়ে নিচে নেমে যাই। কিন্তু আমরা আটকা পড়ি। পরে অবশ্য দরজা খুলে দিলে আমরা দ্রুত হাসপাতাল থেকে বাইরে চলে আসি।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিয়ন জামাল তালুকদার জানান, তিনি সকালে কাজ শেষে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একটু দূরে চায়ের দোকানে চা খেতে যান। আয়া নাছরিনের ফোন পেয়ে দ্রুত গিয়ে নিচতলায় আগুনের ধোঁয়া দেখতে পান। পরে দোতলায় উঠার দরজা খুলে দিলে অন্যরা বেরিয়ে আসেন।

সংবাদ পেয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডাঃ নাছির আহমেদ, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএস তছলিম আহমেদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌলি মন্ডল, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ফয়সাল হোসেন জানান, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিকে তারা সুন্দরভাবে সাজিয়ে ছিলেন। এই কেন্দ্রে প্রসব হওয়ার পর প্রসূতিকে তারা নিজেরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপহার দিতেন। কিন্তু আগুনে সেবা গ্রহণ বন্ধ হয়ে গেল।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডাঃ নাছির আহমেদ বলেন, পুরো উপজেলায় এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি স্বাভাবিক প্রসবের দিক থেকে সেরা। সেবাদানেও তারা অনেক এগিয়ে। কয়েক মাস পূর্বে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের ফান্ডে দুজন মিডওয়াইফ যোগদানের পর থেকে সেবাদান দ্রুত বেড়েছে। কিভাবে আগুন লাগলো তার সঠিক তদন্তের বিষয়টি প্রশাসন দেখবে বলে বিশ্বাস করি। সংবাদ পেয়ে আমরাও দেখতে এসেছি। আগুনে ক্ষতির বিষয় দেখতে আমি আমার সাথে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলীকে নিয়ে এসেছি। আমরা চেষ্টা করবো দ্রুত এখানে সেবাদান প্রক্রিয়া শুরু করতে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএস তছলিম আহমেদ বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সঠিক তদন্ত প্রয়োজন। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা থাকবে। ঘটনাটি কেন ঘটলো কীভাবে ঘটলো এর রহস্য উদ্ঘাটন প্রয়োজন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়