প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ডাকাতিয়ার উপর হাজীগঞ্জ বড়কুল ফেরিঘাট-বড়কুল ইউনিয়ন সেতু
৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর কাজ ৭ বছরেও শেষ হয়নি
হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার হাজীগঞ্জ বড়কুল ফেরিঘাট-বড়কুল ইউনিয়ন সেতুর কাজ শেষ হয়নি গত প্রায় ৭ বছরে। ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয় ২০১৭ সালের ১৪ মে। ২০১৮ সালের ২০ জুলাই সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একাধিকবার কাজের সময় বাড়িয়ে মূল সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করে। মূল সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। অ্যাপ্রোচ সড়কের জন্যে জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে জনগণের চলাচলের জন্যে খুলে দেয়া সম্ভব হয়নি। সেতুর দক্ষিণ পাড়ের অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পরেও উত্তর পাড়ের অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ না হওয়ার কারণে এলাকার হাজার হাজার জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্র জানায়, হাজীগঞ্জ বড়কুল ফেরিঘাট-বড়কুল সেতুটি ডাকাতিয়ার উপর নির্মাণ কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলডিইডি)। সেতু নির্মাণ কাজের মূল ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি ৪৯ লাখ ১৪ হাজার ৬৭ পয়সা। পরে ব্যয় কমিয়ে তা ১৭ কোটিতে আনা হয়। উপজেলা সদর ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্মাণকারী দীর্ঘ সেতুটি ৮১০ মিটার চেইনেজে ডাকাডিয়া নদীর উপর ২৬৬.৩০ (সংশোধিত ২৫০. ২০ মিটার) দীর্ঘ সেতু নির্মাণ প্রকল্প, যার প্যকেজ পিডি/ সিএলবিইউইউআরপি/ডব্লিউ ১৮৯.০০, দৈর্ঘ্য ২৫০.২০ মিটার (৮২০) ফুট ১১ ইঞ্চি। মূল সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরমা/ আরবিএল (জয়েন্ট ভেঞ্চার)। মূল সেতুর কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে।
হাজীগঞ্জ পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজের পূর্ব পাশের সড়ক ধরে টোরাগড় হয়ে বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নে ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মিত সেতুটি খুলে দেয়া হলে বড়কুল পূর্ব ইউনিয়ন, ৯নং গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়ন, ১০নং গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন হয়ে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলায় চলচলকারী হাজার হাজার স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচলের পথ অর্ধেকটা কমে যাবে। বর্তমানে সেতুর নিচ দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী, রোগী, স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে নৌকায় করে খেয়াঘাট ব্যবহার করতে হচ্ছে। সেতুটি খুলে দেয়া হলে খেয়াঘাটটি বন্ধ হয়ে যাবে।
উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্র আরো জানায়, সেতুটির কাজ করতে তিন বরাদ্দ আনতে হয়েছে। এর মধ্যে মূল সেতু ১৭ কোটি টাকা, ভায়াডাক্ট (মূল সেতুর সাথের অ্যাপ্রোচ সড়ক) ২১ কোটি টাকা ও অ্যাপ্রোচ সড়ক ৬ কোটি টাকা। সর্বমোট ৪৬ কোটি টাকার কাজ। মূল সেতুর সাথে দক্ষিণ পাড়ের অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হলে ও উত্তর পাড় তথা টোরাগড় গ্রাম পৌর এলাকা হওয়ার কারণে এখানকার জমির মালিকগণ অধিগ্রহণের টাকা না পাওয়া পর্যন্ত অ্যাপ্রোচ কাজে বাধা প্রদান করেন। বর্তমানে জমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ করা শেষে পুনরায় কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে সেতুর মোট কাজের ৮৫% সম্পন্ন হয়েছে। শুধুমাত্র টোরাগড় অংশের অ্যাপ্রোচ অংশের কাজটুকু সম্পন্ন হলে সেতুটি জনসাধারণের জন্যে খুলে দেয়ার কথা জানান এলজিইডি।
স্থানীয় টোরাগড় গ্রামের আবুল কাশেম পাটোয়ারী (৭৫) জানান, গত ৬/৭ বছর ধরে সেতুর কাজ চলছেই। শেষ আর হচ্ছে না। সেতুর কাজ শেষ হলে নদীর উভয় পাড়ের সবার উপকার হতো।
বড়কুল গ্রামের শীল বাড়ির মনা শীল, শিকদার বাড়ির মজিবুর রহমান জানান, সেতুটির কাজ শেষ না হওয়াতে আমরা কী যে বিপদে আছি বলে বুঝাতে পারবো না। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে আর রোগী নিয়ে রাতের বেলা খেয়াঘাটে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতুটির কাজ শেষ করে আমাদের চলচলের জন্যে খুলে দিলে আমরা হাজার হাজার স্থানীয় বাসিন্দা উপকৃত হতাম। এমন কি আমাদেরকে অতিরিক্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার বেশি পথ চলাচল করতে হবে না।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) রেজওয়ানুর রহমান চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, প্রায় তিন দফায় সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ করতে হচ্ছে। সেতুর উত্তর পাশের অংশের জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় এতোদিন অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ আটকে ছিলো। সর্বশেষ স্থানীয় সাংসদ মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উগ্যোগে জমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ করে আমরা অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। আশা করি আসছে ৩০ জুনের মধ্যে জনগণের জন্যে সেতুটি খুলে দেয়া যাবে।