প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
চাঁদপুরে নারীর সামর্থ্য উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের অবহিতকরণ কর্মশালা
শতভাগ হতদরিদ্র নারীদের চাকুরি প্রদানের জন্যে আমরা কাজ করছি
------------যুগ্ম সচিব আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান
চাঁদপুরে উৎপাদনশীল ও সম্ভাবনাময় কর্মের সুযোগ গ্রহণে নারীর সামর্থ্য উন্নয়ন (স্বপ্ন-২য় পর্যায়) প্রকল্পের অবহিতকরণ কর্মশালা ২৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব ও জাতীয় প্রকল্প পরিচালক (স্বপ্ন-২য় পর্যায়) আবু সেলিম মাহমুদণ্ডউল হাসান। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বশির আহমেদের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াসির আরাফাত।
বক্তব্য রাখেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাফায়েত আহমেদ সিদ্দিকী, রিজিওনাল কোঅর্ডিনেশন এনালিস্ট (স্বপ্ন-২য় পর্যায়) মোঃ আহমাদুল কবির আকন।
চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত, হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী, ইউএনও পূর্বিতা চাকমাসহ অনেকে আলোচনায় নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।
প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ফলাফলের উপর একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন স্বপ্ন ২য় পর্যায় প্রকল্পের চাঁদপুর জেলা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুম মিয়া। কর্মশালার মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন মোঃ আহমাদুল কবীর আকন, রিজিওনাল কোর্ডিনেশন এনালিস্ট স্বল্প-২য় পর্যায়, ইউএনডিপি বাংলাদেশ। অবহিতকরণ কর্মশালার মূল আলোচনার বিষয় ছিলো : প্রকল্পের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কার্যক্রম, কাঙ্ক্ষিত ফলাফল, বাস্তবায়ন কৌশল, বিআইডিএস কর্তৃক ১ম পর্যায়ের মূল্যায়ন ফলাফল, উপকারভোগী নারী নির্বাচনের অভিজ্ঞতা, সবল দিক, বাধা সমূহ, সমাধান কৌশল, স্থানীয় পর্যায়ের স্টেকহোল্ডার (উপজেলা স্বপ্ন সেল, ইউনিয়ন পরিষদ, সহযোগী এনজিও, ব্যাংক)-এর দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং উপকারভোগী নারী নির্বাচন প্রক্রিয়া।
প্রধান অতিথি যুগ্ম সচিব আবু সেলিম মাহমুদণ্ডউল-হাসান তার বক্তব্যে বলেন, স্বপ্ন প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প। এই প্রকল্পের উপকারভোগী শতভাগই হতদরিদ্র নারী। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা করেছিলেন ঘরে ঘরে চাকুরি প্রদান করবেন। শতভাগ হতদরিদ্র নারীদের চাকুরি প্রদানের জন্যে আমরা কাজ করছি। উপকারভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করতে হবে। এর কোনো প্রকার ব্যত্যয় হবে না।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, স্বপ্ন প্রকল্পের ১ম পর্যায় যেভাবে স্বচ্ছতা ও সফলতার সাথে বাস্তবায়িত হয়েছে, ২য় পর্যায় আরোও সফলতার সাথে বাস্তবায়িত হবে। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জিত হবে।
তিনি বলেন, নারীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। গ্রামাঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচন এবং উন্নয়ন কর্মসূচিতে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে ‘স্বপ্ন’ প্রকল্পটি কাজ করে চলেছে। এ ব্যাপারে প্রচার-প্রচারণাসহ কর্মশালায় উপস্থিত সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
কর্মশালায় চাঁদপুর জেলার ৩টি উপজেলাধীন (ফরিদগঞ্জ, মতলব উত্তর ও হাইমচর) উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানবৃন্দ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারবৃন্দ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানবৃন্দ (মহিলা), ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ, ইউনিয়ন পরিষদের সচিববৃন্দ, এনজিও প্রতিনিধি, সহযোগী সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা পর্যায়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধান, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক ‘উৎপাদনশীল ও সম্ভাবনাময় কর্মের সুযোগ গ্রহণে নারীর সামর্থ্য উন্নয়ন (স্বপ্ন- ২য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ১৪৮.৪০ কোটি (জিওবি ৭১.৬১ কোটি এবং প্রকল্প অনুদান ৭৬.৭৯ কোটি) টাকা। প্রকল্পটি বাংলাদেশের ১২টি অতিদরিদ্র ও দুর্যোগপ্রবণ জেলার ৩২টি উপজেলার ২৮৩টি ইউনিয়নে বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশের জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল এবং সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও ভিশন ২০৪১ এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০-এর আলোকে গ্রামীণ হতদরিদ্র-অসহায় নারীদের কর্মসংস্থান ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের একটি মডেল সৃষ্টি করার অভিপ্রায়ে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় চাঁদপুর জেলায় এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত হলো কর্মশালা।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন, মতলব উত্তর ৫টি ইউনিয়ন এবং হাইমচর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নসহ মোট ২৫টি ইউনিয়ন পরিষদ এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান ও টেকসই জীবিকা সৃষ্টির মাধ্যমে উপকারভোগীদের দারিদ্র বিমোচন।
মূল কার্যক্রম : হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত, অসহায়, বিধবা/স্বামী পরিত্যক্তা নারীদেরকে নিয়োজিত করে গ্রামীণ সড়ক ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ। দৈনিক ২৫০ (দুইশত পঞ্চাশ) টাকা হারে মজুরি প্রদান। তন্মধ্যে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ তহবিল সৃষ্টির লক্ষ্যে বাধ্যতামূলক সঞ্চয় বাবদ ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা মজুরি প্রকল্প হিসেবে জমা হবে।
কারিগরি/বৃত্তিমূলক দক্ষতা উন্নয়ন এবং আনুষ্ঠানিক খাতে (গার্মেন্টস ও চামড়াজাতশিল্প) কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এন্টারপ্রাইজ উন্নয়ন ও স্থানীয় কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করা। সকল উপকারভোগীকে ৬টি বিষয়ে (সাস্থ্য ও পুষ্টি, নারী-পুরুষ সম্পর্ক উন্নয়ন, নারী অধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবেলা, স্বশিক্ষণ সহজ হিসাব, নেতৃত্ব উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের করণীয়) জীবন দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান।
১২ মাসের চক্র সমাপ্তির পর বাধ্যতামূলক সঞ্চয় হিসেবে প্রাপ্ত এককালীন অর্থ বিনিয়েগের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে লাভজনক ক্ষুদ্র ব্যবসা চালুকরণে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান। জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল বিষয়ে ইউপির স্থায়ী কমিটির সক্ষমতা উন্নয়ন।