প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ সেতু
মই বেয়ে সেতুতে উঠছে যাত্রীরা
মই বেয়ে সেতুতে উঠলেন, অতঃপর স্বামীর মোটর সাইকেলে চড়ে সেতু দিয়ে চলে গেলেন স্বামীর বাড়ি। দৃশটি বেমানান হলেও ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ সেতুর বর্তমান চিত্র এটি। সেতু দিয়ে এখন সিএনজি অটোরিকশা, অটোবাইক যাত্রী পারপার করলেও সেতুর ফরিদগঞ্জ অংশের শেষ ভায়াডাক্টটির ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় যাত্রীদের মই বেয়ে পারাপার হতে হচ্ছে। এ যেনো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্পের সংজ্ঞা ‘শেষ হইয়াও হইলো না শেষ’-এর অবস্থায় দাঁড়িয়েছে।
২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সংসদ সদস্য বর্তমান সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি ও চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া যৌথভাবে ডাকাতিয়া নদীর উপর ২৭৪.২০ মিটারের এ সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
৩৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকার প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার নবারণ ট্রেডার্স লিঃ নদীর উপরে সেতুটির মূল কাজ সম্পন্ন করে। পরে ২০২০-২১ অর্থবছরে দ্বিতীয় ধাপের কাজের জন্যে ২৮ কোটি ৯৫ লাখ ৮২ হাজার ৮৫৪ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিজভী কনস্ট্রাকশন ও ইউনুছ আল মামুন (জেবি) যৌথভাবে কাজ শুরু করে। নির্মাণ কাজের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২১-এ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে মেয়াদ বৃদ্ধি করে তা জুন ২০২৩ পর্যন্ত করা হয়। পরে তা ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলেও অদ্যাবধি নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।
সেতুটির চাঁদপুর সদর উপজেলার অংশের ভায়াডাক্টের কাজ সম্পন্ন হলেও গত ৮ মাসে ফরিদগঞ্জ অংশের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। এলজিইডি তাদেরকে বারংবার নির্মাণ কাজ শেষের জন্যে তাগাদা দিয়ে সময় বেঁেধ দিলেও অদ্যাবধি ভায়াডাক্টের কাজই শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। এরপর সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজতো রয়েছেই।
সরজমিনে ২৬ ফেব্রুয়ারি সোমবার সেতুর নির্মাণ স্থানে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর চাঁদপুর সদর অংশের ভায়াডাক্টয়ের কাজ শেষে সংযোগ সড়ক সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু রেলিংয়ের কাজ হয়নি। অপরদিকে ফরিদগঞ্জ অংশে শেষ ভায়াডাক্টটির রড বাঁধাই হলেও ঢালাই না হওয়ায় সড়কের সাথে সংযোগ হয়নি। ফলে সেতুটি ব্যবহার করা যাত্রীদের মই বেয়ে সেতুতে উঠে গাড়িতে চড়তে হচ্ছে।
স্ত্রী সন্তান নিয়ে মই বেয়ে উঠে গাড়িতে চড়া আলাউদ্দিন, শহিদ হোসেন, ইব্রাহিম হোসেনসহ বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা জানান, ৭ বছরেও সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। আর কতদিন লাগবে তাদের সেতুটি যান চলাচল উপযোগী করতে?
শিমুল সর্দার, ইব্রাহিম সর্দারসহ বেশ ক’জন জানান, মই বেয়ে উঠতে গিয়ে ইতিমধ্যেই নারীসহ বেশ ক’জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এই অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন কবে যে বাস্তবে রূপ নিবে তা কেউই বলতে পারছে না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সেতুর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া নির্বাচনের পর চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখানে ঝামেলা হয়। ঠিকাদারের লোক ও অবৈধ সুবিধাভোগীদের কারণে আমাদের দুঃখ শেষ হচ্ছে না।
সেতুর দায়িত্বে থাকা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আইউব খান মুঠোফোনে জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং পরবর্তীতে চুরিজনিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় শেষের দিকে এসে কাজ থমকে দাঁড়িয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কিছু বিল ছাড় হলে তাদেরকে দিয়ে বাকি কাজ শেষ করানো সম্ভব হবে।