প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
গোপাল মন্দিরের বার্ষিক উৎসবের উদ্বোধনী পর্বে পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল
আমি সকল ধর্মের মানুষের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশের মধ্য দিয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ ব্যাপক ভক্তবৃন্দের উপস্থিতিতে পুরাণবাজার দাসপাড়া শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ গোপাল মন্দিরের বার্ষিক ২০তম তারকব্রহ্ম হরিনাম কীর্তনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল। তিনি অনুষ্ঠানের ব্যাপকতায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ধর্ম মানুষকে বিভাজন করতে পারেনি, মানুষ বিভাজন হয়েছে মনুষ্যত্বহীনতার কারণে। মনুষ্যত্বহীন মানুষগুলোই ধর্মের নামে সমাজকে করেছে হেয় প্রতিপন্ন। সমাজে সৃষ্টি করেছে দাঙ্গা ফ্যাসাদ। আমি এ ধরনের কার্যকলাপকে সব সময়ই পরিহার করেছি। ভালোবেসেছি সকল ধর্মের মানুষকে। সকল ধর্মের মানুষের প্রতিই আমি সমান শ্রদ্ধাশীল। স্ব স্ব ধর্মের প্রতি অনুগত থাকা এবং ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে চলা প্রতিটি মানুষেরই কর্তব্য। মাননীয় সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির নেতৃত্বে চাঁদপুরে আমরা সকল ধর্মের মানুষ একটি সুন্দর পরিবেশে বাস করছি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় আমাদের সকলকেই সচেষ্ট থাকতে হবে। আপনাদের যে কোনো প্রয়োজনে আমি পাশে থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি চাঁদপুর পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুর পৌরসভারও অনেক উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হয়েছে। তারপরও আমি আমার সাড়ে ৩ বছরের দায়িত্বকালীন সময় প্রায় ১০০ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। এতো স্বল্প সময়ে এত টাকার কাজ বিগত কোনো মেয়র বা চেয়ারম্যান করতে পারেনি। আমি নান্দনিক চাঁদপুর শহর গড়তে আপনাদের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। তবে তা করতে গিয়ে অনেকটা অসুবিধারও সম্মুখীন হচ্ছি প্রতিনিয়ত। তিনি বলেন, পৌরসভার রাস্তার দু’ধারে যেসকল বাড়ি ঘর বা ভবন নির্মিত হয়েছে তার কোনোটাই পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যান মেনে গড়ে উঠেনি। যে যেভাবে পেরেছে সেভাবেই গড়ে তুলেছে। এই প্রতিবন্ধকতার কারণে নান্দনিক চাঁদপুর গড়ে তোলার কাজ অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে। তারপরও আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই আমার দায়িত্বকালীন সময়ের মধ্যেই আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আমি কাজ করবো। চাঁদপুর পৌরসভা একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এর উন্নয়নের দায় দায়িত্ব আমাদের সকলের। আমি শুধু আপনাদের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করছি। তিনি পৌরসভার উন্নয়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এবং পুরাণবাজার দাসপাড়া শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ গোপাল মন্দিরের বার্ষিক ২০তম উৎসবের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
২২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে দাসপাড়া গোপাল মন্দিরে বার্ষিক উৎসবের উদ্বোধনী পর্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ। মন্দিরের অন্যতম সদস্য রামের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি পরেশ চন্দ্র মালাকার, যুগ্ম সম্পাদক গোপাল চন্দ্র সাহা, দপ্তর সম্পাদক লিটন সাহা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কার্তিক সরকার, সদস্য বলাই চন্দ্র সরকার, গোপাল মন্দিরের কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র দাস প্রমুখ। সভার শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মনোরঞ্জন সূত্রধর। মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দের মাঝে উপস্থিত ছিলেন বৈষ্ণব কর্মকার, আশিষ দাস, স্বপন সরকার, নারায়ণ চন্দ্র দাস, দ্বিবাস দাস, আশীষ মজুমদার, প্রশান্ত সরকার, তাপস দাস, পংকজ দাস প্রমুখ।
পরে নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে বাদ্য বাজনা বাজিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে পুরাণবাজাার ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীতে গঙ্গা আবাহনের মধ্য দিয়ে উৎসবের ঘট স্থাপন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। রাতে মন্দির প্রাঙ্গণে শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ করেন মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমতি কৃষ্ণ লীলা দাসী। পাঠান্তে নামযজ্ঞের শুভ অধিবাস কীর্তন ও মঙ্গলঘট স্থাপন করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি হতে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে ২৪ প্রহরব্যাপী হরিনাম সংকীর্তন। ২৬ ফেব্রুয়ারি সোমবার অনুষ্ঠিত হবে শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দের অষ্টকালীন লীলা কীর্তন। ২৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ভোরে নগর সংকীর্তন, জলকেলি ও দধিমঙ্গল অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটবে। এদিন দ্বিপ্রহরে মহাপ্রভুর ভোগরাগ অন্তে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। সমাপ্তি ঘটবে শুভ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে সকলের উপস্থিতি ও সহযোগিতা কামনা করেছেন কৃষ্ণ লীলা দাসী।