প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বিশৃঙ্খলা আর হট্টগোলের মধ্য দিয়ে কচুয়ায় শহিদ দিবস পালন
মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে কচুয়া উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কচুয়া থানা, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন, কচুয়া প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলা পরিষদের হলরুমে ভাষা শহিদদের অমর স্মৃতির উদ্দেশ্যে আলোচনা সভা, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও অনুষ্ঠানটি শুরু হয় দুপুর ১২ টা ২০ মিনিটে। এরই মধ্যে অনুষ্ঠানস্থলে সৃষ্টি হয় হট্টগোল। আশ্রাফপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আকিল আহমেদ বাপ্পি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও গোহট উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ কবির হোসেনের সাথে অশোভন আচরণ শুরু করলে অনুষ্ঠানে আগত অতিথি এবং সুশীল সমাজ ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বিব্রত হন। পরে পৌর মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ নাজমুল আলম স্বপনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এর কিছুক্ষণ পরে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এমপি অনুষ্ঠানস্থলে আসলে ফুল দিয়ে বরণ করে তাঁকে স্টেজে নিয়ে গেলে ঘটে আরেকটি আপত্তিকর ঘটনা । উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে মহান শহিদ দিবস ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসের ব্যানারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ড. সেলিম মাহমুদের নাম না থাকায় প্রতিবাদ জানান উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি সালাউদ্দীন ভূইয়া ও ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সরকার । তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হাসান বলেন, এটি রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম। রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রামে কারো ছবি কিংবা নাম থাকা জরুরি নয়। রাষ্ট্রীয় নিয়ম মেনেই ব্যানার করা হয়েছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সরকার জানান, এই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রামের ব্যানারে জাতির পিতার ছবি থাকবে না এটা মেনে নেওয়া যায় না, তার পাশাপাশি আজকের শহিদ দিবস ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য জননেতা ড. সেলিম মাহমুদ স্যারকে প্রধান অতিথি রাখা হয়েছে। অথচ ব্যানারে নেতার নাম লেখা হয়নি, এটা আমরা মেনে নিতে পারি না।
একই সময়ে সভাস্থলে সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সাংবাদিকদের বসার নির্ধারিত স্থান না রাখায় সভাস্থলে তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হাসানের দৃষ্টিগোচর করে ক্ষোভ প্রকাশ করে সভাস্থল ত্যাগ করেন কচুয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি আলমগীর তালুকদারসহ অন্যরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে প্রজেক্টরের মাধ্যমে স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. সেলিম মাহমুদের জীবনী ও সংসদে প্রদত্ত ভাষণ পরিবেশন করেন। এ সময় উপস্থিত দর্শনার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কোনো ভাষা শহিদের ওপর প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন না করে ব্যক্তি বিশেষকে খুশি করতে তোষামোদমূলক ভিডিও প্রদর্শন করা হয়েছে।
ভাষা দিবসে কোনো ব্যক্তি বিশেষের প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হাসান বলেন, যিনি আলোচনা করবেন তিনি হচ্ছেন এই আসনের সংসদ সদস্য এবং প্রধান অতিথি। এখানে অযৌক্তিক কোনো কিছুই হয়নি। সবকিছুই লজিক্যাল হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৮জুন প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যায়ে কচুয়া উপজেলা পরিষদের নতুন প্রশাসনিক ভবন ও ডিজিটাল হলরুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোতাসেম বিল্লাহ ব্যানারে বঙ্গবুন্ধ ও শেখ হাসিনার ছবি না রাখায় এবং তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ছবি ও নাম না থাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কামরুন্নাহার ভূইয়া ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাচ্ছেল হোসেন খান প্রতিবাদ জানান। তাদের প্রতিবাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে উপস্থিত লোকজন ব্যাপক হট্টগোল করেন ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি অনুষ্ঠান স্থগিত রেখে নতুন ব্যানারে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে ব্যানার তৈরি করতে নির্দেশ দেন। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপস্থিত সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে সভা স্থগিত রেখে নতুন ব্যানার তৈরি করে পুনরায় অনুষ্ঠান শুরু করেন। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে সমালোচনায় পড়েন ইউএনও মোতাসেম বিল্লাহ। এ ঘটনাটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরেই টনক নড়ে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডের নেতৃবৃন্দের মাঝে। তার এক সপ্তাহের মধ্যেই ইউএনওকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।