প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ফরিদগঞ্জ লাইফ জেনারেল হাসপাতাল
টনসিল অপারেশন আর হলো না মুক্তার ॥ অ্যানেস্থেসিয়ায় হার্ট ব্লক হয়ে করুণ মৃত্যু
গলা ব্যথা নিয়ে দেড় বছরের শিশু সন্তানের জননী প্রবাসীর স্ত্রী কুলসুমা আক্তার মুক্তা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে তার অপারেশন করার জন্যে অপারেশন থিয়েটারেও নিয়ে যায়। কিন্তু কুলসুমা আক্তারের আর জ্ঞান ফিরেনি। তড়িঘড়ি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করলেও সেখানকার কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার শিকার ওই নারীর বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম রূপসা এলাকায় এবং হাসপাতালটি ফরিদগঞ্জ লাইফ জেনারেল হাসপাতাল। ঘটনাটি ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাতে ঘটে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অ্যানেস্থিসিয়ার কারণে হার্ট ব্লক হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
জানা গেছে, ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেলে গলা ব্যথা নিয়ে উপজেলা সদরের লাইফ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন রূপসা উত্তর ইউনিয়নের পশ্চিম রূপসা গ্রামের মেম্বার বাড়ির প্রবাসী আল-আমিনের স্ত্রী কুলসুমা আক্তার মুক্তা (২২)। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসক মুক্তাকে অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। নিয়ম অনুযায়ী রাত আনুমানিক ৮টার দিকে মুক্তাকে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়।
১ঘন্টা পর মুক্তার শাশুড়ি আলেয়া বেগমকে জানানো হয়, তার পুত্রবুধূ অসুস্থ, তাকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য চিকিৎসক রেফার করেছেন। তিনি উপায়ন্তর না পেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়া অ্যাম্বুলেন্সে করেই চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে নেয়ার পর কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃতের শাশুড়ি আলেয়া বেগম জানান, আমার ছেলের স্ত্রীর গলায় টনসিল ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি ওই এলাকার দালাল কামালের মাধ্যমে। তারা রাত আটটায় অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পর ডাক্তার বলেছেন ১৫-২০ মিনিট সময় লাগবে। ১ ঘন্টা পর ৯টার দিকে আমাকে ডেকে বলেছেন আপনার ছেলের স্ত্রীর জ্ঞান ফিরছে না। তাকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। পরে তড়িঘড়ি করে আমার নাতিকে দিয়েই চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা ইসিজি করার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন জানান, সুস্থ সবল মানুষ লাইফ জেনারেল হাসপাতালে টনসিল অপারেশন করতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরেছেন।
রূপসা উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম সুমন জানান, মুক্তা আক্তারের মৃত্যুর খবর শুনে আমার কাছে ক’জন এসেছিল। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে বলেছে সে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে। পরে এলাকার ক’জন লাশটি বাড়িতে নিয়ে এসেছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে অ্যানেস্থিসিয়া দেয়া ডাঃ শাহ আলম রিপনের সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
লাইফ জেনারেল হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাঃ পরেশ চন্দ্র পাল বলেন, হাসপাতালে রোগীকে অজ্ঞান করার জন্য ডাঃ শাহ আলম রিপনকে নিয়ে আসা হয়। অজ্ঞান করার তিনটি ইনজেকশনের মধ্যে দুটি করা হয়েছে। এই ইনজেকশন তার শরীরে সাপোর্ট করে নাই, তাই তার হার্ট ব্লক হয়ে গেছে। পরে তাকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে হাসপাতালের এমডি ওই পরিবারের সাথে কথা বলেছেন।