প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সম্ভাবনার নতুন দুয়ার
চরাঞ্চল হতে পারে নতুন শস্যভাণ্ডার
দেশের প্রায় সব চরাঞ্চলেই সবজি ও ফসলের উৎপাদন বেশ ভালো। তেমনি চাঁদপুর মেঘনা নদী অববাহিকায় জেগে ওঠা চর কৃষি অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এর ফলে চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষের জীবনমান ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। চরে অভাবী মানুষ কমছে। চাষাবাদ করে চরের বাসিন্দারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। চরবাসীর এই উন্নয়নে জেলা প্রশাসকের আগ্রহের কারণে অনাবাদি জমিকেও চাষাবাদে আনতে কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মসূচি বিশেষ ভূমিকা রাখছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এক সময়ের চর নিয়ে দখলবাজদের ক্ষমতার লড়াইয়ের অন্ধকার পথ পাড়ি দিয়ে চরাঞ্চলে এখন কেবলই আশার আলো। বিশেষ করে পান-সুপারির জন্যে সুপরিচিত হাইমচর উপজেলার চরাঞ্চলের উৎপাদিত সবজি কেবল চাঁদপুরই নয়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে।
চরাঞ্চলের সেই জমিগুলোকে আরো ব্যাপকভাবে কাজে লাগানোর জন্যে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে কৃষক সমাবেশ করছেন জেলা প্রশাসক। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর জেলায় চরাঞ্চলের অনাবাদি জমিকে আবাদের আওতায় আনার লক্ষ্যে সেই কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে অনুরূপ সমাবেশ করা হয় চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর মেঘনা-পদ্মার চরে। উক্ত সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক অপর্ণা বৈদ্য, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বশির আহমেদ, এনএসআই উপ-পরিচালক দেওয়ান মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন, হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নূর হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূর্বিতা চাকমাসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুর জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী।
জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বলেন, নদী অববাহিকায় জেগে ওঠা চর কৃষি অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এর ফলে চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষের জীবনমান ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। চরে ফসল উৎপাদনে যেসব ঝুঁকি রয়েছে, তা মোকাবিলা করার জন্যে শস্যের বহুমুখীকরণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই চর এলাকায় যে সীমিত সম্পদ রয়েছে তার সুষ্ঠু ব্যবহার জরুরি। এ সময় কৃষকদের মাঝে সেচ পাম্প ও কৃষি বীজ বিতরণ করা হয়।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনা জাগিয়েছে চরাঞ্চলের কৃষি। সম্ভাবনা কাজে লাগাতে করণীয় সম্পাদিত দেশের একেকটি চর এলাকা যেন কৃষি-অর্থনীতির অবারিত সম্ভাবনার ক্ষেত্র। পরিকল্পনা মাফিক অগ্রসর হলে অথৈর্নতিক সমৃদ্ধির নতুন ক্ষেত্র হিসেবে বিরাট ভূমিকা রাখবে চরাঞ্চল। চরাঞ্চলের জমি এবং কৃষক সমাজ অনেক ক্ষেত্রেই অবহেলার শিকার। আধুনিক চাষাবাদের সুবিধা না থাকায় চরাঞ্চলে কৃষি উৎপাদন আশানুরূপ নয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর তাই চরের কৃষিজমি এবং কৃষকের প্রতি আরও নজর দেয়া এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চরাঞ্চলে ছাগল, মহিষ, ভেড়া ও উন্নত জাতের গরু পালনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এছাড়া এনজিওর মাধ্যমে কুটির শিল্পভিত্তিক উৎপাদনশীল কাজের ব্যবস্থা করা, একটি চর একটি কো-অপারেটিভ সোসাইটি গঠন করা, দেশের চরাঞ্চলে কৃষকদের ভূমির মালিকানা লিজভিত্তিক করা, চরাঞ্চলের কৃষকদের জন্যে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দেয়া, চরাঞ্চলের গ্রামে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি করা যেতে পারে। কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে চরাঞ্চলে কৃষি প্রদর্শনী প্লট করা যেতে পারে, যাতে কৃষকরা জনবান্ধব ফসল চাষাবাদ করতে আগ্রহী হয়। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের চরের কৃষকদের সঙ্গে সভা-সমাবেশ বাড়ানো দরকার। চরাঞ্চলে আরেকটি সম্ভাবনার জায়গা হলো গবাদি পশুপালন। কিন্তু দেশের সব চরে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা এবং উৎপাদিত পণ্যের বিপণন প্রক্রিয়ায় এখনো নানাবিধ সমস্যা বিদ্যমান। ফলে চরে যে বিস্তীর্ণ আবাদি জমি রয়েছে সেখানে সেই মাত্রায় অধিক ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণ চরাঞ্চলে নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তির অভাব, উন্নতমানের বীজের সঙ্কট, উন্নত জাতের ফসল চাষের প্রচলন না থাকা, সেচ সঙ্কট এবং উৎপাদিত পণ্যের সঠিক বিপণন ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা এবং কৃষকদের দ্রুত ঋণ সহায়তা পাওয়ার ব্যবস্থা না থাকা।