শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

শাহরাস্তিতে গৃহবধূ রুবি হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার ॥
শাহরাস্তিতে গৃহবধূ রুবি হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

শাহরাস্তি উপজেলার মেহের উত্তর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে শ্রীপুরা বাড়িতে গৃহবধূ রুবি হত্যা মামলার পুঃনতদন্তের দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেন নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহত রুবির বড় বোন তানিয়া আক্তার।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্তের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রোটাঃ মাহবুবুর রহমান সুমনের পরিচালনায় সাংবাদিক সম্মেলনে নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রায়শ্রী দক্ষিণ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান হাজি মোঃ আবু হানিফ, নিহত রুবির মা রানু আক্তার, মামা সৈয়দ আহমেদ মজুমদার, চাচা আজগর হোসেন মিয়াজী ও আত্মীয় মোঃ খলিলুর রহমান।

লিখিত বক্তব্যে তানিয়া আক্তার বলেন, আমি আজকের সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের মাধ্যমে আমার ছোট বোন রুবি আক্তারের রহস্যজনক মৃত্যুর পুনঃতদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। আমার বাবা একজন দিনমজুর। আমার ছোট বোন রুবি আক্তারের সাথে ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের দেলোয়ারের ছেলে আল শাহরিয়ার রোকনের প্রেমের সম্পর্কে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে হয় এবং পরবর্তীতে আমার বাবার বাড়িতে ফিরে আসে। এ বিয়েতে আমার বোনের স্বামীর পরিবারের কারো সম্মতি ছিলো না বিধায় তারা এ বিয়ে মেনে না নিতে বিভিন্ন ফন্দি-ফিকির শুরু করে। পরবর্তীতে এলাকার গণ্যমান্য বক্তিদের সমঝোতায় এবং উভয় পরিবারের সম্মতিতে আমার বোন রুবি আক্তার তার স্বামীর বাড়িতে ঘর-সংসার শুরু করে।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, আমার বোন তার শ্বশুর বাড়িতে যাবার কিছুদিন পর তার শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাসুর এবং তার স্বামী আল শাহরিয়ার রোকন যৌতুকের দাবিতে আমার বোনের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। বিষয়টি আমার বোন আমাদের পরিবারকে জানালে এলাকার গণ্যমান্য সালিসদের নিয়ে কয়েক দফা সালিসি বিচার হয়। এ সময় আমার বোন ৩ মাসের অন্তসত্ত্বা ছিলো। এতো অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্যেও আমার বোন আমাদের পরিবারের অসহায়ত্বের কথা চিন্তা করে তার স্বামীর সংসারে পড়ে ছিলো। এরই মধ্যে গত ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর আমার বোনের শ্বশুরের পুরান বাড়ির আলী হোসেনের স্ত্রী আমার জেঠাতো বোন মিনু তার বোন স্বপ্না আক্তারকে ফোনে জানান, আমার বোন রুবি আক্তার মারা গেছে। খবর পেয়ে আমরা থানায় যাই। থানায় গিয়ে জানতে পারি, পুলিশ ঘটনাস্থলে আছে। তখন আমরাও ঘটনাস্থলে যাই। আমরা আমার বোনের লাশ দেখতে চাইলে ঘটনাস্থলে থাকা এসআই আনোয়ার হোসেন আমার বোনের লাশ দেখতে দেননি। এ সময় আমার বোনের শ্বশুর বাড়ির লোকজন বলাবলি করছিল, আমার বোনকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পরে পুলিশ লাশ থানায় নিয়ে আসে। আমরাও সাথে সাথে থানায় আসি। থানায় আসার পর এসআই আনোয়ার শাহরাস্তি থানার একটি কক্ষে আমাদের পরিবারের সবাইকে তালাবদ্ধ করে রাখেন। এ সময় আমাদের সাথে আসা আমাদের আত্মীয় রাজু ভাইসহ এলাকার অন্যদের থানা থেকে বের করে দেন। আমার বোনের মৃত্যুর খবর শুনে আমার চাচা ঢাকা থেকে রাত ১২টার দিকে শাহরাস্তি থানায় আসেন। এরপর এসআই আনোয়ার হোসেন লাশ পোস্টমর্টেম করবে বলে আমার চাচার কাছ থেকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। পোস্টমর্টেমের পর আমরা লাশ দাফন করি। দাফনের পরদিন আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জোবায়েদ কবির বাহাদুরকে নিয়ে আমরা থানায় মামলা করতে যাই। শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জকে আমরা মামলা করার কথা বললে তিনি এসআই আনোয়ারকে ডেকে আনেন। ওসি মামলার কথা বললে এসআই আনোয়ার বলেন, মামলা তো হয়ে গেছে। তখন আমরা বলি আমরা তো এখন পর্যন্ত মামলা করি নাই। তখন এসআই আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেন এবং তার সাথে আমাদের তর্কাতর্কি হয়। এরপর এসআই আনোয়ার জানান, আমার বোনের মৃত্যুর বিষয়ে অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তখন আমরা এসআইকে কাগজ দেখাতে বললে তিনি আমাদের একটি অপমৃত্যুর মামলার কাগজ দেন। আমরা এ বিষয়ে হত্যা মামলা করার কথা বললে ওসি থানায় মামলা হবে না বলে জানান।

নিহতের বোন তানিয়া আক্তার আরো উল্লেখ করেন, আমরা শাহরাস্তি থানার সহযোগিতা না পেয়ে নিরূপায় হয়ে আমাদের আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতায় চাঁদপুর জেলা জজকোর্টে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০, সংশোধিত ২০০৩-এর ১১(ক)/৩০ ধারায় আমার বোনের স্বামী আল শাহরিয়ার রোকন (২৩), তার বাবা দেলোয়ার হোসেন(৫৫), মা অজুফা বেগম (৫০), ভাসুর মোহন (২৫)-এর নাম উল্লেখ করে মামলা করি। মামলা নম্বর-০৯/১৭০। মামলা করার পর পুলিশ ৩ জন আসামিকে আটক করে কোর্টে চালান দেয়। ২ মাসের মধ্যে আসামিরা জামিন পেয়ে যায়। জামিনে আসার পর আসামিরা আমাকে এবং আমার স্বামী ও আমার পরিবারের সদস্য এবং মামলার সাক্ষীদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকে। এমনকি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেনও আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি ও আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। আমাদের মামলার তদন্ত করার জন্যে শাহরাস্তি থানার ওসিকে বহুবার অনুরোধ করার পরেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে সেই এসআই আনোয়ারকে তিনি নিয়োগ দিয়েছেন। পূর্বের অপমৃত্যু মামলা এবং আমাদের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেন হওয়ায় আমরা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও তৎপ্রেক্ষিতে ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবো বলে আশঙ্কা করছি। এমতাবস্থায় আমার বোনের হত্যা রহস্য উন্মোচনের জন্যে লাশ উত্তোলনপূর্বক পুনঃ ময়নাতদন্ত এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদলিপূর্বক পিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্যে বিচার বিভাগ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে সম্মানিত সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।

তানিয়া আরো উল্লেখ করেন, আমরা গরিব ও অসহায় হিসেবে আমার বোনের হত্যা রহস্য উন্মোচনসহ ন্যায়বিচার সাপেক্ষে আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্যে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও চাঁদপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম, বীর উত্তম মহোদয়ের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত, আরটিভির স্টাফ রিপোর্টার ও দৈনিক চাঁদপুর দর্পণের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শরীফ চৌধুরী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রহিম বাদশা, দৈনিক যুগান্তরের চাঁদপুর প্রতিনিধি মির্জা জাকির, চ্যানেল-২৪-এর চাঁদপুর প্রতিনিধি আল ইমরান শোভন, ডিবিসি নিউজের চাঁদপুর প্রতিনিধি মোঃ নজরুল ইসলাম আতিক, একাত্তর টেলিভিশনের চাঁদপুর প্রতিনিধি আল-আমিন ভূঁইয়া, এটিএন নিউজের চাঁদপুর প্রতিনিধি মোঃ বিল্লাল ঢালী, দৈনিক ইলশেপাড়ের বার্তা সম্পাদক এসএম সোহেল প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়