প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
দ্বাদশ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার আন্তঃউপজেলা (অগ্রযাত্রা-১) পর্ব সম্পন্ন
আয়োজকরা তাদের ধৈর্য ও সাহসিকতায় জ্ঞান নির্ভর সমাজ নির্মাণ করছেন
-----------ডাঃ একেএম মাহাবুবুর রহমান
আজকের খুদে বিতার্কিকরা কালক্রমে দেশসেরা বিতার্কিক হবে : অ্যাডঃ সাইয়েদুল ইসলাম বাবু
সোহাঈদ খান জিয়া ॥ ‘বিতর্কে আজ নতুন জোয়ার যুক্তিতে যুগ খুললো দুয়ার’ এই স্লোগানে ব্যাপক আয়োজন ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বাদশ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০২০ (বাস্তবায়ন ২০২৩-২০২৪)-এর আন্তঃউপজেলা (অগ্রযাত্রা-১) পর্ব। গতকাল ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তন, উদয়ন শিশু বিদ্যালয় ও চাঁদপুর রোটারী ভবনে চাঁদপুর জেলার আটটি উপজেলার প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের প্রান্তিক পর্বে উত্তীর্ণ ৬৬টি বিতর্ক দলের অংশগ্রহণে এ পর্বটি সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সম্পন্ন হয়। প্রতিটি বিতর্ক সভা প্রাণবন্ত হয়ে উঠে বিতার্কিকদের যুক্তি-তর্ক ও তথ্যবহুল উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে। বিচারকসহ উপস্থিত সুধীজন বিতার্কিকদের প্রাণবন্ত উপস্থাপনা উপভোগ করেন গভীর আগ্রহ নিয়ে। যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে পক্ষ-বিপক্ষ দল সকলেই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ ও চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন (সিকেডিএফ)-এর আয়োজনে এবং পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিঃ-এর সৌজন্যে আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতার সকালের পর্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রোটাঃ ডাঃ একেএম মাহাবুবুর রহমান।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, মঞ্চে কথা বলার সাহস বা শক্তি সবার থাকে না। বিতর্কে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীরা সে শক্তি সঞ্চার করে মঞ্চে এসে কথা বলছে বা বলতে পারছে। সে জন্যে চাঁদপুর কণ্ঠ ও চাঁদপুর কন্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানাই। তাঁরা চাঁদপুরে তৈরি করছেন এরূপ অনেক বিতার্কিক। আমি বিস্মিত হই যে, আয়োজকরা তাদের ধের্য ও সাহসিকতার দ্বারা জ্ঞাননির্ভর সমাজ নির্মাণ করছেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা এ বিতর্ক প্রতিযোগিতাকে সবসময় সহযোগিতা করে যাবো। বাংলাদেশের কম সংখ্যক জেলাতে এরূপ বিতর্ক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। রাজধানীভিত্তিক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিতর্ক কার্যক্রম চললেও বাংলাদেশের কোথাও নিতান্তই বিতর্ক চর্চার প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়নি বা পরিচালিত হয়নি। সেদিক থেকে চাঁদপুর অনেকটা এগিয়ে। আমি বিশ্বাস করি, এ বিতর্ক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ জেলার ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা অনেক বিকশিত হবে। আমি যখন ঢাকা কলেজে পড়ালেখা করি, তখন আমাদের ক্লাস নিতেন প্রফেসর আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ ও আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস। ক্লাসে তাঁদের কথা শোনার জন্য পেছনে দাঁড়িয়ে জড়ো হতো অন্য ক্লাসের অনেক ছাত্র-ছাত্রী। তাঁদের কথা শুনে এবং মেনে এদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনেক মেধাবী। তেমনি এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা কাজী শাহাদাতকে বলবো, তিনি চাঁদপুরের প্রফেসর আবদুল্লাহ আবু সাঈদ। তিনি চাঁদপুরে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অনেক মেধাবী সাংবাদিক ও বিতার্কিককে। সেজন্যে কাজী শাহাদাতকে ধন্যবাদ জানাই।
চাঁদপুর কণ্ঠের বার্তা সম্পাদক, সিকেডিএফ সহ-সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহর সভাপ্রধানে এবং চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির উপাধ্যক্ষ রাসেল হাসানের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি প্রথম পর্বে অংশ নেয়া বিজয়ী ও বিজিত বিতার্কিকদের মাঝে সফলতার প্রশংসাপত্র এবং পুরস্কার সামগ্রী বিতরণ করেন। মুখ্য আলোচনা করেন চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন ও চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাজী শাহাদাত।
বৈকালিক পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি রোটাঃ অ্যাডঃ সাইয়েদুল ইসলাম বাবু। তিনি বলেন, আমরা আইনজীবীরা প্রফেশন অনুযায়ী প্রতিদিন যুক্তিতর্কে ব্যস্ত থাকি। তবে তাতে আমাদের একটা স্বার্থ থাকে। আর আজকের এ বিতর্কে কোনো স্বার্থ নেই। এ বিতর্ক হচ্ছে যুক্তি-তর্কে নিজেকে তৈরি করা। ২০০৯ সাল থেকে চাঁদপুরে বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কাজী শাহাদাত অনেক বিতার্কিক তৈরি করেছেন। আমাদের চাঁদপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মাননীয় সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি দেশসেরা বিতার্কিক ছিলেন। আজকের এ খুদে বিতারর্কিকরা কালক্রমে দেশসেরা ভালো বিতার্কিক হবে বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও বিতর্ক একাডেমির মাধ্যমে।
চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির অধ্যক্ষ ও দ্বাদশ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্কের আহ্বায়ক ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়ার সভাপতিত্বে এই পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি রোটারিয়ান কাজী শাহাদাত।
সারাদিনের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিচারকার্য সম্পন্ন করেন চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির অধ্যক্ষ ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, উপাধ্যক্ষ রাসেল হাসান, শাহরাস্তির সূচিপাড়া ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক মোঃ আবুল কালাম, বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোঃ জাকির হোসেন, শাহরাস্তি সিকেডিএফ-এর কর্মকর্তা কাজী রাজিয়া বেগম, বলাখাল মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক কাজী নাছির, সিকেডিএফ যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, সদর উপজেলা সভাপতি মোঃ মাসুদুর রহমান, সিকেডিএফের উপদেষ্টা বিশিষ্ট আবৃত্তিকার সামীম আহমেদ খান, নারী নেত্রী মুক্তা পীযূষ, সিকেডিএফের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোটাঃ উজ্জ্বল হোসাইন, সিকেডিএফ সদর উপজেলার সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ ও বিতর্ক একাডেমির প্রশিক্ষক মোঃ শওকত হোসেন। মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন সিকেডিএফ চাঁদপুর সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবু সালেহ, সদর উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আজিজুল হাকিম নাহিন, ফরিদগঞ্জের সিকেডিএফ কর্মকর্তা শামীম হাসান, যুব সংগঠক রোটার্যাক্টর জয় ঘোষ, মতলব উত্তর উপজেলার সিকেডিএফ কর্মকর্তা রোবেল হোসাইন, শাহরাস্তি সিকেডিএফ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন সিরাজী ও টিআইবির ইয়েস সদস্য শৈলী দাস।
গতকাল দিনব্যাপী ৩৩টি বিতর্ক সভায় ৬৬টি দলের মধ্য থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে বিজয়ী দলগুলো হচ্ছে : ১৫৫ নং নারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২নং বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পুরাণবাজার), শাহরাস্তি বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুল, স্ট্যান্ডার্ড ট্যালেন্ট একাডেমি (মতলব দক্ষিণ), ড্যাফোডিল স্কুল (বাবুরহাট), বাবুরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাজীগঞ্জ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইকরা মডেল একাডেমি (ফরিদগঞ্জ)।
মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে বিজয়ী দলগুলো হচ্ছে : সুহিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়, আল-আমিন একাডেমি, শাহরাস্তি ন্যাশনাল ভিক্টোরী স্কুল, লুধুয়া স্কুল এন্ড কলেজ, শাহরাস্তি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, খাজুরিয়া লক্ষ্মীপুর পীর সোবহানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণপুর পপুলার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, খিলাবাজার স্কুল এন্ড কলেজ, রহিমানগর বিএবি উচ্চ বিদ্যালয়, মেহের উচ্চ বিদ্যালয় (শাহরাস্তি), হাজী চাঁদ মিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (কচুয়া), বলাখাল চন্দ্রবান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (হাজীগঞ্জ), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (বাবুরহাট), হামানকর্দ্দি পল্লীমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়, রাজারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইন্ট্যারন্যাশনাল স্কুল (চাঁদপুর শাখা) ও বাবুরহাট হাই স্কুল।
কলেজ পর্যায়ে বিজয়ী দলগুলো হচ্ছে : ধড্ডা মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ, সূচীপাড়া ডিগ্রি কলেজ, শোল্লা কলেজ, মেহের ডিগ্রি কলেজ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজ।
উল্লেখ্য, বিজয়ী দলগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত তিনটি দল হচ্ছে : মেহের ডিগ্রি কলেজ, ১৫৫ নং নারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বলাখাল চন্দ্রবান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।