প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
সংবাদপত্র ও সাংবাদিক বাড়লেও বাড়েনি গণমাধ্যমের মান : সাইফুল আলম
চাঁদপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক শপথের তৃতীয় বর্ষে পর্দাপণ উপলক্ষে ‘সওগাত সম্পাদক নাসির উদ্দিন সাংবাদিক সম্মাননা’ প্রদান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ২৬ আগস্ট বিকেলে চাঁদপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেছেন, সাংবাদিকতা মানেই বৈচিত্র্যময় কাজ। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই একজন সাংবাদিককে নানা বিষয়ে ভাবতে হয়, যার কোনো পূর্ব নির্ধারিত সিলেবাস থাকে না। সেই ভাবনায় সমসমায়িক বিষয় ছাড়াও আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং বর্তমান ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থাকে। দেশের প্রতি, জাতির প্রতি সাংবাদিকদের দায় অন্য অনেকের চেয়ে বেশি। আমরা যদি সঠিক পথে চলতি পারি, তাহলে দেশে অনাচার বেশি দিন থাকবে না।
জনাব জাফর ওয়াজেদ তাঁর বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। এরপর তিনি গুণী সাংবাদিক ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার স্মৃতিচারণ করে বলেন, সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র প্রকাশ এখন কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পত্রিকায় এখন আর মানুষ বিজ্ঞাপন দিতে চায় না। সারাদেশ জুড়েই আইপি টিভি আর অনলাইন পোর্টালের ছড়াছড়ি। যেগুলো সম্পাদিত হয় না, কপি পেস্টের মাধ্যমে চলছে। এই সাংবাদিকদের মুদ্রার ওপিঠে ভিন্ন কিছু রয়েছে। এমনকি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ে অনেক সাংবাদিকও জড়িত ছিলো বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এবং তার পরবর্তী সময়ে ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব। তিনি চাঁদপুরের সাংবাদিকতা বিষয়ে বলতে গিয়ে বলেন, চাঁদপুরের সাংবাদিকতার অনেক ঐতিহ্য রয়েছে। আশা করছি এই ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, আমরা শুধু পত্রিকা বের করে যাই কিন্তু আমাদের অতীত ভূমিকার দিকে তাকাই না। মুক্তিযুদ্ধে সাংবাদিকদের বিরাট ভূমিকা ছিল। আবার গোলাম আজমের পক্ষেও সাংবাদিকদের বিবৃতিও ছিলো। আজকে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সাংবাদিক ফোরামের নেতৃত্বে তারা ঢুকে পড়ছে। আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ তুলে ধরতে হবে। দেশের উন্নয়নে আমাদেরকে ভূমিকা রাখতে হবে।
সওগাত সম্পাদক নাসির উদ্দিন সম্মাননা পাওয়া দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, দেশে সংবাত্রপত্র বেড়েছে, বেড়েছে সাংবাদিক। কিন্তু সেই অনুযায়ী মান কি বেড়েছে? গণমাধ্যম কি প্রকৃতভাবে উঠে আসছে? তারপরও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। চাঁদপুরে ১৯টি দৈনিক পত্রিকা, নারায়ণগঞ্জ থেকে ৩০টি দৈনিক পত্রিকা বের হচ্ছে। ফলে বলতে হচ্ছে আমাদের মানুষের মধ্যে সাহস রয়েছে। আমরা যদি আমাদের মর্যাদার গ্লানি দূর করতে পারি, তাহলে দেশ একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড়াতে পারে। তবে অবশ্যই একদিন সংবাদপত্র তার গৌরবের পথে আরো এগিয়ে যাবে। করোনা মহমারিসহ নানা কারণে আজ আমাদের গণমাধ্যম এবং গণমাধ্যমকর্মীরা ভালো নেই। আমরাসহ ২-৪শ’ গণমাধ্যমকর্মী হয়ত ভালো আছে। বাকিরা ভালো নেই। তাই অর্থনৈতিক ভিত্তি প্রয়োজন। তবেই গণমাধ্যম ভালো থাকবে। তিনি চাঁদপুরের কথা বলতে গিয়ে বলেন, চাঁদপুরের সন্তান হিসেবে একটি আলাদা টান রয়েছে। তাই ডাক পেলেই ছুটে আসি।
জনাব সাইফুল আলম বলেন, প্রথমেই দৈনিক শপথ পত্রিকার ‘সত্য বলার শপথ’ শ্লোগানটি আমার নজর কাড়ে। সাংবাদিক সত্য বলবে, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে সমাজের চিত্র তুলে ধরবে। আর তাই মানুষের আশার জায়গা হল সংবাদ মাধ্যম। তিনি বলেন, এই পত্রিকাটি হলো সত্য বলার শপথ। সত্য বলা অনেক কঠিন কাজ। আর সত্য বলার শপথ নেওয়া সেটাতো আরো কঠিন কাজ বলে আমি মনে করি। তবে আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ইতিমধ্যে ‘দৈনিক শপথ’ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে চাঁদপুরের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে। যা আরো ত্বরান্বিত করতে হবে, সত্য প্রকাশ করতে হবে। তবে সত্য প্রকাশে অনেক কিছু মোকাবেলা করে আপনাদেরকে টিকে থাকতে হবে। তাহলেই মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্র আপনাদের কাছে কিছু আশা করতে পারবে।
অনুষ্ঠানে আরেক সম্মাননা প্রাপ্ত সাংবাদিক চাঁদপুরের প্রথিতদশা সাংবাদিক, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ও চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত বলেন, আমি আবেগাপ্লুত। জীবনে অনেক সম্মাননা পেয়েছি। কিন্তু সওগাত সম্পাদক নাসির উদ্দিন সম্মাননাটি জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিক ব্যক্তিত্বের সাথে পাওয়া আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পাওয়া।
কাজী শাহাদাত দৈনিক শপথের সম্পাদক ও প্রকাশক কাদের পলাশের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বয়সে কাদের ছোট হলেও শ্রম ও মেধায় সে ইতোমধ্যে তাঁর যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। আমি কখনো তার জন্যে কিছু করতে পেরেছি কিনা জানি না তবে যে কোনো বিষয়ে বা যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সে আমার পরামর্শ চায়। ইতোপূর্বে আমি জীবনে অনেক সম্মাননা পেয়েছি, কিন্তু আজকের সম্মাননা আমার কাছে ব্যতিক্রম। কেননা এই সম্মাননাটি আমি গ্রহণ করছি প্রিয় দুজন মানুষের উপস্থিতিতে। একজন হলেন পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ ও আরেকজন যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম। আজকের এই আয়োজনের জন্য তিনি দৈনিক শপথ পরিবারকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান তিনি।
দৈনিক শপথের সম্পাদক ও প্রকাশক কাদের পলাশের পরিচালনায় এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলনের সভাপ্রধানে সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ছাড়াকার ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি ডিআইও-২ মনিরুল ইসলাম, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শরীফ চৌধুরী, সাবেক সেক্রেটারী সোহেল রুশদী, আলোকিত চাঁদপুরের সম্পাদক ও প্রকাশক জাকির হোসেন, চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আল ইমরান শোভন, সম্পাাদক রিয়াদ ফেরদৌস ও কচুয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রাকিবুল হাসান।
মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন সাংবাদিক সম্মাননা প্রদানের পূর্বে তিন গুণী সাংবাদিকের জীবনী পাঠ করেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা জাকির, চাঁদপুর প্রেক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ ও দৈনিক শপথের সাহিত্য সম্পাদক ম. নূরে আলম। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দৈনিক শপথের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আব্দুল লতিফ। এর আগে সম্মাননাপ্রাপ্ত অতিথি ও প্রধান অতিথিকে উত্তরীয় ও ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। আলোচনা শেষে সম্মাননা প্রাপ্ত সাংবাদিক সাইফুল আলম, কাজী শাহাদাত ও গোলাম কিবরিয়া জীবনকে সম্মাননা ক্রেস্ট, সনদ, বই এবং বিভিন্ন উপহার তুলে দেন প্রধান অতিথি পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ। এছাড়া পিআইবির কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ প্রকাশনা তুলে দেয়া হয় সম্মাননা প্রাপ্ত অতিথিদের হাতে।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রধান অতিথিসহ সকল অতিথি এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সকল সাংবাদিক একত্রে মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করেন। এরপর বিকেল পৌনে ৪টায় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালী বের করা হয়। বিকেল ৪টায় শুরু হয় কেক কাটা, আলোচনা সভা ও সাংবাদিক সম্মাননা প্রদান কার্যক্রম। অনুষ্ঠানের শুরুতেই অতিথিদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন দৈনিক শপথের সাংবাদিকবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি ইকবাল পারভেজ, লেখক মুহম্মদ ফরিদ হাসান, দৈনিক শপথের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন পাটওয়ারী মন্টু, নির্বাহী সম্পাদক ওয়াদুদ রানা, সম্পাদকীয় প্রধান আবু ইউসুফ, বার্তা সম্পাদক নজরুল ইসলাম আতিক, মফস্বল সম্পাদক বিল্লাল ঢালী, সহ-সম্পাদক ফিরোজ আলম, চীফ রিপোর্টার রিফাত কান্তি সেন, বিশেষ প্রতিনিধি বোরহান উদ্দিন ডালিম, জাহাঙ্গীর আলম জাহিদ, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার এইচ এম নিজাম, স্টাফ রিপোর্টার ফখরুল ইসলাম টিটু, ইকবাল বাহার, রিয়াজ শাওন, শেখ ফরিদ, কম্পিউটার অপারেটর বিশাল ও উপজেলায় কর্মরত সকল সাংবাদিক।