বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০

স্থানীয় এমপি ও উপজেলা নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় নেই, জেলার তদারকি নেই
অনলাইন ডেস্ক

আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিগত ১৪ বছরের উন্নয়নের কথাগুলো যদি তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারে বা তুলে ধরতে পারে, তাহলে আওয়ামী লীগের প্রয়োজন হবে না, জনগণই বিএনপির আন্দোলন রুখে দাঁড়াবে।

গোলাম মোস্তফা ॥ ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জিএস তসলিম বলেছেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমানে খুবই নাজুক অবস্থা। উপজেলা আওয়ামী লীগের অধীন ১৬টি ইউনিটের অবস্থাই খুবই নাজুক। উপজেলা কমিটির ১৯জন মারা গেছেন। মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে আছে বহু কমিটি। স্থানীয় এমপির সাথে উপজেলা নেতৃবৃন্দের কোনো সমন্বয় নেই। জেলার দায়িত্বশীলদেরও কোনো তদারকি নেই। সব মিলিয়ে খুবই বাজে অবস্থা। এমতাবস্থায় সকল ইউনিটের সম্মেলনের বিকল্প নেই।

দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে জিএস তছলিম এসব কথা বলেন। তাঁর সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলো -

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি আওয়ামী লীগের যে ইউনিটের সাথে সংশ্লিষ্ট, সে ইউনিটের সর্বশেষ সম্মেলন কবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

জিএস তসলিম : সম্মেলনের তারিখটি নির্দিষ্ট করে খেয়াল নেই। তাও কমপক্ষে ৬ বছর পূর্বে হয়েছে। গঠনতন্ত্র মোতাবেক মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কতো বছর পর পর একটি শাখা/ ইউনিটের সম্মেলন করতে হয়?

জিএস তসলিম : দলের গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্ট বলা রয়েছে, ৩ বছর পর পর প্রতিটি ইউনিটের সম্মেলন করতে হবে। কিন্তু গঠনতন্ত্রের লেখা এখন শুধু কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এখনতো গঠনতন্ত্র দিয়ে সংগঠন চলে না। সংগঠন চলে পছন্দের লোকদের দিয়ে। আর এর দ্বারা সংগঠন সবল হবে, না কি দুর্বল হবে, সেই দিকে কারো নজর নাই। যে কারণে দিন দিন সংগঠনের অবস্থা নাজুক হলেও ‘মাই ম্যান’ তৈরি বন্ধ হচ্ছে না।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার ইউনিটের সম্মেলন আয়োজনে কী কী বাধা আছে বলে মনে করেন?

জিএস তসলিম : আমাদের ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থা লেজে-গোবরে। এখানে স্থানীয় এমপির সাথে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশাল দূরত্ব রয়েছে। রয়েছে সমন্বয়হীনতা। ফলে শুধু উপজেলা আওয়ামী লীগের নয়, উপজেলা আওয়ামী লীগের অধীন ১৬টি ইউনিটেরই নাজুক পরিস্থিতি। তার মধ্যে এ উপজেলার অধীনস্থ ১৫টি ইউনিয়নও রয়েছে। অধিকাংশ ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু এখনো শূন্যস্থান পূরণ করা হচ্ছে না। উপজেলা কমিটির ১৯ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এ পদগুলোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পৌর আওয়ামী লীগেরও একই অবস্থা। এক কথায় ফরিদগঞ্জ আওয়ামী লীগ চলছে হাওয়ায় উপর। আর এই পরিস্থিতির জন্যে দায়ী স্থানীয় এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সমন্বয়হীনতা। তারপর রয়েছে জেলার দায়িত্বশীলদের তদারকির অভাব। এসব সমন্বয়হীনতা ও অচলাবস্থার কারণে কোনো ইউনিটেরই সম্মেলন হচ্ছে না। ইউনিটের সম্মেলন না হওয়ায় উপজেলারও সম্মেলন হচ্ছে না।

চাঁদপুর কণ্ঠ : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-গ্যাস সঙ্কট, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ আরো কিছু কারণে বিএনপির যে ধারাবাহিক আন্দোলন, তাতে আপনারা কতোটুকু উদ্বিগ্ন?

জিএস তসলিম : আমরা যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি, তারা বিএনপির এই আন্দোলন নিয়ে চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন কোনোটাই নই।

আওয়ামী লীগ রাজপথে যেমনি আন্দোলন করতে জানে, তেমনি দেশও পরিচালনা করতে জানে। অতএব বিএনপির এই আন্দোলনের জবাব সময়মতো আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক পন্থায়, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে দিবে এবং রাজপথে মোকাবেলা করবে ইনশাআল্লাহ্।

আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, বিএনপি যে ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করছে, সে ইস্যু নিয়ে দেশের জনগণ সচেতন। জনগণ জানে সারাবিশ্বে কী অবস্থা চলছে। বিশেষ করে কোভিড মহামারী কাটিয়ে উঠতে না উঠতে শুরু হয়েছে রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধ। এ অবস্থায় সারাবিশ্ব নানা সঙ্কট দিয়ে দিনাতিপাত করছে। তার মধ্যেও আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের বহু উন্নত রাষ্ট্রের চেয়ে অনেক ভালো চলছে।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা মনে করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশে এখনো নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, এতো প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে। অতএব জনগণ আমাদের শক্তি। বিএনপির এই আন্দোলন কখনোই সফল হবে না।

চাঁদপুর কণ্ঠ : এ আন্দোলন সাংগঠনিকভাবে কিংবা অন্য কী উপায়ে মোকাবেলা করা যায় বলে আপনি মনে করেন?

জিএস তছলিম : বিএনপির এই আন্দোলন আওয়ামী লীগ রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে মোকাবেলা করবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিএনপির এই আন্দোলন ভেস্তে যাবে। আওয়ামী লীগের জয় হবে ইনশাআল্লাহ্।

আর বিএনপির রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে, আন্দোলন করারও অধিকার রয়েছে। তবে আন্দোলন হতে হবে গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ। জনগণ বিএনপির ধ্বংসাত্মক আন্দোলন পছন্দ করছে না। তাদের আন্দোলনের নামে রাজপথে নৈরাজ্য, জানমালের ক্ষয়ক্ষতি আমরা মেনে নেবো না। আমাদের রাজনীতি হচ্ছে জনগণের জন্যে। অতএব জনস্বার্থে আওয়ামী লীগ রাজপথে নামবে, বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলা করবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি কি এমন মানসিক আস্থা পোষণ করেন যে, বিদ্যমান সমস্যা বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক সঙ্কট, সম্ভাব্য বৈশি^ক মন্দা তথা নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ স্বীয় জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে পারবে?

জিএস তছলিম : আমি শতভাগ আশাবাদী ৪র্থ বারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সৎ, যোগ্য উত্তরসূরি, আমাদের নেত্রী জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ, অভিজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলে সকল প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েও সারা বিশ্বের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। সকল সমস্যা, সঙ্কট, মোকাবেলা করে দেশের জনগণকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সচেতন জনগণ দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারকে সহযোগিতা করছে। অতএব আমার দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিগত ১৪ বছরের উন্নয়নের কথাগুলো যদি তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারে বা তুলে ধরতে পারে, তাহলে আওয়ামী লীগের প্রয়োজন হবে না, জনগণই বিএনপির আন্দোলন রুখে দাঁড়াবে। এদেশের জনগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে আবারো নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করে আওয়ামী লীগকে বিজয়ের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থ বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন করবে। আওয়ামী লীগ টানা ৪র্থ বারের মতো সরকার গঠন করবে ইনশাআল্লাহ।

চাঁদপুর কণ্ঠ : উপরোক্ত প্রশ্নমালার বাইরে আপনার অন্য কোনো বক্তব্য থাকলে উপস্থাপন করতে পারেন।

জিএস তছলিম : আমার বক্তব্য হচ্ছে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রতি। আপনারা নিজেদের স্বার্থের দিকে নজর না দিয়ে দলের দিকে নজর দেন। আপনাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে দলের স্বার্থে যোগ্য ব্যক্তিকে নেতৃত্ব দিন। দলকে সুসংগঠিত করুন। মনে রাখবেন দল তৃণমূল থেকে শক্তিশালী থাকলে আপনি নেতার শ্রদ্ধা পাবেন। দল শক্তিশালী হলে আপনার নেতৃত্ব থাকবে, অন্যথায় কারো মূল্যায়ন হবে না।

আওয়ামী লীগকে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকল উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এবং পৌর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এক কথায় সকল ইউনিটের সম্মেলন করে তৃণমূল পর্যায়ে পর্যন্ত দলকে সুসংগঠিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। দলকে এগিয়ে নিতে এর বিকল্প নেই।

উল্লেখ্য, জিএস তসলিম ১৯৯১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের কর্মী হিসেবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৯১ সালে তিনি ছাত্রলীগ গৃদকালিন্দিয়া হাইস্কুল কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালে ফরিদগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আরো সক্রিয় হন। পরবর্তীতে ১৯৯৫-৯৬ সালে ফরিদগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে জিএস পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। তিনি ১৯৯৭ সালে ফরিদগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর দীর্ঘদিন পর মাহবুবুল বাশার কালু পাটোয়ারী ও সাহেদ সরকারের নেতৃত্বে গঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে আবুল খায়ের ও সাহেদ সরকারের নেতৃত্বে গঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি ২০১৯ সালে ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়ে এই দায়িত্বে রয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়