বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৪

আল্লামা খাজা আহমাদ শাহ (র.) : উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত সুফী সাধক

অনলাইন ডেস্ক
আল্লামা খাজা আহমাদ শাহ (র.) : উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত সুফী সাধক

উপমহাদেশের প্রখ্যাত এক সুফী সাধকের দরবার চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নস্থ ইসলামপুর গাছতলা দরবার শরীফ। এই দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন কুতুবুল ইরশাদ শাহসুফী খাজা আহমাদ শাহ্ নকশেবন্দী মোজাদ্দেদী (র.)। দরবার শরীফের সীনা ব-সীনা বর্তমান গদ্দীনশীন পীর হচ্ছেন হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব খাজা আরিফুর রহমান তাহেরী নকশেবন্দী মোজাদ্দেদী। তিনি বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নির্বাহী মহাসচিব ও ঢাকা শাহজাহানপুরস্থ রেলওয়ে হাফিজিয়া সুন্নিয়া আলিম মাদ্রাসার প্রধান নির্বাহী। তিনি দেশ টিভিসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ইসলামী অনুষ্ঠানের জনপ্রিয় আলোচক ও উপস্থাপক। দরবার শরীফের বাৎসরিক ওরছ উপলক্ষে ২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি খাজা আরিফুর রহমান তাহেরী সাহেবের এক সাক্ষাৎকার চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছিল। সেটি আজ ৯০তম ওরছ শরীফ উপলক্ষে পুনরায় প্রকাশ করা হলো।

দরবার শরীফের বার্ষিক ওরস শরীফের আজকে প্রধান দিবস। আজ সারা রাত বয়ান শেষে বাদে ফজর আখেরি মুনাজাতের মধ্য দিয়ে তিনদিনব্যাপী ওরছ মাহফিল শেষ হবে।

খাজা আরিফুর রহমানের সাথে কথা হয় আধ্যাত্মিক এই দরবার শরীফ সম্পর্কে। খাজা আরিফুর রহমান বলেন, পবিত্র ইসলামের আস্বাদন বস্তু হচ্ছে ইলমে তাসাউফ তথা সুফীজম। মহান রাব্বুল আলামিন ও রাহমাতুল্লিল আলামিন নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এঁর সকল বাণীর মূল কথাই হচ্ছে মুত্তাকী হওয়া। ঈমান ও সকল আমলের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুত্তাকী তথা খোদাভীরুতা অর্জন করা। একজন মুসলমান যখন মুত্তাকী হবে তখনই তিনি মুমিনে কামিল হবেন। অন্যথায় তার ইবাদত, নেক আমল, দান-সদকা সবই হবে লোক দেখানো। এই সুফী তত্ত্বের উৎসস্থল হচ্ছে নাবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবাগণ। পরবর্তীতে তাঁদের অনুসারী তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, আইম্মায়ে মুজতাহেদীন, সলফে সালেহীন, অলি- আবদাল, গাউছ-কুতুবগণ যুগে যুগে সুফী তত্ত্বের ধারক-বাহক ছিলেন। তাঁদেরই যোগ্য উত্তরসূরী হচ্ছেন কুতুবুল ইরশাদ মহিউস সুন্নাহ্ হাফেজ ক্বারী আল্লামা খাজা আহমাদ শাহ নকশেবন্দী মোজাদ্দেদী (র.)। তাঁর পূর্বপুরুষ পবিত্র মদিনা মনোয়ারা থেকে ভারতবর্ষ হয়ে বাংলাদেশে আগমন করেন। বর্তমান চাঁদপুর-এর গাছতলার পূর্ব নাম ছিলো। ‘মহাদেবপুর’। খাজা আহমাদ শাহ (রহ.)- এঁর বেলায়েতের ফয়েজে এতদ্বঞ্চলের হাজার হাজার লোক ইসলাম ধর্মের মহান আলোর পরশ পান। ফলে এই জায়গার নাম পরবর্তীতে 'ইসলামপুর' নামে তিনিই নামকরণ করেন। তখন থেকেই এই দরবারের নাম ইসলামপুর গাছতলা দরবার শরীফ নামে পরিচিতি পায়। খাজা আহমাদ শাহ্ (র.)-এর পীর ও মোর্শেদ ছিলেন ভারত বর্ষের বিখ্যাত ওলী আল্লাহ্ রিয়াছাতে রামপুরের আল্লামা হাফেজ এনায়েতুল্লাহ্ খান রামপুরী (র.)। খাজা আহমাদ শাহ (র.) ছিলেন তাঁর অন্যতম খলিফা। তিনি ছিলেন নকশেবন্দীয়া ও মোজাদ্দেদীয়া তরিকার একজন সুফী সাধক। তিনি ইলমে দ্বীন হাসিল করেন ভারতের রামপুর মাদ্রাসায়ে আলিয়া থেকে শিক্ষা লাভ করেন। বহু কারামতসম্পন্ন আল্লাহর ওলী আল্লামা খাজা আহমাদ শাহ (র.)-এঁর অন্যতম কারামত হলো: মদিনা পাকে হুজুর নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর জিয়ারতকালে তিনি অলৌকিকভাবে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর দিদার লাভ করেন এবং প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে শরবতের পিয়ালা দান করেন। খাজা আহমদ শাহ (র.)-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিলো তিনি ছিলেন অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন ওলী আল্লাহ। অর্থাৎ কেউ তাঁর দরবারে কোন্ উদ্দেশ্যে এসেছে তা তিনি তাকে দেখেই বলে দিতেন। তাঁর একজন ছাহেবজাদা আল্লামা খাজা আবুল খায়ের (র.)। তিনি ঢাকা শ্যামলীতে 'খাজা আবুল খায়ের সুন্নিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা এবং টাঙ্গাইলে মাদ্রাসা, মসজিদ ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। খাজা আহমাদ শাহ (র.)-এর আরেক সন্তান খাজা তৈয়্যবুল ইসলাম (র.) একজন উঁচু মানের আলেম ছিলেন। বহু আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে তিনি তরিক্বতে এক মহান স্থান অর্জন করেন। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি বহুবার মাটির নিচে একাধারে ৪০ দিন সাধনা করেছেন। ৪০ দিন পর তিনি যখন মাটির নিচ থেকে উপরে উঠতেন তখন তাঁর চেহারায় নূর চলকাতো। বহু কারামতসম্পন্ন আল্লাহর এই ওলী দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে দিদারে এলাহিতে চলে যান। গাছতলা দরবার শরীফে বর্তমানে তাঁর মাজার শরীফ অবস্থিত। তাঁর আরেক সুযোগ্য সন্তান আশেকে রাসূল পীরে তরিকত আল্লামা খাজা আবু তাহের (র.)। তিনি বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমধিক পরিচিত ছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন একজন নির্লোভ, নিরহংকার খাঁটি আশেকে রাসূল। ওহাবী, মওদুদী, খারেজি ও কাদিয়ানিসহ নানা বাতিলপন্থীদের বিরুদ্ধে যেমনি ছিলো তাঁর তেজস্বী বক্তব্য, তেমনি তাঁর জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় ছিলো নবী প্রেমিকদের খোরাক। তাঁর বক্তব্যে নবী প্রেমের কথা আসলেই তাঁর চক্ষু দিয়ে অঝোরে পানি ঝরতো, আর নবী প্রেমিকদের অন্তর বিগলিত হয়ে যেতো। তিনি ঢাকা শাহজাহানপুরে একটি হাফেজিয়া ও আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। মাদ্রাসাটি বর্তমানে আলিম পর্যন্ত। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি মাদ্রাসা, মসজিদ ও খানকা প্রতিষ্ঠা করেন। খাজা আবু তাহের (র.) দীর্ঘসময় ঢাকা কমলাপুর কেন্দ্রীয় রেলওয়ে স্টেশন জামে মসজিদের খতিব ছিলেন এবং নয় মাস মোহাম্মদপুর জামেয়া কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। খাজা আহমাদ শাহ (র.)- এর অন্য সুযোগ্য সন্তানদের মধ্যে খাজা বাকী বিল্লাহ্ (র.), খাজা লোকমান (র.) ও খাজা আতিকুর রহমান (র.)সহ আরো ক'জন দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়েছেন। সুন্নীয়তের জন্যে নিবেদিতপ্রাণ বহু কারামতসম্পন্ন ওলী খাজা আবু তাহের (র.)সহ তাঁর অপরাপর ভাইয়েরা ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁদের বর্ণাঢ্য জীবনের পরিসমাপ্তি শেষে তাঁরা রফিকে আলা তথা মাহবুবে হাকীকী মহান আল্লাহর দীদারে চলে যান। খাজা আবু তাহের (র.)-এঁর মাজার শরীফ ইসলামপুর গাছতলা দরবার শরীফে তাঁরই বাবাজান কেবলার পাশে অবস্থিত। খাজা আরিফুর রহমান তাহেরী দরবার শরীফের আজকের সারারাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিলে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়