বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

মফস্বলে সাংবাদিকতাকে একমাত্র পেশা হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ॥

কচুয়া প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবুল হোসেন। ১৯৯২ সালে প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করে প্রায় ২৩ বছর সভাপতির দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থেকে সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দেন। ১৯৮০ সালে কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত ‘পাক্ষিক কুমিল্লা সংবাদ’-এ সংবাদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে তাঁর সাংবাদিকতা শুরু হয়। ৪৩ বছরের সাংবাদিকতার জীবনে তিনি বেশ কিছু পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৮১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ২০ বছর জাতীয় ‘দৈনিক বাংলার বাণী’তে কাজ করেন। এ পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ২০০২ সাল থেকে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে আসছেন। এছাড়াও বর্তমানে তিনি ‘দৈনিক চাঁদপুর দর্পণ’ পত্রিকার কচুয়া অফিস প্রধান হিসেবে কর্মরত। অন্য যেসব পত্রিকায় তিনি কাজ করেন, সেগুলো হচ্ছে : দৈনিক বাংলাদেশ সংবাদ, সাপ্তাহিক সমাজকণ্ঠ, সাপ্তাহিক নিরীক্ষা, সাপ্তাহিক রংধনু, সাপ্তাহিক চাঁদপুর বার্তা, সাপ্তাহিক রূপসী বাংলা, সাপ্তাহিক চাঁদপুর, মাসিক নাট্যরাজ, মাসিক রক্তিম আভা, জাতীয় ম্যাগাজিন সাপ্তাহিক চিত্র বাংলা, সংবাদ চিত্র ও সন্ধানী।

সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতাকে তিনি মহান পেশা হিসেবে গ্রহণ করে জীবন পরিচালিত করেন। তিনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক। এ দুই পেশার বাইরেও তিনি একজন শিশু সংগঠক (শাপলা কুঁড়ির আসর ও কচি-কাঁচার মেলা) এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেশ পরিচিত।

দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ‘সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের ভাবনা’ শীর্ষক ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার পর্বে আজ আবুল হোসেন তাঁর অভিব্যক্তি তুলে ধরেছেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার উপজেলার সাংবাদিকতা অতীতের সকল সময়ের চেয়ে কি গতিশীলতা পেয়েছে? গতিশীলতা পেলেও কি মান রক্ষা হচ্ছে?

আবুল হোসেন : নিঃসন্দেহাতীতভাবে বলা যেতে পারে, অতীতের চেয়ে গতিশীলতা যথেষ্ট বেড়েছে। তবে সাংবাদিকতার মান, দক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতার দিকগুলো অতীতের চেয়ে অনেক গুণ কমেছে। অতীতে সাংবাদিকদের বৈশিষ্ট্যগুণ আর এখনকার সাংবাদিকদের গুণাগুণে অনেক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সাংবাদিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও এটা বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, দক্ষ, অভিজ্ঞ ও মানসম্মত সংবাদকর্মীর সংখ্যা অতি নগণ্য। অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্যে প্রকৃত সাংবাদিকদের অস্তিত্ব বিলীন হতে চলছে। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। প্রকৃত সাংবাদিকদের পথচলাকে সুগম করে তোলার উপায় খুঁজতে হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : পত্রিকাগুলোর প্রিন্টিং সংস্করণের পাঠক এবং টিভি সংবাদের শ্রোতাণ্ডদর্শক দিনদিন কমছে। কারণ কী? এমনটি রোধের উপায় কী?

আবুল হোসেন : প্রযুক্তির উতকর্ষতার ভিত্তিতে একটা বড় রকমের পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। এতে শ্রোতাণ্ডদর্শক এবং পাঠকরা হাতের মুঠোয় পেয়ে যাচ্ছে তাদের চাহিদা মতো খবরাখবর। স্বল্প সময়ে জানতে সক্ষম হচ্ছে বিশ্বকে। এর ফলে প্রিন্টিং সংস্করণ ও টিভি চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে খবরাখবর জানার উপযোগিতা কমে যাচ্ছে। তাছাড়া চাহিদা মতো সংবাদ পরিবেশিত না হওয়ায় পাঠক ও শ্রোতাণ্ডদর্শক দিনদিন কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ। এক্ষেত্রে আমি মনে করি, ব্যক্তিস্বার্থ পরিহার করে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশিত হওয়া উচিত। পরিবেশিত হওয়া প্রয়োজন সংবাদের নেপথ্য সংবাদ, অ্যানালাইসিসমূলক ও এক্সক্লুসিভ সংবাদ।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আজকাল গণমাধ্যমকর্মীদেরকে বিভিন্ন মহল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবহার করতে চাইছে। অনেকে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ব্যবহৃতও হচ্ছে। সাংবাদিকদের মধ্যে অনৈক্য/বিভাজন থেকে এমনটি হচ্ছে। আপনার অভিমত কী?

আবুল হোসেন : ‘আজকাল গণমাধ্যমকর্মীদেরকে বিভিন্ন মহল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবহার করতে চাইছে’ আমি এ কথার সাথে সহমত পোষণ করে বলতে চাই, বেশির ভাগ সংবাদকর্মী রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী ব্যক্তিবিশেষের কাছে জিম্মি। ফলে ওই সংবাদকর্মীরা ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ব্যবহৃত হয়। অনেক সংবাদকর্মী আছে, যারা টিকে থাকার জন্যে বিভিন্ন মহলের আশ্রয়-প্রশ্রয় গ্রহণ করে। সাংবাদিকদের অনৈক্য/বিভাজনের কারণেই মুখ্যত এমনটি হচ্ছে।

এছাড়া আরেকটি কারণ হচ্ছে, মহান সাংবাদিকতার পেশায় আদর্শ অনুসরণ করে চলার মানসিকতার অভাব।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সংবাদ পরিবেশনে তাৎক্ষণিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে অনলাইন সাংবাদিকতার জোয়ার। এতে কেউ কেউ অপসাংবাদিকতার সুযোগ বা আশ্রয় নিচ্ছে। সকল সংবাদের ক্ষেত্রে কি তাৎক্ষণিকতা প্রয়োজন? আপনার মতামত জানতে চাই।

আবুল হোসেন : প্রযুক্তির যুগে তাৎক্ষণিক সংবাদ অনলাইনে প্রকাশ পাবে, এটা পাঠকের স্বাভাবিক প্রত্যাশা থাকতেই পারে। কিন্তু পাঠকের প্রত্যাশা পূরণ করতে গিয়ে যে সংবাদ তাৎক্ষণিক প্রকাশ করলে সমাজ ও জাতীয় জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং সৃষ্টি হয় নৈরাজ্যকর অবস্থা, তা প্রকাশ কোনোভাবেই কাম্য নয়। আজকাল বড় সমস্যা হচ্ছে আনাড়ি সাংবাদিকদের নিয়ে। তারা অনলাইনে সমাজজীবনে ক্ষতিকর ও বিপত্তি সৃষ্টি হতে পারে এমন সংবাদও তাৎক্ষণিক প্রকাশ করার জন্যে অস্থির হয়ে উঠে। আর এ সুযোগে অসাধু ব্যক্তিরা এসব মিডিয়াকর্মীকে কাজে লাগিয়ে মহান সাংবাদিকতার পেশাকে কলুষিত করে তুলছে। ওই অসাধুরা অনলাইন সাংবাদিকতায় জড়িত ভুঁইফোঁড় সাংবাদিকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : উপরোক্ত প্রশ্নসমূহের বাইরে আপনার কোনো বক্তব্য থাকলে প্রদান করতে পারেন।

আবুল হোসেন : যাছাই-বাছাই না করে অদক্ষ, আনাড়ি, অনভিজ্ঞ ও দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিদেরকে মিডিয়া ব্যক্তি হিসেবে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আমি মনে করি, মফস্বলে এই পেশাকে একমাত্র পেশা হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়। যাদের বৈধভাবে অপর কোনো আয়ের উৎস রয়েছে তাদেরকে মিডিয়া ব্যক্তি হিসেবে গ্রহণ করলে অপসাংবাদিকতা অনেকটা দূর হবে। চাঁদপুর কণ্ঠের ‘সাংবাদিকদের ভাবনা’ শীর্ষক আয়োজন মহান পেশার দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদেরকে সঠিক পথে চলার অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে আমার বিশ্বাস। আয়োজকদের জানাই ধন্যবাদ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়