প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
![রাজনীতিবিদরা নিজেদের প্রয়োজনে সংবাদকর্মীদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করেন](/assets/news_photos/2022/09/04/image-22844.jpg)
প্রবীর চক্রবর্তী। ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি প্রেসক্লাবের অর্থ সম্পাদকও ছিলেন দুদফা। বর্তমান কমিটির নির্বাহী সদস্য। ১৯৯২ সালে এসএসসি পরীক্ষার পূর্বের গৃহশিক্ষক (তিনিও সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করতেন)-এর মাধ্যমে নোয়াখালী থেকে প্রকাশিত দৈনিক জাতীয় নিশান পত্রিকায় ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবে বেশ কিছুদিন সংবাদ পাঠানোর মাধ্যমে এই জগতে প্রবেশ করেন। তবে এই জগতে আসার জন্যে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ প্রদান করেন বর্তমান সাপ্তাহিক ফরিদগঞ্জকণ্ঠের প্রকাশক ও ইত্তেফাকের সাবেক প্রতিনিধি হাসান আলী। এ সময় তাঁর উৎসাহে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ক’টি পত্রিকায় পর্যায়ক্রমে নিয়মিত সংবাদ পাঠান তিনি। পরে ১৯৯৪ সালে সাপ্তাহিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকায় বার্তা সম্পাদক মির্জা জাকিরের হাতে আবেদন জমা দিয়ে এবং পরবর্তীতে পত্রিকার প্রাণপুরুষ কাজী শাহাদাতের অনুপ্রেরণায় ও সাহচর্যে ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন। অদ্যাবধি পত্রিকাটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলছেন। পত্রিকাটির ফরিদগঞ্জ ব্যুরো ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে অনলাইন সংস্করণের সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করছেন। দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশিত হওয়ার পর ৬ মাস কাজ করেন পত্রিকাটিতে। পরে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হলে ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়ে এখনও কাজ করছেন। মাসিক ফরিদগঞ্জ বার্তা ও পল্লীকাহিনীর বার্তা সম্পাদক হিসেবেও বেশ ক'বছর কাজ করেন তিনি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসের বিজয় দিবসের দিন তার সম্পাদনায় ফরিদগঞ্জ থেকে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক ফরিদগঞ্জ কণ্ঠ, যা অদ্যাবধি নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ‘সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের ভাবনা’ শীর্ষক ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার পর্বে আজ প্রবীর চক্রবর্তী তার অভিব্যক্তি তুলে ধরেছেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার উপজেলায় সাংবাদিকতা অতীতের সকল সময়ের চেয়ে কি গতিশীলতা পেয়েছে? গতিশীলতা পেলেও কি মান রক্ষা হচ্ছে?
প্রবীর চক্রবর্তী : অবশ্যই। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে প্রতিদিনই হাতের মুঠোয় চলে আসছে বিশ্ব। ফলে ঘটনা ঘটার কিছুক্ষণের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে তা পৌঁছে যাচ্ছে সংবাদকর্মীদের কাছে। এছাড়া প্রিন্ট পত্রিকার বাইরে শত শত অনলাইন পোর্টালের কারণে বেড়েছে সাংবাদিকদের সংখ্যা। তবে মান বাড়েনি। বিষয়ভিত্তিক রিপোর্টের পরিবর্তে স্পট রিপোর্ট বেশি হচ্ছে। এতে তথ্য বিভ্রাটও বাড়ছে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : পত্রিকাগুলোর প্রিন্টিং সংস্করণের পাঠক এবং টিভি সংবাদের শ্রোতাণ্ডদর্শক দিনদিন কমছে। কারণ কী? এমনটি রোধের উপায় কী?
প্রবীর চক্রবর্তী : শুধু চাঁদপুর জেলা থেকেই নিয়মিত পত্রিকা বের হয় এমন সংখ্যা দেড় ডজন। অনলাইন পোর্টাল রয়েছে অগণিত। এছাড়া সাংবাদিকরা নিজেদের মিডিয়ায় সংবাদ প্রেরণের সাথে সাথে নিজেদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা প্রকাশ করছে। ফলে পাঠক বা দর্শক-শ্রোতাদের প্রিন্ট পত্রিকা ও টিভি সংবাদের প্রতি আগ্রহ হ্রাস পেয়েছে।
পাঠক, দর্শক-শ্রোতা ধরে রাখতে হলে ফিচার, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, ধারাবাহিক বিষয়ভিত্তিক প্রতিবেদন বেশি বেশি করে প্রকাশ করতে হবে। পাঠক বা শ্রোতা বাড়াতে দেশটিভির মতো প্ল্যানিং এডিটর নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আজকাল গণমাধ্যম কর্মীদেরকে বিভিন্ন মহল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবহার করতে চাইছে। অনেকে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ব্যবহৃতও হচ্ছে। সাংবাদিকদের মধ্যে অনৈক্য/বিভাজন থেকে এমনটি হচ্ছে। আপনার অভিমত কী?
প্রবীর চক্রবর্তী : এর জন্যে রাজনীতি এবং সংবাদকর্মীদের অর্থনৈতিক সংকটও দায়ী। কারণ, রাজনীতিবিদরা নিজেদের প্রয়োজনে সংবাদকর্মীদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করেন। আবার সংবাদিকরা নিজেদের অনৈক্যের কারণেও ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদের আাশেপাশে এমন উদহারণ রয়েছে যে, পত্রিকা কর্তৃপক্ষ তার প্রতিনিধিকে ভালো অর্থনৈতিক সাপোর্ট দেয়ার কারণে ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত লেজুড়বৃত্তির কোনো তথ্য উঠে আসেনি। আবার সাংবাদিকতার জন্যে অদ্যাবধি সংগঠনের নেতৃত্বেও আসেননি তিনি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সংবাদ পরিবেশনে তাৎক্ষণিকতাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে অনলাইন সাংবাদিকতার জোয়ার। এতে কেউ কেউ অপসাংবাদিকতার সুযোগ বা আশ্রয় নিচ্ছে। সকল সংবাদের ক্ষেত্রে কি তাৎক্ষণিকতা জরুরি? আপনার মতামত জানতে চাই।
প্রবীর চক্রবর্তী : আজকাল ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করলেও কোনো কোনো সংবাদ পাওয়া যায়। অনেকেই নিজেদের পোর্টালের অবস্থান ভাল করতে যাচাই-বাছাই না করে তা প্রকাশ করছেন। খালি চোখে তা অনলাইন সংবাদিকতার জোয়ার বলে চিহ্নিত হচ্ছে। এতে বাড়ছে অপসাংবাদিকতা। সকল সাংবাদিকতায় তাৎক্ষণিকতা জরুরি নয়। যেমন-ফিচার, বিষয়ভিত্তিক রিপোর্ট এবং অনিয়মণ্ডদুর্নীতির সংবাদ। এসব ক্ষেত্রে সময় নিয়ে যাচাই-বাছাই করে সংবাদ পরিবেশন প্রয়োজন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : উপরোক্ত প্রশ্নসমূহের বাইরেও আপনার কোনো বক্তব্য থাকলে প্রদান করতে পারেন।
প্রবীর চক্রবর্তী : সাংবাদিকতার গতিধারা ঠিক রাখতে দুটি জিনিস খুব বেশি প্রয়োজন। একটি প্রশিক্ষণ এবং দ্বিতীয়টি অর্থনৈতিক সাপোর্ট। এই বিষয়ে মিডিয়া হাউজগুলোকে চিন্তা করা উচিত। আধুনিক সাংবাদিকতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে মিডিয়াগুলোতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাধ্যতামূলক করা উচিত।