চাঁদপুরের বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য যৌক্তিক ও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে জেলা প্রশাসনের সাথে ব্যবসায়ীদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩ সেপ্টেম্বর শনিবার বেলা ১২টায় পুরাণবাজারস্থ চাঁদপুর চেম্বার ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ ইমতিয়াজ হোসেন, এনএসআই’র উপ-পরিচালক শাহ আরমান আহমেদ।

জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বলেন, সরকার ব্যবসায়ীদের বৈধভাবে ব্যবসা করার সকল পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। পণ্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রেখে আপনারা ব্যবসা করবেন। এতে সরকারের সকল বিভাগ থেকে আপনাদের সহযোগিতা করা হবে। সরকার বাজার পরিস্থিতি দেখভাল করার জন্য ধাপে ধাপে মনিটরিং সিস্টেমকে আরো শক্তিশালী করছে। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর গঠন করা হয়েছে, বেশিদিন হয়নি। এই দপ্তরগুলো ধীরে ধীরে বিস্তৃত হবে। তখন আর ম্যাজিস্ট্রেটদের মোবাইল কোর্ট করতে হবে না, তখন আরো বেশি করে তদারকি করা হবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, প্রশাসন ব্যবসায়ীদের কেবল জরিমানা করতে চায় না, রবং সুন্দরভাবে ব্যবসা পরিচালনায় সহযোগিতা করতে চায়। এজন্যে আমরা প্রথমে সচেতনতা গড়ে তুলি। সরকারের নির্দেশনা মানতে মাইকিং করে বার বার বলা হয়। কারণ, আপনারা জরিমানার শিকার হন আমরা তা চাই না। আপনারা সচেতন হলেই অনেক কিছুই সহজ হয়ে যাবে। এই সচেতনতাগুলো আমাদের থাকতে হবে, আমরা ইঁদুর-বিড়াল খেলা চাই না। আমরা কেউ জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নই।

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, শুধুমাত্র চাঁদপুর নয়, আমাদের দেশের পুরো ব্যবসাই মূলত আমদানি নির্ভর। আদা, পেঁয়াজ, আলুসহ কিছু পণ্য বেশি উৎপাদন হয়। বাকি প্রায় সব পণ্যই আমাদের আমদানি করতে হয়। আপনারা সারাবছর অল্প ব্যবসা করবেন, কিন্তু ঈদ, পূজা, বৈশাখসহ বিভিন্ন পার্বণে কয়েকগুণ বেশি ব্যবসা করবেন-সেটি ঠিক নয়। কেজি প্রতি ৩-৪ টাকা বেশি নিলে সে অংকটা বস্তা প্রতি কত দাঁড়ায়!

তিনি চাঁদপুরের যোগদান করার পর এই প্রথম ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করায় চাঁদপুর চেম্বার ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান।

পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, ব্যবসায়ীরা পণ্যের ওপর লাভ করবে এটাই স্বাভাবিক। লাভের বিষয়টি সাধারণ ভোক্তাদের দিকে লক্ষ্য রেখে যেনো যৌক্তিকভাবে করা হয়। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসা বান্ধব। ব্যবসায়ীরা নিয়ম মেনে ব্যবসা করবে এটাই আমাদের আশাবাদ। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়।

চেম্বারের সহ-সভাপতি তমাল কুমার ঘোষের পরিচালনায় ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন চেম্বার পরিচালক আমিনুর রহমান বাবুল, আটা, ময়দা, চিনি, ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের পক্ষে চেম্বার পরিচালক গোপাল চন্দ্র সাহা, ধান-চাল ব্যবসায়ীদের পক্ষে চেম্বার পরিচালক পরেশ মালাকার, রাইস মিল মালিকদের পক্ষে ফয়সাল আহমেদ চৌধুরী, চাঁদপুর চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নাজমুল আলম পাটওয়ারী, আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ব্যবসায়ীদের পক্ষে ব্যবসায়ী মোঃ দুলাল গাজী প্রমুখ।

চাঁদপুর চেম্বারের পরিচালক মাইনুল ইসলাম কিশোর, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, হযরত আলী, রেজওয়ানুর রহমান রিজু, শিহাব শাহরিয়ার আখন্দসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ব্যবসায়ীরা তাদের বক্তব্যে বলেন, আমরা সরকারি সকল নিয়মণ্ডকানুন মেনে সুন্দরভাবে ব্যবসা করতে চাই। আমরা পুরাণবাজারের ব্যবসায়ীরা বেশিরভাগ পণ্য মোকাম থেকে আমদানি করে বিক্রি করি। আমদানির ওপর নির্ভর পণ্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রেখে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু কখনো কখনো প্রশাসন মোবাইল কোর্ট করে আমাদের অতিরিক্ত জরিমানা করে। এতে অনেক ব্যবসায়ী মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, তাছাড়া কিছুদিন পর পর প্লাস্টিকের বস্তার বিষয়ে অভিযান করা হয়। অথচ আমরা প্লাস্টিকের বস্তাসহ চাল আমদানি করছি। সরকার সেখানে কঠোর হলে আমরা বিড়ম্বনার শিকার হতাম না। আমরা সবসময় সুন্দরভাবে ব্যবসা করছি। এজন্যে আমরা প্রশাসনের কাছে সকল প্রকার সহযোগিতা কামনা করছি। অনুষ্ঠানের শুরুতে ব্যবসায়ী হাজী মোতালেব পাটওয়ারী পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং কালাচাঁন বণিক গীতা পাঠ করেন। এরপর পরিচিতি পর্ব এবং অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, চাঁদপুর রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম সরকার, নারায়ণ স্টোরের গোবিন্দ চন্দ্র সাহা, খাদ্য ভান্ডারের গোবিন্দ সাহা, ব্যবসায়ী সুবল পোদ্দার, বিপ্লব সাহাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের অন্য ব্যবসায়ীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।