রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২৬ মে ২০২২, ০০:০০

হাজীগঞ্জে হুমকির মুখে এলজিইডি নির্মিত সেতু!
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

হাজীগঞ্জের জগন্নাথপুর ও শাহরাস্তির খোর্দ্দ এলাকার সংযোগসেতু হিসেবে ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মিত ‘গুলজার সেতু’র গোড়া থেকে ডাকাতিয়া নদীতে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলনের কারণে সেতুটি হুমকির মুখে পড়ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সেতুর পূর্ব অংশ থেকে বালি উত্তোলন শেষ করে পশ্চিম পাড়ে ড্রেজিং শুরু হয়েছে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এ কারণে সেতুটি হুমকির মুখে পড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর মূল পিলারের পশ্চিম পাশের তথা নদীর উত্তর অংশে ড্রেংজি করে পাইপের মাধ্যমে শাহরাস্তি এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। যা বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০-এর ৪নং ধারার ‘খ’ উপধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন। উক্ত ধারায় উল্লেখ রয়েছে, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা হলে, অথবা আবাসিক এলাকা হতে সর্বনিম্ন ১ (এক) কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন করা যাবে না। অথচ সেতুর মাত্র ৫০-৬০ ফুটের মধ্য থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার দিনব্যাপী ডাকাতিয়া নদীর খোর্দ্দ ও জগন্নাথপুর সেতুর (গুলজার সেতু) পূর্ব পাশ থেকে বালু উত্তোলন করা হয়। এরপর বুধবার সেতুর পশ্চিম পাশ থেকে বালু উত্তোলন শুরু করা হলে গণমাধ্যমকর্মীদের খবর দেন এলাকাবাসী।

এদিকে উত্তোলনকৃত বালু দিয়ে হাজীগঞ্জের গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নসহ পাশের শাহরাস্তি উপজেলার টামটা দক্ষিণ ইউনিয়নের বেশ ক’টি গ্রামে বালু দিয়ে অবাধে পুকুর, নর্দমা ও ডোবাসহ জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। ডাকাতিয়া নদী থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে পাইপ দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে।

জানা যায়, ডাকাতিয়া নদীর নাব্যতা ও নৌপথের নাব্যতা ধরে রাখতে ২০১৭ সালে তৎকালীন নৌ-পরিবহণমন্ত্রী শাহজাহান খান হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে ডাকাতিয়া নদী খনন কাজের উদ্বোধন করেন। এরপর থেকেই শুরু হয় নদী খননের (ড্রেজিং) বালু দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর ও ডোবাসহ জলাধার ভরাট।

ডাকাতিয়া নদীর হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলার যে অংশে ড্রেজিং হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে, নদীর পাড় সংলগ্ন সেসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওইসব গ্রামের লোকজন তাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর, নর্দমা ও ডোবাসহ জলাধারগুলো ভরাট করেছেন। এতে করে গত চার বছরে প্রায় অর্ধশতাধিক জলাশর ভরাট হয়েছে। তারা ফুট হিসেবে বালি কিনছেন। এই ভরাটের কাজ এখনো চলছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী বলা হয়েছে, যে কোনো ধরনের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতি ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে।

এছাড়া জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ বলা হয়েছে, কোনো পুকুর-জলাশয়, নদী-খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। ওই আইনের ৫ ধারা মতে, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণিও পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু এসব আইনের কোনো তোয়াক্কাই করছেন না জলাধার ভরাটকারীরা। এতে পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

ডাকাতিয় নদী খনন (ড্রেজিং) কাজের ঠিকাদার মনতা কনস্ট্রাকশনের পরিচালক মাকসুদুর রহমানকে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি এবং পরে ফোনও ব্যাক করেনি।

মনতা কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার মোঃ নাজমুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, আমি শুনে সেতুর পাশ থেকে তাৎক্ষণিক বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দিই। এ সময় তিনি আরো বলেন, সেতুর ১২০ ফুট পর থেকে বালু উত্তোলন করা যায়। কিন্তু ড্রেজারের অপারেটর ভুল করে সেতুর কাছ থেকে বালু উত্তোলন করছেন। তাই তাৎক্ষণিক বালু উত্তোলন বন্ধ করে তাকে (ড্রেজার অপারেটর) সেতুর অন্তত দুইশ’ ফুট পর থেকে বালু উত্তোলনের নির্দেশনা দিয়েছি।

‘নদী ড্রেজিংয়ের উত্তোলনকৃত বালু বিক্রি করা যাবে কি না’ এমন প্রশ্নে মনতা কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার মোঃ নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা বিধি মেনে বালি বিক্রি করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়