প্রকাশ : ২৫ মে ২০২২, ০০:০০
উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে কচুয়ার রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ২০১৩ সালের ২৬ শে জানুয়ারি কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ ২০১৬ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২২ সাল পর্যন্ত এই কমিটি দিয়ে চলছে কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। ফলে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৬বছর আগেই।
জানা যায়, চলতি বছরের গত ৩ মার্চ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে চাঁদপুর জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে নতুন কমিটি গঠন ও দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সাংগঠনিক টিমের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা। কচুয়ার রাজনৈতিক মাঠ এখন ৩ গ্রুপে বিভক্ত। স্থানীয় এমপি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপির নেতৃত্বে চলছে একটি গ্রুপ, অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এবং অন্য গ্রুপটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ২০১৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কচুয়া আসনের যৌথ মনোনয়নপ্রাপ্ত সাবেক প্রভাবশালী আমলা এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন।
ওই সময় থেকে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন কচুয়ার রাজনীতিতে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছিলেন। তারপর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান দখল করে নিয়ে নিজের অবস্থান জানান দেন কচুয়ার পালাখাল গ্রামের কৃতী সন্তান বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রথম আইন বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ। পদ পাওয়ার পর থেকেই মহীউদ্দীন খান আলমগীরের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে কচুয়ার রাজনীতিতে নিজের বলয় গড়ে তোলেন। পুরাতন ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙ্গে নিজের বলয়ে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে তার শক্ত অবস্থানের জানান দেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে তিন গ্রুপে নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল আওয়ামী লীগ থেকে জানা যায়, বর্তমান আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ¦ আইযুব আলী পাটওয়ারী ও সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরী সোহাগ এমপির বলয়ে থাকলেও বর্তমানে তারা ড. সেলিম মাহমুদের বলয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করছেন। গত মাহে রমজানে প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বরূপ উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় সেলিম মাহমুদ নিজে উপস্থিত থেকে ৮ হাজার পিস শাড়ি বিতরণকালে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দেখা যায়। এতে স্পষ্ট বুঝা যায়, বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদের অনুসারী। তেমনি গোলাম হোসেনের উদ্যোগে তার হাসিমপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে স্বাধীনতা ভবনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়। ওই ইফতার পার্টিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিশাল একটি অংশের উপস্থিতি ছিলো লক্ষ্যণীয়। তাদের মধ্যে ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোতাহের হোসেন দুলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর জব্বার বাহার, জিয়াউর রহমান হাতেম, বাতেন সরকার ও উপ-দপ্তর সম্পাদক কবির হোসেন। তাদের উপস্থিতি সকলের নজর কেড়েছে।
বর্তমান এমপি বেশ কয়েকদিন দেশের বাইরে রয়েছেন। তাঁর গ্রুপে রয়েছে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আকতার হোসেন ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আজীজ শাহীন, আনারস প্রতীকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী শিল্পপতি ফয়েজ আহমেদ স্বপন, যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক প্রভাবশালী নেতা অ্যাডঃ হেলাল উদ্দীন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাচ্ছেল খান, যুবলীগ নেতা গাজী কামাল ও ফারুক, উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সোহাগ উদ্দীন, সাবেক সভাপতি ইব্রাহীম খলিল ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সবুজ।
অন্যদিকে ড. সেলিম মাহমুদের অনুসারীরা হচ্ছেন কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইয়ুব আলী পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন সোহাগ, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সালাউদ্দীন ভূঁইয়া প্রমুখ।
এদিকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান শিশিরের সাথে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। তিনি মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছেন। আরেক প্রভাবশালী নেতা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও কচুয়া পৌরসভার দুইবারের নির্বাচিত মেয়র নাজমুল আলম স্বপন স্থানীয় এমপি মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপির আশীর্বাদ পুষ্ট হলেও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদের সাথে সু-সম্পর্ক রয়েছে।
কচুয়ায় সর্বত্র গুঞ্জন চলছে, আগামী ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে কার বলয় থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন। কার অবস্থান কত শক্ত তখনই সেটা বোঝা যাবে। প্রকাশ্যে তিন গ্রুপে অবস্থান নেয়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা হচ্ছেন : মহীউদ্দীন খান আলমগীর গ্রুপের সভাপতি প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আকতার হোসেন সোহেল ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা ফয়েজ আহমেদ স্বপন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হুমায়ুন কবির। সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডঃ হেলাল উদ্দীন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ইমাম হোসেন মেহেদী, উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লালু ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান জুয়েল।
ড. সেলিম মাহমুদের গ্রুপের সভাপতি প্রার্থী বর্তমান সভাপতি আলহাজ¦ আইয়ুব আলী পাটওয়ারী এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন সোহাগ।
গোলাম হোসেন গ্রুপের সভাপতি প্রার্থী কাউকে প্রকাশ্যে তার পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে না। তবে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সৈয়দ আব্দুর জব্বার বাহার ও জিয়াউর রহমান হাতেম প্রচারণা চালাচ্ছে।
অন্যদিকে তিন গ্রুপের বাইরে থেকে সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে প্রচারণা চালাচ্ছেন সভাপতি প্রার্থী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান শিশির ও সাধারণ সম্পাদক পদে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নাজমুল আলম স্বপন।
কচুয়ার আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ জানান, সংসদ সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছেন। চলতি মাসের শেষের দিকে তিনি কচুয়া ফেরার কথা রয়েছে। তিনি আসলেই উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্যোগ নেয়া হবে।
কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পর্কে জানতে চাইলে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল বলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশে কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের তারিখ কিছুদিনের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে।
তবে সব মিলিয়ে কার অনুসারীরা হবে উপজেলা আওয়ামী লীগের পরবর্তী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ দিকে তাকিয়ে আছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।