প্রকাশ : ১৬ মে ২০২২, ০০:০০
ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (৫০ শয্যাবিশিষ্ট) দিন দিন দালালের উৎপাত বেড়েই চলছে। এসব দালালের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা। উপজেলার পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা কেন্দ্র এই সরকারি হাসপাতালটি পৌর এলাকায়। হাসপাতালটির আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে নামসর্বস্ব প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আবার ওইসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিয়োগকৃত দালালরা সরকারি হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করে প্রাইভেট ক্লিনিকের ভিজিটিং কার্ড বিতরণরও করে থাকে। ক্লিনিকের দালালদের প্ররোচনায় নিঃস্ব হচ্ছে রোগী ও স্বজনরা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সরকারি হাসপাতালের সামনে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত ক্লিনিক মালিকদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে এদের বিরুদ্ধে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নেয় না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উপজেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষের সেবার জন্যে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটি ৩১ শয্যার হলেও পরবর্তীতে বর্তমান সরকার আরো একটি আধুনিক ভবন দেয়ায় এটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে জরুরি বিভাগ ছাড়াও গাইনী-প্রসূতি, শিশু, মেডিসিন, সার্জারী, ডায়রিয়া, রেডিওলজি ও প্যাথলজি বিভাগসহ অস্ত্রোপচার কক্ষ রয়েছে হাসপাতালটিতে। অভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা হাসপাতালটিতে অস্ত্রোপাচারের সুনাম রয়েছে। এতো কিছু থাকার পরও দালাল ও ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের উৎপাতে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না রোগীরা। হাসপাতালকে ঘিরে এক ডজনেরও বেশি দালাল সক্রিয়। এসব দালাল চক্রের পাশাপাশি ফার্মেসীর মালিকরাও এ কাজে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কমিশন ভিত্তিক কাজ করা এসব দালাল চক্রের হোতারা উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে অসচেতন-নিরীহ রোগীদের বাগিয়ে ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে ভর্তি ফি হতে শুরু করে রোগ নির্ণয়ের জন্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ফি থেকে কমিশন পান দালালরা। তবে এসব প্রাইভেট ক্লিনিকের কমিশন কিছু লোভী ডাক্তাররাও পান বলে নিশ্চিত করেছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা।
উপজেলার গাজীপুর এলাকা থেকে সেবা নিতে আসা প্রবাসী আবুল কালাম, পৌর এলাকার তসলিম আহমেদ ও ৭নং পাইকপাড়া থেকে সেবা নিতে আসা কেএম হাসান বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হলে ডাক্তাররা রহস্যজনক কারণে প্রাইভেট ক্লিনিকে যাওয়ার জন্যে ইঙ্গিত করেন। এছাড়া হাসপাতালের ভেতর থেকে প্রাইভেট ক্লিনিকের ভিজিটিং কার্ড বিতরণ করে বলা হচ্ছে ভালো চিকিৎসা পেতে হলে প্রাইভেট ক্লিনিকে যান। এতে আপনি ভালো চিকিৎসা পাবেন, সরকারি হাসপাতালে নামে চিকিৎসা ভালো, বাস্তবে কোনো চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। এভাবেই রোগীদের সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করছে দালাল চক্র।
উপজেলার ১৪নং ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের পশ্চিম পোঁয়া গ্রাম থেকে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী জানান, শুনেছি সরকারি হাসপাতাল উন্নত হয়েছে, তাই চিকিৎসা নিতে আসছি। কিন্তু হাসপাতালের সামনে আসলে একজন মহিলা প্রাইভেট ক্লিনিকে যাওয়ার জন্যে বলেন। তার কথায় আমরা রাজি না হলে ওই মহিলা বলে ‘ভালো কথা কইছি ভালো লাগে না, সরকারি হাসপাতালে সেবার নামে কী হয় আমরা মনে হয় জানি না’। এভাবেই সরকারি হাসপাতালের রোগীদের সেবা থেকে বঞ্চিত করে ওই সব দালাল।
এছাড়াও এ সরকারি হাসপাতালে সরকারের রুটিন অনুযায়ী কর্তব্য পালন না করে কয়েকজন চিকিৎসক প্রাইভেট ক্লিনিকে ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত ভিজিট নিয়ে আন্তরিকতার সাথে রোগী দেখছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফ আহমেদ চৌধুরী জানান, দালালদের বিষয়টি ইতিমধ্যে আমাদের নজরে এসেছে। আমরা প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোকে চিঠি দিয়েছি, এসব বন্ধ করার জন্যে। বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর দালালরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে দালালদের দৌরাত্ম্য নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাসলিমুননেছা চাঁদপুর কণ্ঠের এই প্রতিনিধিকে জানান, সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা থেকে রোগীদের বঞ্চিতকারী দালালদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।