প্রকাশ : ১৫ মে ২০২২, ০০:০০
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল মিন্টু বলেছেন, আপনি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় পেছন দিয়ে আসেন নাই, আপনি জানালা ভেঙ্গে ক্ষমতায় এসেছেন। বড় বড় প্রজেক্টের নামে লুটপাট দুর্নীতি করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। দলীয় নেতাণ্ডকর্মীদের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছেন। জনকল্যাণমূলক যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে নিজেদের করায়ত্ত করে সেগুলো ধ্বংস করে দিয়েছেন। আমাদের দেশকে তাঁবেদারি রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন।
তিনি বলেন, শুধু দেশনেত্রীর মুক্তি ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রমহানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্যে আন্দোলন নয়, আন্দোলন করতে হবে দেশের বিচার ব্যবস্থা ও সর্বস্তরের পরিবেশসহ সকল শ্রেণির মানুষের উন্নয়নের জন্যে। এই অবৈধ সরকারের কাছ থেকে দেশের মানুষের মুক্তি ও গণতন্ত্র উদ্ধার করতে হলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
দেশব্যাপী আওয়ামী সন্ত্রাস, নেতৃবৃন্দের উপর হামলা ও নৈরাজ্য এবং দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল ১৪ মে শনিবার বিকেলে চাঁদপুর জেলা বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা বিএনপি কার্যালয় সম্মুখে খোলা ট্রাকের উপর মঞ্চ বানিয়ে বিশাল এ বিক্ষোভ সমাবেশে আঃ আউয়াল মিন্টু আরো বলেন, আপনারা কিছুদিন আগে শুনেছেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সবাই আমাদেরকে ক্ষমতা থেকে নামাতে চায়। কিন্তু আমাদের অপরাধটা কী?
আজকের এই সমাবেশ থেকে আমরা বলতে চাই এই সরকারের অপরাধ সীমাহীন। তার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার) প্রথম অপরাধ বাংলাদেশে ভোট ডাকাতি করা, দিনের ভোট রাতে করা। অতএব আপনি একজন অবৈধ সরকার এবং ভোট ডাকাত। আপনার শাসনামলে এ পর্যন্ত হাজার হাজার লোক খুন এবং গুম হয়েছে। আমরা মনে করি এটা আপনার অপরাধ এবং আপনার বিচার আমরা চাই।
মিন্টু বলেন, সারা বাংলাদেশ বাদ দিলাম, এই চাঁদপুর জেলাতেও আমাদের ২৩ জন কর্মী এবং নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। পাঁচ থেকে ছয় লাখ নেতাণ্ডকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে অত্যাচার-নির্যাতনে জর্জরিত করেছেন। একদিন এই অত্যাচার নির্যাতনের বিচার হবে, আপনি প্রধানমন্ত্রীও রেহাই পাবেন না। দেশের যতগুলো ব্যাংক রয়েছে সরকারের মদদপুষ্ট লোকদের দ্বারা দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে তারা লুটপাট করে ধ্বংস করে দিয়েছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি খারাপের জন্যে আপনি (শেখ হাসিনা) দায়ী, আপনি অপরাধী। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছেন। আপনি বলেছেন, ক্ষমতায় পিছন দিক দিয়ে আসেন নাই। তবে দেশের মানুষ জানে আপনি জানালা ভেঙ্গে ক্ষমতায় এসেছেন। বড় বড় প্রজেক্টের নামে লুটপাট দুর্নীতি করে দেশের অর্থনীতিতে ধ্বংস করে দিয়েছেন। সমাজ রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দুর্বৃত্তায়ন করেছেন। দেশের জনগণের টাকায় যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে করায়ত্ত করে ধ্বংস করে দিয়েছেন। দেশটাকে দুর্নীতির আখড়ায় এবং তাবেদারী রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন ।
তিনি বলেন, আমাদের নেত্রীকে অবৈধভাবে আটকে রাখার বিচার চাই। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে আসতে দিচ্ছেন না। আমরা এসবের বিচার চাই।
তিনি আরো বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে জনগণের যে কষ্ট হচ্ছে তারই প্রতিবাদে আজকের এই সমাবেশ। আমরা এই সমাবেশ থেকে বলতে চা,ই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম কমাতে হবে।
মিন্টু বলেন, গত কদিন সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের থেকে শুরু করে অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে একটা সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। কুমিল্লার দাউদকান্দিতে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের উপর হামলা ও তাঁর বাসভবনে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আক্রমণ এবং পরবর্তী সময়ে বিএনপির নেতাণ্ডকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। একই সঙ্গে কুমিল্লার চান্দিনায় এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদের গাড়িতে হামলা ও তাঁকে গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন জায়গায় নেতাদের উপর হামলা করেছে সন্ত্রাসীরা। আমরা এসবের প্রতিবাদ করছি।
চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ সলিম উল্লাহ সেলিমের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন এনডিপির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ক্বারী মোঃ আবু তাহের, বাগেরহাটের নেতা কাজী খায়রুজ্জামান ও ফরিদগঞ্জের নেতা এমএ হান্নান।
এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির নেতা মাহবুব আনোয়ার বাবলু, জসীম উদ্দীন খান বাবুল সেলিমুস সালাম, মুনীর চৌধুরী, শরীফ মুহাম্মদ ইউনুছ, এমএ শুক্কুর পাটোয়ারী, অ্যাডঃ মিজানুর রহমান, খলিলুর রহমান গাজী, ফেরদৌস আলম বাবু, পৌর বিএনপির সভাপতি আকতার হোসেন মাঝি, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ হারুনুর রশিদ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজালাল মিশন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ জাহাঙ্গীর হোসেন খান, পৌর বিএনপি'র সিনিয়র সহ-সভাপতি আফজাল হোসেন, জেলা মহিলা দলের নেত্রী অ্যডঃ কোহিনুর রশিদ, জেলা যুবদলের সভাপতি মানিকুর রহমান মানিক, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ইমান হোসেন গাজী প্রমুখ।
সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলওয়াত করেন জেলা ওলামা দলের সভাপতি মাওঃ জসিম উদ্দিন। এর আগে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাণ্ডকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হয়।
এ সময় জেলা, উপজেলা ও পৌর ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাণ্ডকর্মী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেন, নিজ এলাকায় ঈদ পুনর্মিলনী করতে এসে বিএনপির সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশারফ হোসেনের উপর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছে। আমরা শুধু এটুকু বলবো, শেখ হাসিনার কাছে বিচার চাইবো না, বিচারের দিন ঘনিয়ে আসছে। মনে রাখবেন পালানোর সুযোগ পাবেন না, জনগণ বিচার করবে।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে এই জায়গায় স্বেচ্ছাসেবক দলের সমাবেশ হয়েছিলো। সেখানে মিথ্যা মামলায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হযরত আলী, সদস্য সচিব ইব্রাহিম কাজী জুয়েল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের ইখতিয়ার উদ্দিন শিশু, খোকন মিজি, সামছুল আলম সূর্যসহ ৯ জনকে জেলে প্রেরণ করা হয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সময়ক্ষেপণ না করে আন্দোলনের কর্মসূচি দিন। আমরা আন্দোলন চাই। চাঁদপুরের পাঁচটি আসন উপহার দেবো এবং আমরা আন্দোলনও থাকবো।
উল্লেখ্য, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠতম সদস্য প্রবীণ রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ দেশব্যাপী বিএনপি নেতাণ্ডকর্মীদের উপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নগ্ন হামলা ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে চাঁদপুর জেলা বিএনপি। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এবং পুলিশি বাধা ছাড়াই এদিন বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে খুবই শান্তিপূর্ণভাবে এই সমাবেশ শেষ হয়।