প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
শুরু হলো ঈদযাত্রা ॥ দেখা যাবে মানুষের ঢল
প্রিয়জনের সাথে ঈদ উদ্যাপন করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন শহর ও নগরবাসী। ২৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঈদের ছুটি নিয়ে ঢাকা- চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা ছাড়ছে মানুষ। টানা ৯ দিনের লম্বা ছুটিতে ঈদুল ফিতর উদ্যাপন হবে এবার। গতকাল ২৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ছিল ঈদের আগে অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমাসহ অন্য কার্যালয়ের শেষ কর্ম দিবস এবং পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর। তাই দুপুরের পর কর্মস্থল থেকে ফিরে ঈদ করার জন্যে গ্রামের বাড়ি যাবার প্রস্তুতি শুরু করে মানুষ।
এদিকে ঈদের আগে ব্যাংক খোলার শেষদিন থাকায় চাঁদপুরের প্রতিটি শাখা ব্যাংকে টাকা লেনদেনের জন্যে গ্রাহকদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। সোনালী ব্যাংক পুরাণবাজার শাখা ব্যবস্থাপক মোঃ কবির হোসেন ফরাজী জানান, ঈদের আগে ব্যাংক খোলা থাকবে না। তাই ঈদের পর ৫ মে ব্যাংক খোলা। এই কারণে প্রত্যেকটা ব্যাংকে প্রচণ্ড ভিড়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুর লঞ্চঘাটে ঈদ যাত্রীদের তেমন ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি। আগের মতই লঞ্চঘাট স্বাভাবিক ছিল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোঃ শাহআলম।
তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর শুক্রবার থেকে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের ঢল নামবে। চাঁদপুর লঞ্চঘাটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্যে চাঁদপুর নদীবন্দর সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও নির্বিঘেœ যাতায়াত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠন করা হয় এই কমিটি।
বিআইডব্লিটিএ চাঁদপুরের উপ-পরিচালক একেএম কায়সারুল ইসলাম জানান, দক্ষিণ অঞ্চলে যাবার জন্য ফেনী-চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরের ট্রেন যাত্রীদের জন্য বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস থাকছে।
জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, বিআইডব্লিটিএ, বিআইডব্লিউটিসি সমন্বয়ে চাঁদপুর লঞ্চঘাট ব্যবস্থাপনায় নদীবন্দর সমন্বয় কমিটি কাজ করছে।
চাঁদপুর নৌথানার ওসি কামরুজ্জামান জানান, লঞ্চঘাটে যাত্রীদের সুবিধার্থে এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রশাসনিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আবদুর রশীদ জানান, লঞ্চঘাট সড়ক ওয়ান ওয়ে করা হয়েছে। শপথ চত্বর পুলিশ বক্সের আশপাশে কোনো গাড়ি দাঁড়াতে দিচ্ছি না। মানুষের যাতায়াত নির্বিঘœ করতে এসপি স্যারের নির্দেশে থানা ও ফাঁড়ি পুলিশের জোরদার তৎপরতা চলছে।
অপরদিকে, রেলওয়ের চাঁদপুর (বড়) স্টেশন মাস্টার সোয়াবুল সিকদার বলেন, চাঁদপুর ও দক্ষিণ অঞ্চলে ঈদ যাত্রীদের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগ দুটি স্পেশাল ট্রেন দিয়েছে। আজ শুক্রবার থেকে সিডিউল ট্রেনের পাশাপাশি স্পেশাল ট্রেন ১ ও ২ চলাচল করবে।
এখানে উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২ অথবা ৩ মে অনুষ্ঠিত হবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। রোজা ২৯টি হলে ২ মে হবে ঈদ। আর রোজা ৩০টি পূর্ণ হলে ঈদুল ফিতর হবে ৩ মে।
ঈদ এলেই মানুষ বাড়ি ফিরতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ির পানে ছুটে লাখো মানুষ। বাস, ট্রেন, লঞ্চ, বিমান যে যেভাবে পারেন ছুটে যান গ্রামে ঈদ করার জন্য।
করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় গত দুবছর মানুষ সেভাবে বাড়ি ফিরতে পারেনি। তবুও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে গ্রামে গেছেন। তবে সেই সংখ্যাটা ছিল অনেক কম।
এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনা কমে যাওয়ায় উঠে গেছে সব বিধিনিষেধ। স্বাভাবিক হয়েছে সব কার্যক্রম। তাই দুই বছর পর এবারের ঈদে গ্রামে ফেরা মানুষের ঢল নামবে আগের সেই চিরচেনা রূপে। সড়ক-মহাসড়ক থেকে শুরু করে ট্রেনে এবং নৌপথে মানুষে ঠাঁসা থাকবে। লাখো মানুষের বাড়ির ফেরার ঢলে দুর্ভোগ হতে পারে বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ঈদের আগে থেকে মানুষের ঈদযাত্রা নিরাপদ নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চাঁদপুরে নদীপথে যাত্রীদের সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়। চাঁদপুর হয়ে দক্ষিণ অঞ্চলে যাবার জন্য চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে প্রচুর যাত্রী যাতায়াত করে। এছাড়া চাঁদপুর শহরের বাবুরহাটে মতলব-পেন্নাই সড়ক দিয়ে ঢাকা থেকে দাউদকান্দি হয়ে সড়কপথে অগণিত যাত্রীর ভিড়তো আছেই। তবে আজ শুক্রবার থেকে এই সংখ্যাটা বাড়বে বলে ধারণা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।