শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

কাউন্সিলর ও বন্ধুরা পাশে দাঁড়ালেও বাবা-মা অনেক ঋণগ্রস্ত
মোঃ আবদুর রহমান গাজী ॥

চাঁদপুর পৌরসভার ১৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ আবুল হোসেন মৃধার ছেলে মোঃ হান্নান মৃধা। গত ১৩ মার্চ তার লাশ মিলে যশোর জেলার বেনাপোল থানার পাশর্^বর্তী এলাকায়। এর আগে ২ মার্চ হান্নানের খোঁজে নিখোঁজ ডায়েরি করা হয় চাঁদপুর সদর মডেল থানায়।

‘পুলিশি সাপোর্ট পাইনি বলে হান্নানের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে আমাদের। এলাকাবাসী হান্নান হত্যার বিচারের দাবিতে চাঁদপুর শহর জুড়ে বিক্ষোভ করেছিলো। আমার ছেলেকে নিয়ে এতো কিছু হলো। এক মাস হয়ে গেল। আমার ছেলে হত্যার কোনো বিচার পাইলাম না। আমার ছেলেরে কেন মারলি তোরা? কী অপরাধ ছিল আমার ছেলের?’ এভাবেই হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে হান্নানের মা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

হান্নানের লাশ দাফনের পর থেকেই এ পরিবারে দুর্ভিক্ষ লেগেছে। হান্নানের বাবা একজন স্ট্রোকের রোগী। তিনি বর্তমানে কর্মহীন। মাও বৃদ্ধ। তাদের পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তিই ছিলেন হান্নান। হান্নানের রোজগারেই চলতো সংসার। হান্নান ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে আড়াই লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত ছিলেন। কিন্তু সে এখন নেই। এ ঋণ কীভাবে শোধ করবে তার বাবা-মা। কথাগুলো জানালেন হান্নানের ভাগ্নি জামাই শরীফ বেপারী।

হান্নান হত্যার এক মাস হয়ে গেল। এ বিষয়ে হান্নানের স্ত্রী আয়েশা আক্তার লাকী জানান, আমার একমাত্র ছেলে আবু তালহা। তার ঠাণ্ডা জ্বর ও চোখ ফুলে গেছে। আমার ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে কেউই কোনো চিন্তা করছে না। এ পর্যন্ত কেউই আমার কোনো খোঁজ-খবর নিলো না। ‘আপনার স্বামী মারা গেছে আপনি কেন শ্বশুরবাড়ি যান নি’ এমন প্রশ্ন করা হলে কর্কশ কণ্ঠে আয়েশা শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের প্রতি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্বামী মারা গেছে, আমাকে একটু দেখতে দেয়া হয়নি। তারা আমার নিরাপরাধ ভাইদের পুলিশের হাতে আটক করিয়েছে। তাদেরও তো ছেলে সন্তান আছে। আজকে তাদের কী অবস্থা। তারাও তো আমার মতো ধুঁকে ধুঁকে মরছে’। আয়েশা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নারাজ। তারপরও যে কথাগুলো বললেন একবারও স্বামী হত্যার বিচার চাননি তিনি।

হান্নান নিখোঁজের পর থেকে লাশ পাওয়া এবং দাফন পর্যন্ত সজীব মৃধার দায়িত্ব পালন ছিলো উল্লেখযোগ্য। হান্নান হত্যার বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে কথা হয় হান্নানের চাচাতো ভাই এই সজীব মৃধার সাথে। তিনি জানান, আমরা চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সুজন কান্তি বড়ুয়ার সাথে যশোরে যাই। যেখান থেকে লাশ পাওয়া গেছে সেখানকার বিভিন্ন স্পট পুলিশ পর্যবেক্ষণ করে। পুলিশ কিছু সিম্পটম পেয়েছে। এদিকে শ্বশুরবাড়ির লোকদের আচার-আচরণে সন্দেহ তাদের দিকে।

হান্নানের দুই শ্যালক শাওন ও হিরাকে পুলিশ আটক করেছে। পুলিশ একটি মাইক্রোবাসের সন্ধান পেয়েছে। তবে গাড়িটির কোনো নম্বর শনাক্ত হয়নি। পুলিশ এখনও হত্যার ক্লু খুঁজছে। হান্নানের পরিবারের সাংসারিক খোঁজ-খবর জানতে চাইলে সজীব জানান, আমাদের ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অ্যাডঃ কবির হোসেন চৌধুরী রমজানের আগের দিন ৩ হাজার টাকা দিয়ে গেছেন। আবার ঈদ উপলক্ষে আরো কিছু দিবেন বলে তিনি ওই পরিবারকে আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়া হান্নানের বন্ধু ও এসএসসি ২০০০ ব্যাচণ্ডএর পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

চাঁদপুর সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও এসএসসি ২০০০ ব্যাচের বন্ধুদের সমন্বয়ক শিমুল হাসান শামনু জানান, হান্নান আমাদের ব্যাচমেট। তার পরিবার যে আড়াই লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত আছে সেটা আমার নলেজে আছে। আমরা বন্ধুরা মিলে এ বিষয়ে কিছু করার চেষ্টা করছি এবং ঈদের আগেই তাদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করবো।

‘আমার একমাত্র রোজগার করা ছেলেটি সংসারের ঘানি টানতো। কিন্তু আজ আমরা কীভাবে বাঁচবো। মরার আগে ছেলেটির মৃত্যুর সঠিক খবর জেনে গেলেও মনরে বুঝাইতে পারতাম’। এমনটি বলে হান্নানের বাবা-মা এ হত্যার বিচার চান। তারা বলেন, সমাজের বিত্তবানরা যদি আমাদের পাশে দাঁড়ান, তাহলে আমরা আমার ছেলের ঋণ পরিশোধ করতে পারবো।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সুজন কান্তি বড়ুয়া জানান, আমরা হান্নান হত্যার বিষয়টি নিয়ে মাঠে নেমেছি। তদন্তে কিছু ক্লু পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে সব কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে অচিরেই আমরা ভালো একটি খাবর দিতে পারবো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়