প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
১৯৮৩ সালে শাহরাস্তি থানা নির্বাহী কর্মকর্তা (টিএনও) হিসেবে প্রথম দায়িত্ব পালন করেন মোঃ সেকান্দর আলী মন্ডল। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ২০ জন টিএনও এবং ইউএনও শাহরাস্তি উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। শান্তি-শৃঙ্খলা ও উদারতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে শাহরাস্তি উপজেলায় অনেক সরকারি কর্মকর্তা অর্জন করে নিয়েছেন সুনাম। তারা সততাণ্ডন্যায়-নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। আজও শাহরাস্তি উপজেলার জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত তারা।
সরকারি চাকুরির সুবাদে নিজ নিজ কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু এ গ-ি থেকে বের হয়ে শাহরাস্তি উপজেলার জন্যে নিজ উদ্যোগে কিছু করে দেখানোর ইচ্ছে সবার থাকে না। আর যারাই নিজেদের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন তারাই হয়েছেন সফল। শাহরাস্তি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের সততার কথা উঠলেই মনে পড়ে যায় ২০০৫ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা আঃ ওয়াদুদের কথা। এছাড়া সততার সাথে বলিষ্ঠ ও সাহসী কর্মকর্তা হিসেবে মোয়াজ্জেম হোসাইন ও সামিউল মাসুদের নাম কখনোই ভুলে যাবে না শাহরাস্তিবাসী। সুসম্পর্ক বজায় রেখে সরকারি কাজ কীভাবে আদায় করে নিতে হয় তা বুঝিয়ে গেলেন এটিএম কাউসার ও হাবিব উল্লাহ মারুফ।
শাহরাস্তি উপজেলার বিগত ২০ জন নির্বাহী কর্মকর্তার কেউ কেউ নিজ পরিধি থেকে বের হয়ে জনগণের সেবায় নিয়োজিত করে শাহরাস্তিবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। প্রথম এ কাজটি শুরু করেন মোঃ মোয়াজ্জেম হোসাইন। শাহরাস্তিতে এসে তিনি অনুভব করলেন এখানে কোনো বিনোদন কেন্দ্র কিংবা পার্ক নেই। তিনি এমপি মহোদয়ের সহযোগিতায় একটি বিনোদন পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিলেন। সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে তিনি স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে থাকলেন।
পাশাপাশি ইউএনও মোয়াজ্জেম হোসাইন শাহরাস্তিতে পরিচিতি লাভ করেন খাল উদ্ধার ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করার মধ্য দিয়ে। মোয়াজ্জেম হোসাইন বদলি হওয়ার সুবাদে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন এটিএম কাউসার। স্বল্পসময়ের জন্যে তিনি শাহরাস্তিতে থাকলেও জনগণের মন জয় করে নিয়েছেন। এরপর নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন সামিউল মাসুদ। কর্মস্থলে এসেই তিনি বিনোদন পার্কের কাজে হাত দেন। বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে নিজের মতো করে গড়ে তোলেন শাহরাস্তি উপজেলার একমাত্র বিনোদন পার্ক। এতে মোয়াজ্জেম হোসাইনের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটে। এ পার্কেই উপজেলায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আসা শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা বসতো, উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার দর্শনার্থীদের আগমন ঘটতো।
চৌকস এ কর্মকর্তা সরকারের ডিজিটাল সেবাকে এগিয়ে নিতে নিজ উদ্যোগে চালু করেন ‘কল সেন্টার’। সে সময়ে ‘কল সেন্টারে’ উপজেলাবাসীর মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। এরপর শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন মোঃ হাবিব উল্লাহ মারুফ। তিনি শাহরাস্তিতে যোগদানের পর থেকেই শাহরাস্তি উপজেলার শিক্ষার্থীদের জন্যে একটি উন্নতমানের স্কুলের স্বপ্ন দেখতে লাগলেন। তিনি এলাকাবাসী, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ করে স্কুল নির্মাণের কাজে নিবেদিত হন। মাননীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের সহযোগিতায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন শাহরাস্তি বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে যুগ যুগ ধরে শাহরাস্তিবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন হাবিব উল্লাহ মারুফ।
হাবিব উল্লাহ মারুফ বিদায় নেয়ার পর নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন শিরিন আক্তার। তিনিও তাঁর দায়িত্ব পালন করে বিদায় নিয়েছেন। ১১ এপ্রিল সোমবার ২১তম নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন হুমায়ূন রশিদ অরুণ। নবাগত এ কর্মকর্তার নিকট শাহরাস্তিবাসীর আবেদন, আবার কি মোয়াজ্জেম হোসাইনের হাতেগড়া পার্ক শিশুদের কোলাহলে মুখরিত হবে? জনসাধারণের প্রবেশের গেট দুটির কি তালা খোলা হবে? প্রবেশ নিষেধ সাইনবোর্ডটি কি অপসারণ করা হবে? আবার কি বেজে উঠবে সামিউল মাসুদের কল সেন্টারের ফোন? বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল কি সভাপতির নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে? প্রাণবন্ত হবে কি উপজেলা পরিষদ চত্বর?