শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

চালের বাজারে মন্দাভাব ॥ একই পর্যায়ে নিত্যপণ্যের বাজার
বিমল চৌধুরী ॥

রোজার বাজারে প্রভাব ফেলেছে টিসিবির তেল, ডাল, চিনি ও ছোলা। চালের বাজারে দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। রোজার প্রথম থেকে শুরু করে গতকাল ১০ রোজা পর্যন্ত একইভাব পরিলক্ষিত হয়েছে নিত্যপণ্যের বাজারদরে। ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, রোজার প্রথমদিকে বাজারদর যা ছিলো, বর্তমানে তা থেকে ২/১ টাকা করে কম দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের নিত্যপণ্য। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের কথার মিল খুঁজে পাওয়া গেলেও চিনির দামের ক্ষেত্রে তার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। রোজার প্রথম দিন যে দামে চিনি বিক্রি হয়েছে, বর্তমানে তার চেয়ে ২/১ টাকা বেশি দরেই বিক্রি হচ্ছে চিনি। তবে রোজা আসলে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে জনমনে যে জল্পনা-কল্পনা ও উদ্বেগ দেখা দেয়, তা কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমনভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। দাম বৃদ্ধি না হওয়া আর বাজারে ক্রেতা সংকটের কারণ হিসেবে অনেকেই টিসিবির পণ্য বিপণনের সফলতাকে মনে করছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী রোজাকালীন অসহায় নিম্নমধ্যবিত্ত ১ কোটি পরিবারের মাঝে টিসিবির পণ্য ভর্তুকিমূল্যে দেয়ার অংশ হিসেবে চাঁদপুরেও ৫৫ টাকা দামে ২ কেজি চিনি, ৬৫ টাকা দামে ২ কেজি মসুর ডাল, ১১০ টাকা দামে ২ লিটার সয়াবিন তেল, ৫০ টাকা দামে ২ কেজি ছোলা বিক্রি করার ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়। টিসিবির এ সকল পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা পূর্বে থাকলেও এবার বিক্রির ক্ষেত্রে নেয়া হয় অভিনব পরিকল্পনা। এবার জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিয়নে ও পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকজন অনেকটা ঘরে বসেই কোনোরূপ তদবির বা ঝামেলা ছাড়া এ সকল পণ্য পেয়ে যায়। ফলে তাদেরকে আর অধিক মূল্যে এ সকল পণ্য কেনার জন্যে বাজারমুখী হতে হয়নি। এতে কিছুটা হলেও বাজারে ক্রেতাসঙ্কট দেখা দেয়। আর এ সকল পণ্যের চাহিদাও কিছুটা হ্রাস পায়।

দেখা যায়, পবিত্র মাহে রমজানে দাম বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় যারা রোজার আগে অতিরিক্ত পণ্য কিনেছেন, তারা তেমনটা লাভবান হতে পারেননি। রোজায় সুস্বাদু পেঁয়াজুসহ খাবার প্রস্তুতে যে পণ্যটি সর্বাগ্রে প্রয়োজন, যে পণ্যটি নিয়ে প্রতি বছরই হাহাকার দেখা দেয় মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে। সে পেঁয়াজ রোজার পূর্বে বিক্রি হয়েছে ৩০/৩২ টাকা, কিন্তু এখন তা পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০/২২ টাকা। যা অনেকের কাছেই অনেকটা বিস্ময়। এতো কম দামে রোজার সময় পেঁয়াজ বিক্রি অনেকটাই অকল্পনীয় বলে মনে হচ্ছে। এমনিভাবে অনেকটা কম দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে আদা, রসুন ও আলুও।

চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারের পাইকারি ক’টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, মসুর ডাল মোটা ৯০/৯২ টাকা, চিকন ভালো মানের মসুর ডাল ১১৫ টাকা, মুগডাল ৭৫ টাকা আর ভালো মানের চিকন মুগডাল ১০০ টাকা, খেসারি ডাল ৫৮ থেকে ৬২ টাকা, ছোলা ৫৮ থেকে ৬২ টাকা, সরিষার তেল ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা, সয়াবিন তেল (লুজ) কেজি ১৬৭ টাকা, পাম তেল (লুজ) কেজি ১৫৬/১৫৭ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন ৫ লিটার ৭৫০ টাকা, চিনি সাড়ে ৭৫ টাকা, আটা (লুজ) ৩১ টাকা, ময়দা (প্যাকেট ও লুজ প্রায় সমান সমান দাম) ৫০ টাকা, মুড়ি (প্রকারভেদে) চিকন ৫২, ৫৪, ৬২ টাকা আর গিগজ মুড়ি (মোটা) ১১৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে রোজার আগে যে চিড়া প্রকার ভেদে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা, তা এখন কেজিতে বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। আর লাল চিড়া বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা। লাল চিনি ৯০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। চালের বাজার অনেকটা ক্রেতাশূন্য, দাম বাড়তে পারে আশঙ্কায় অনেকেই রোজার প্রথম দিকে অধিক পরিমাণে চাল সংগ্রহ করেন। কিন্তু ধীরে ধীরে চালের বাজার কিছুটা নিম্নমুখী হওয়ায় পাইকারি বাজারে দেখা দিয়েছে হতাশা। চালের বাজার আরো নিম্নমুখী হওয়ার ভয়ে অনেকেই নতুন করে চাল ক্রয়ে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছেন। ফলে গত ১০ দিনের মাথায় চালের দাম প্রতি কেজিতে কমেছে ১/২ টাকা। পাইকারি চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, অটো চিকন চাল ৪২ টাকা, মোটা গুটি চাল ৩৯ টাকা, পাইজাম চাল ৪১ টাকা, জহুরা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা।

চাঁদপুর রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মাইনুল ইসলাম কিশোর জানান, আগামীতে চালের বাজার বাড়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ বৈশাখের মাঝামাঝি সময় নতুন ফসল ইরি ধান বাজারে আসবে, যা থেকে তৈরি হবে চিকন মিনিকেট ও বালাম চাল। এছাড়াও নতুনভাবে আমদানি হবে দিনাজপুরের নাজির ও জিরা চাল। তখন বাজার কিছুটা নিম্নমুখী হতে পারে। এছাড়া উত্তর-দক্ষিণ অঞ্চলসহ সিলেটের হাওড় অঞ্চলের ধানের আমদানি হবে। এ সকল অঞ্চলের আমদানিকৃত ধানে চাঁদপুরের অটো রাইস মিলগুলো চাঙ্গা হয়ে উঠবে।

তিনি আরো বলেন, চাঁদপুর আমদানিনির্ভর মোকাম। আমরা চাইলেও বাজার ঊর্ধ্বগতি করতে পারি না। আমদানি-রপ্তানির উপরই নির্ভর করে বাজারদর। তিনি মনে করেন, পাইকারি মহাজনরা দাম বাড়ার সাথে সম্পৃক্ত নন। দাম বাড়া-কমা অনেকটা নির্ভর করে খুচরা বিক্রেতাদের ওপর। সুষ্ঠু মনিটরিং থাকলে হয়তো খুচরা ব্যবসায়ীগণ তা করতে পারবেন না। ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাঁদপুর চেম্বার সক্রিয় রয়েছে বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

গতকাল চাঁদপুর শহরের পালবাজারে গিয়ে দেখা যায়, সব ধরনের কাঁচামালের আমদানি রয়েছে প্রচুর। রোজার সময় যে কাঁচা মরিচ, বেগুন ও শশার দাম নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিতো ক্রেতাসাধারণের মাঝে, এ বছর রোজায় এখন পর্যন্ত সে ভাব পরিলক্ষিত হয়নি। পালবাজারে লাল মিষ্টি আলু ৪০ টাকা, গোল আলু ১৮ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, টমেটো ২৫ টাকা, শশা ৪০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, কুমড়া ৩৫ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, পেঁপে ৩৫ টাকা, দুন্দুল ৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ৫০ টাকা, করোলা ৫০ টাকা, লালশাক, পুঁইশাক ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। তবে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ভ্যানে এ সকল প্রতিটি পণ্যই ৫/১০ টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া ডিম ও মাংস পূর্বের চেয়ে কিছুটা কম দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। মার্চ-এপ্রিল দুমাস নদীতে সকল ধরনের মাছ ধরা নিষেধ থাকায় মাছের দাম কিছুটা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়