প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব হারুন অর রশিদ খানের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে মসজিদণ্ডমাদ্রাসায় মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করেছে তার ভক্ত শুভাকাক্সক্ষীগণ। আলহাজ্ব হারুন অর রশিদ খান ১৯৩৪ সালের ১ নভেম্বর চাঁদপুর সদর উপজেলার তৎকালীন আশিকাটি ইউনিয়নের সফরমালী গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আলহাজ্ব সেকান্তর খান। চাঁদপুর সদরের কৃতী সন্তান হারুন অর রশিদ ২০০৩ সালের ৫ নভেম্বর (৯ রমজান) ঢাকার ইন্দিরা রোডস্থ নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।
পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে তাঁর পরিবার ও ভক্ত শুভাকাক্সক্ষীগণ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী প্রতি ৯ রমজান পালন করে আসছে। চাঁদপুর-৩ আসনের দু’দুবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ হারুন-অর-রশিদ খান ছিলেন চাঁদপুরের একজন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক। মুক্ত হস্তে দানবীর হিসেবে সর্বমহলে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি চাঁদপুর ও মতলব উপজেলায় বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, স্কুল-কলেজে শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। হারুন অর রশিদ খান সফরমালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও চেয়ারম্যান পদে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অধিষ্ঠিত থেকে এলাকার শিক্ষা বিস্তারে ও উন্নয়নে কাজ করে গেছেন।
১৯৬০ সালে সফরমালী উচ্চ বিদ্যালয় মেঘনার করাল গ্রাসে পতিত হলে তাঁর বাবা মরহুম আলহাজ্ব সেকান্তর খানের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানটি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে দায়িত্ব পালন করেন হারুন অর রশিদ খান। তাছাড়া তিনি সফরমালী বাজারের প্রতিষ্ঠাতা। উক্ত বাজারের আয়ের অংশ দুঃস্থ মানবতার সেবা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে উৎসর্গ করেছেন, যা এখন পর্যন্ত চলমান। অদ্যাবধি প্রায় শতাধিক মসজিদণ্ডমাদ্রাসা উক্ত আয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে এবং চাঁদপুর জেলার বাজারকেন্দ্রিক শত শত পরিবারের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবন-জীবিকা পরিচালনা করে আসছে।
এছাড়াও তিনি মুন্সিরহাট দারুল উলুম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, মুন্সিরহাট কলেজের আজীবন সদস্য, মতলব বোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।
হারুন অর রশিদ খানের পিতা মরহুম আলহাজ্ব মোঃ সেকান্তর খান এবং মাতা জরিনা খাতুন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি মন ছিলো। প্রথমে নারায়ণগঞ্জ তিনি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
১৯৮৮ সালে তিনি সর্বপ্রথম মতলবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা বিকাশে জরিনা বৃত্তি প্রকল্প চালু করেন। প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে তার এই ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি চাঁদপুর গণি আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন। ১৯৫২ সালে চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। ভাষা আন্দোলনেও তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিলো। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধ চলাকালীন এলাকার যুবসমাজকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্যে উৎসাহ প্রদান করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণে সার্বিক সহযোগিতা করেন। সে সময় প্রশিক্ষণ নিতে তিনি ভারত চলে যান এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সহযোগিতা করেন।
হারুন অর রশিদ খান ১৯৮২ থেকে ৮৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ঢাকার সদস্য, ১৯৭০ থেকে ৮৬ সাল পর্যন্ত হাজী মহসিন জনকল্যাণ সমিতির সভাপতি, ১৯৭৮ থেকে ৮৮ সাল পর্যন্ত ঢাকাস্থ চাঁদপুর জেলা সমিতির সহ-সভাপতি ও উপদেষ্টা ছিলেন। হারুন অর রশিদ খান পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জে তার ব্যবসা পরিচালনা করে ধীরে ধীরে জাতীয় পার্টির ব্যানারে রাজনীতিতে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৬ ও ৮৮ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচন হন। চাঁদপুরে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত হয়ে সকল স্তরের নেতাণ্ডকর্মীদের ও সাধারণ মানুষের অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। চাঁদপুর জেলায় দল-মত নির্বিশেষে তিনি ছিলেন সকলের মধ্যমণি ও সততার নিদর্শন।