প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের বাহেরচরের খামার নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েক সপ্তাহ যাবত যেসব লেখালেখি হয়েছে, সেসবকে বিভ্রান্তিমূলক, মিথ্যাচার, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু। এ বিষয়টি নিয়ে চাঁদপুরের সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তাঁর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনমনে বিভ্রান্তি নিরসনে বিস্তারিত সব তুলে ধরেন, যা হুবহু তুলে ধরা হলো।
ডাঃ টিপু বলেন, পত্র-পত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে সব তথ্য প্রচার করা হয়েছে সে ব্যাপারে আমার পক্ষ থেকে সঠিক ও প্রকৃত তথ্যগুলো তুলে ধরছি সকলের অবগতি ও প্রয়োজনে যাচাই করে দেখার জন্যে।
* খামারের জন্য ক্রয়কৃম জমির মধ্যে কোনো খাস জমি নেই :
আমরা ২০১৯ সালের মার্চ মাসে দলিল নং ৩২৫, ৩৮১, ৫৪০, দাগ নং-৪৮-এর মাধ্যমে ২৪ একর জমি এবং ৩২৮নং দলিল দাগ নং-৪৯-এর মাধ্যমে ৮.৭৫ একর জমি ক্রয় করি। জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে জমি ক্রয় করা হয়। হাইমচর সাব রেজিস্ট্রি অফিস জমির খতিয়ান ও খাজনার হালনাগাদ রসিদ পর্যালোচনা পূর্বক সমস্ত আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের নামে দলিল করে দেয়। আমরা যে জমিগুলো ক্রয় করেছি ও আমাদের নামে রেজিস্ট্রি হয়েছে, সে সকল জমির ব্যাপারে পূর্বে বা এখনো জমির মালিকগণ কোনো অভিযোগ করেন নি। জমির মালিকরা যে মূল্য চেয়েছে তা দিয়েই জমি ক্রয় করেছি।
পরবর্তীতে আমরা যখন খামারের এলাকা বৃদ্ধির জন্যে আরও জমি কেনার উদ্যোগ নেই, তখন হাইমচর ভূমি অফিস আমাদের জানায়, যে সকল জায়গা আমরা ক্রয় করতে চাই, সে সকল জায়গা নিয়ে শরিয়তপুর ও চাঁদপুর জেলার সীমানা বিরোধ আছে। সুতরাং সাময়িকভাবে সেই সকল জমি হাইমচর রেজিস্ট্রি অফিস রেজিস্ট্রি করে দিতে পারবে না। সে জন্যে আমরা পরবর্তীতে আর এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেই নি। ৪১৫নং দলিল ও ৬৮১নং দলিলে যে কথা বলা হয়েছে সেই জমিগুলোর দাগ নম্বর হলো ৫৪২, ৮১, ৮৫, ৯০; এই সকল জমির সাথে খামারের জমির কোনো সম্পর্ক নেই।
সংবাদে একদিকে বলা হচ্ছে জমিগুলো খাস, অন্যদিকে বলা হচ্ছে জমির এখনো পর্যন্ত কোনো দিয়ারা জরিপ হয় নি, যা পরস্পর বিরোধী। সত্য হলো ১৯৭৭-৭৮ সালে জরিপ কাজ সম্পাদিত হয় এবং ৬৪৫.০৮ শতাংশ জমির ম্যাপ ও চিটা প্রস্তুত করা হয়। তন্মধ্যে ৬৪১.৭৫ শতাংশ ব্যক্তি মালিকানাধীন ও ৭.৩৩ শতাংশ জমি সরকারি খাস জমি হিসেবে আখ্যায়িত হয়। জমির মালিকদের নামে পৃথকভাবে জমাবন্দি ও খাজনা ধার্য করা হয়। ১৯৮২-৮৩ সালে রিসেটেলম্যান্টের মামলা হয়। মামলাটি দীর্ঘদিন চলার পর ২০০৮ সালে পূর্ববর্তী মালিকদের নামে পৃথকভাবে জমাবন্দি ও খাজনা ধার্য করা হয়। অদ্যাবধি জমির মালিকরা নিয়মিতভাবে জমির খাজনা পরিশোধ করে আসছে।
* প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে খামারের কোনো জায়গা নেই :
হাইমচর ভূমি অফিস কিছুদিন পূর্বে আমাদের দাগের দলিলগুলো দেখতে চেয়েছিলো। আমরা আমাদের সকল দলিলপত্র দেখিয়েছি। ওনারা পর্যালোচনা করে বলেছেন, কোনো অনিয়ম নেই এবং আমাদের জমির সাথে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের কোনো সম্পর্ক নেই। বাহেরচর মৌজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে।
জমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কোনো জোর জবরদস্তির ঘটনা ঘটেনি। কারো কাছ থেকে জোর করে জমি কেনা হয়নি বা প্রভাব খাটিয়ে জমি থেকে বের করে দেয়া হয়নি। সুতরাং জুলুম করার কোনো প্রশ্নই আসে না।
বাহেরচর মৌজা একটি প্রত্যন্ত চর এলাকা। এখানে কোনো চাষাবাদও হতো না। মানুষ খুব অসহায় ছিল। জমির মৌজা মূল্য ছিল ২০০ টাকা শতাংশ। জমির মালিকগণ আমি একটি খামার করবো শুনে খুশি হয়ে জমি বিক্রি করেছেন। সংবাদে বলা হয়েছে, এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের জমির মৌজা মূল্য ৩৪০০০/- টাকা। অথচ এই সংবাদ মাধ্যমগুলোতেই জেলার কেন্দ্র থেকে ৩.৫ কিঃ মিঃ দূরে জমির মৌজা মূল্য লেখা হয়েছে ১৩০০০/- টাকা।
খামারের কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। যারা শাকসবজি আবাদ করছেন সেখানে যেন গরু-ছাগল না যায় সে জন্য বাঁশ দিয়ে বেড়া দেয়া হয়েছে। কিছুদিন পূর্বে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয় খামারটি পরিদর্শন করেছেন। নিজের হাতে ক্ষেত থেকে শাক-সবজি উত্তোলন করেছেন। নিউজগুলোতে হাঁস-মুরগী ও গরুর খামারের কথা বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে খামারে শুধু মাছ, শাক-সবজি ও ফল-মূল চাষ করা হচ্ছে।
* শিরোনামে উল্লেখিত টিপু নগরের বা বাজারের কোনো অস্তিত্ব নেই :
প্রকাশিত ওইসব নিউজে টিপু নগরের যে কথা বলা হয়েছে তা ঠিক নয়। প্রথম আলোর সাংবাদিক আমার কাছে জানতে চাইলে আমি বলেছি যে, এখানে পুনর্বাসিত কিছু অতি উৎসাহী ভাসমান লোক জায়গাটির নাম রাখতে চেয়েছিল টিপু নগর, কিন্তু আমি রাজি হইনি।
উল্লেখ্য, এই জায়গাটি ঘিরে নদী ভাঙ্গনের শিকার প্রায় ৬০টি পরিবার পুনর্বাসিত হয়েছে। সেখানে একটি স্কুল, একটি জামে মসজিদ ও একটি বাজার হয়েছে। মানুষ খামারে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। খামারটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়নি। নদী ভাংতি মানুষকে পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও দুর্গম অবহেলিত চর এলাকার উন্নয়নের কথা চিন্তা করে খামারটি করা হয়েছে। আমার ইচ্ছা আছে এখানে দুইশত নদী ভাংতি পরিবারের পুনর্বাসন করা। আল্লাহ যদি সুযোগ ও সামর্থ্য দেন তাহলে খামার এলাকায় ছোট্ট একটি রিসোর্ট করার ইচ্ছা আছে। সেখানে সুন্দর মনোরম পরিবেশে বেড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাণ্ডকর্মী এবং বয়োবৃদ্ধরা এখানে অবকাশ যাপন করতে পারবেন।
সম্পূর্ণ আইনানুগভাবে খামারের জন্য জমি ক্রয় করা সত্ত্বেও মহলবিশেষ থেকে যা করা হচ্ছে সব উদ্দেশ্যমূলক এবং পূর্ব পরিকল্পিত। জমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম বা বেআইনি কার্যক্রম ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। হয়ে থাকলে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। অন্যদিকে যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে তাদেরও শাস্তি দাবি করছি।
আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি যে, কিছু জায়গা থেকে হাইমচরের নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি অফিসকে চাপ দিয়ে অভিযোগ প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে যে, বেআইনীভাবে আমাদের জমি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। যে সাব-রেজিস্ট্রার জমি রেজিস্ট্রি করেছেন তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণের সুপারিশও করা হয়েছে। সরকারি অফিসের তথ্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে আমাকে সমাজের কাছে হেয় করার জন্যে এবং আমাকে আমার আইনগতভাবে ক্রয়কৃত জমি থেকে উচ্ছেদ করার জন্যে।
হাইমচরে জমি নিয়ে কোনো অভিযোগ বা আপত্তি না থাকা সত্ত্বেও কেনো এই কাজগুলো করা হচ্ছে ? আমি জানি না, এটা ওনারা আইনগতভাবে করতে পারেন কিনা।
চাঁদপুর শহরে বনায়নের জন্য সরকারের কাছ থেকে ১২ শতাংশ জমি লীজ নেয়া আছে। সেটির ক্ষেত্রেও চেষ্টা করা হয়েছে কোনো ত্রুটি ধরা যায় কি না। খতিয়ানের কাগজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়ার জন্য সরবরাহ করা হয়েছে। জানি না এরপরে ওনারা আরও কী কী আবিষ্কার করবেন আমাকে হেয় করার জন্যে।
* চাঁদপুরে মানবিক কাজের সাথে সম্পৃক্ততা :
করোনাকালীন সময়ে রোগীরা যখন হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছিলেন না এবং মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছিলেন, তখন ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের মাধ্যমে ৩০টি বেডে সরবরাহ করার জন্যে একটি সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়।
চাঁদপুরে আরটিপিসিআর ল্যাব ছিল না। রোগীদের করোনার স্যাম্পল পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে আট থেকে দশদিন সময় লগত। চিকিৎসা ব্যাহত যাতে না হয় সেজন্যে সে সময় নিজেদের দু’টি ফ্ল্যাটে ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে একটি আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়। প্রতি মাসে ল্যাব পরিচালনার জন্যে এক লক্ষ টাকা করে দিতে হয়।
চাঁদপুরের ছাত্র যুব সমাজকে মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা, বৃদ্ধদের সুস্থ থাকা ও দীর্ঘায়ু হওয়ার জন্যে সহযোগিতার মনোবাসনা নিয়ে চাঁদপুর শহরে একটি অত্যাধুনিক জীম করেছি।
আমি চাঁদপুরের তিনটি বিদ্যালয় ও একটি কলেজের গভর্নিংবডির সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিষ্ঠানগুলো সুনামের সাথে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়মের কোনো অভিযোগ নেই। কামরাঙ্গা কলেজে প্রতি মাসে শিক্ষকদের বেতন ২০১২ সাল থেকে আমি দিয়ে আসছি। আমি এখনও দুইবেলা চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে যা অর্জন করি তার কিছু অংশ এসব মানবিক কাজ ও শিক্ষাখাতে ব্যয় করার সুযোগ পাই। আমার ছেলে-মেয়েরা সবাই পড়ালেখা শেষ করে বিদেশে চাকুরি করছে। আমার স্ত্রী একজন ভেটেরিনারী চিকিৎসক ও পিয়ানো শিক্ষক। সুতরাং আমার চাঁদপুর থেকে নেয়ার কিছু নেই।
২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে অদ্যাবধি চাঁদপুরের আওয়ামী লীগের সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছি। গত আটটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ছিলাম। ২০১৭ সালের কাউন্সিলের পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদটি দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রতিটি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সাথে ও প্রতিটি উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সাথে আমার নিবিড় সম্পর্ক। এটা নিয়ে আামি গর্ববোধ করি।
সবাই দোয়া করবেন যেন ন্যায়ের পথে থেকে সত্যের পথে থেকে কাজ করে যেতে পারি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক।