প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
পশুখাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্য
বাজারে পশুখাদ্যের দাম বেড়েই চলছে। লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটছে গন্তব্যহীন। মানুষের আমিষের চাহিদা মেটানো পশুর খাবারের ব্যাপারে উদাসীন খামারি থেকে শুরু করে প্রশাসন। এভাবে চলতে থাকলে মাংস চলে যাবে অধিকাংশ মানুষের নাগালের বাইরে। অথবা পশু পালন ছেড়ে দিবে সাধারণ গৃহস্থ।
|আরো খবর
গ্রাম বাংলার প্রতিটি পরিবারে গরু-ছাগল পালন করা হাজার বছরের সংস্কৃতি। খাবারের অধিক মূল্যের কারণে এখন অসংখ্য পরিবার পশু পালন ছেড়ে দিয়েছে। কারণ খাদ্যের দাম এবং পশু পালনের খরচের সাথে দুধ উৎপাদন অথবা পশুর মূল্যের মিল থাকে না।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার এমন কোনো বাড়ি নেই, যে বাড়িতে একটা-দুটা অথবা তার অধিক গরু এবং ছাগল নেই। কিন্তু এই গরু-ছাগল পালনে বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে খাদ্যের দাম। খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে পশু পালনকারীরা। এক সময় গরু-ছাগল পালন লাভজনক ছিল। এখন গরু-ছাগল পালন করলে আর আগের মতো লাভ হচ্ছে না। গরুর প্রধান প্রধান খাদ্য হচ্ছে খড় আর ঘাস। এক সময় এ অঞ্চলে এক ফসলি চাষ হতো। এছাড়ও প্রচুর পতিত জমি ছিলো। সেখানে প্রচুর ঘাস হতো। বর্তমানে তেমন কোনো পতিত জমি নেই। তাছাড়া দুই থেকে তিন ফসলি চাষ হচ্ছে। অনেক কৃষি জমি কেটে চর বানিয়ে মাছ চাষ করায় ঘাস এবং খড় দুটিরই সংকট। বিকল্প ঘাস চাষ পদ্ধতি থাকলেও কৃষি এবং প্রাণিসম্পদ অফিসের তেমন ভূমিকা না থাকায় কৃষক/চাষীরা সেদিকে যাচ্ছে না বা সে বিষয়ে কিছুই জানে না। দিন দিন কৃষি জমি কমে যাওয়াতে খড়ের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই তার দামও আকাশচুম্বি। এই দুই সংকটের কারণে এখন আর পারিবারিকভাবে পশু পালন তেমন একটা দেখা যায় না।
পারিবারিকভাবে পশু পালন কমে গেলেও বেশ কিছু শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত যুবক গরু-ছাগলের খামার গড়ে তুলেছে। আবার সরকারিভাবে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল পালনে উৎসাহ দিলেও পশুখাদ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকেই পশু পালনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি গমের ভুসির দাম ৪৫ টাকা, ছোলার ভুসির দাম ৬০-৬৫ টাকা হওয়ায় উপজেলায় তার তেমন একটা চাহিদা নেই। অ্যাংকর ভুসি ৪৭ টাকা, মসুর ভুসি ৪০ টাকা, খুদ ৩৫ টাকা, ধানের কুড়া ১৫ টাকা, খৈল ৪৫ টাকা, ফিড ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক বছর আগেও এক কেজি গমের ভুসির দাম ২৮ টাকা, অ্যাংকর ভুসি ৩০ টাকা, মসুর ভুসি ২৫ টাকা, খুদ ১৮ টাকা, ধানের কুড়া ৫ টাকা, খৈল ৩০ টাকা, ফিড ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিলো।
প্রায় প্রতিটি খাবারের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকার মতো বেড়েছে। খাবারের এই বাড়তি খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন গরু-ছাগল পালনকারীরা।
বর্তমানে বাজারে গম আর মটরের চেয়ে দাম বেশি গরুর খাদ্য ভুসির। প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে এসব গো-খাদ্যের দাম। উপজেলার বড়ালী গ্রামের আব্দুল লতিফ তিনটি গরু পালন করেন। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘গরু পালন করে বেশ লাভ হচ্ছিল। কিন্তু গত এক-দুই বছর কোনো রকম টিকে আছি। বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম অধিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় তা মরার উপর খাড়ার ঘা। গরু পালন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পারিশ্রমিক বাদ দিলে লাভ হওয়া তো দূরের কথা, লোকসানের ভাগ বেশি। এ রকম অবস্থা চলতে থাকলে গরু বিক্রি করে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ভাটিরগাঁও গ্রামের আরিফুর রহমান এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘আমার খামারে ১৪টি গরু আছে।’ কিন্তু তিনি গরুর খাবারের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘গরুর প্রধান খাদ্যসহ প্রায় সব খাদ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে গরু পালন করে লোকসানে পড়তে হবে।
খামারিরা মনে করেন, স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে মনোযোগী হলে পশুখাদ্যের দাম স্বাভাবিক হতে পারতো। তারা আরো বলেন, সরকার যদি সহজ শর্তে গরু খামারিদের ও গরু পালনকারীদের ঋণ দেয় ও পশুখাদ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলে অনেকেই গরু পালনে উদ্বুদ্ধ হবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, ফরিদগঞ্জে ৫৮ হাজার ২৮৫টি গরু, ২১ হাজার ১৩৫টি ছাগল ও ১২০টি ভেড়া রয়েছে।