প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:৩১
পুরাণবাজারে সুশীল সমাজ ও সর্বদলীয় নাগরিকদের উপস্থিতিতে স্মরণ সভায় বক্তাগণ
নাগরিক অধিকার আদায়ে সোচ্চার একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন ফয়েজ আহমেদ মন্টু
নিজের আহার ও বাসজনিত ব্যস্ততাকে হেয় করে সার্বজনীন সেবা কাজে নিষ্ঠাবান হয়ে যুক্ত থাকার মানুষ আমাদের সমাজে বিরল। তেমনি একজন মানুষ ছিলেন চাঁদপুরের বাণিজ্যিক এলাকা পুরাণবাজারের সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব
|আরো খবর
চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গন, প্রগতিশীল আন্দোলন, সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ড ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে পরিচিতজন, বিশিষ্ট সংগঠক এবং ব্যবসায়ী ফয়েজ আহমেদ মন্টুর জন্যে সুশীল সমাজ ও সর্বদলীয় নাগরিকদের উপস্থিতিতে আয়োজিত স্মরণ সভায় এসব কথা বলেন বক্তাগণ। তাঁর রেখে যাওয়া প্রাণের সংগঠন চাঁদপুর পুরাণবাজার শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন পরিষদ আয়োজন করে এই স্মরণসভার।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি ২০২৫) সকালে পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে অায়োজিত এ স্মরণ সভায় বক্তারা বলেন, ফয়েজ আহমেদ মন্টু আমাদের নাগরিক অধিকার আদায়ের একজন সোচ্চার অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন। তাঁর সততা, কর্ম ও মননশীলতাকে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা স্মৃতিচারণ করলেও রেখে যাওয়া স্মৃতি শেষ করা যাবে না। চাঁদপুর তথা পুরাণবাজারের শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ব্যবসাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করলে মন্টু ভাইকে আমরা দেখতে পাই। তাঁর মৃত্যুর পর এসব রেখে যাওয়া স্মৃতি আমাদের প্রতিনিয়ত পীড়া দেয়। আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, পুরাণবাজারবাসী বহুমুখী প্রতিভাধর একজন মানুষকে হারালো। যাঁর শূন্যতা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। একজন সৎ, আদর্শবান, দক্ষ সংগঠক ও প্রতিভাবান প্রগতিশীল মানুষ হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিলো সর্বমহলে। ছাত্র জীবনে তিনি বাম ঘরানার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একজন পরিশ্রমী সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সুনাম রয়েছে তাঁর। শিক্ষানুরাগ, সংস্কৃতি, সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড, নাগরিক অধিকার আদায়ের লড়াই-সংগ্রামে মন্টু ভাই ছিলেন সক্রিয়।চাঁদপুরের নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ আন্দোলন, ট্রাকঘাট প্রথা বিলুপ্তি, পুরাণবাজার-নতুন বাজার সেতু নির্মাণ, সেতু থেকে টোল আদায় বন্ধ, পুরাণবাজারে স্থায়ী লঞ্চঘাট নির্মাণ, চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি সার্ভিসের দাবি, পুরাণবাজারে কলেজ প্রতিষ্ঠা, কমিউনিটি পুলিশিংসহ অনেক কিছুর সাথেই জড়িত ছিলেন ফয়েজ আহমদ মন্টু। তিনি সব সময় ভালো কাজের পরামর্শ দিতেন। তাই তিনি মানুষের মনের মণিকোঠায় বেঁচে থাকবেন কাল-মহাকাল।আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গন ও সমাজ সেবামূলক কর্মকাণ্ডে আমরা তাঁর মতো একজন অভিভাবককে হারিয়েছি।
স্মরণসভা কমিটির আহ্বায়ক ও চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি তমাল কুমার ঘোষের সভাপতিত্বে এবং চাঁদপুর আনন্দধ্বনি সঙ্গীত শিক্ষায়তনের সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমেদ মিন্টুর সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ মাস্টার, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, চাঁদপুর কমিটির মহাসচিব বিএম নুরুজ্জামান, স্মরণসভা উপ- কমিটির সদস্য সচিব, বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যাংকার মো. মুজিবুর রহমান, বাসদ সমন্বয়ক শাহজাহান তালুকদার, ব্যবসায়ী রমেশ চন্দ্র সাহা দুলাল, রিভারসাইড কিন্ডারগার্টেনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল কালাম সরকার, চাঁদপুর চেম্বারের পরিচালক গোপাল চন্দ্র সাহা, পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গনেশ চন্দ্র দাস, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী হোসেন, অনুপম নাট্য গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ মন্ডল, উদয়ন কচি-কাঁচার মেলার সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ দাস, বঙ্গজ সাহিত্য সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সভাপতি রোটা. নাসির খান, সংগঠক জাকির হোসেন খান শিপন, সাবেক পৌর প্যানেল চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ, বাংলাদেশ সাম্যবাদী আন্দোলন চাঁদপুরের আহ্বায়ক আজিজুর রহমান, ভাই ভাই স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান বাদল, সংস্কৃতি কর্মী স্বদেশের বিপ্লব দাস প্রমুখ। পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন প্রয়াত ফয়েজ আহমেদ মন্টুর ছোট ভাই মো. জাকারিয়া বতু।শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মো. নাজমুল হোসেন।
আলোচনা পর্ব শেষে শোক ও স্মরণবার্তা পাঠ করেন মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরতি দাস। স্মরণসভা আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে শোক ও স্মরণবার্তাটি প্রয়াত ফয়েজ আহমেদ মন্টুর বড়ো মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস পিঙ্কি, ছেলে এমদাদ আহমেদ অভি ও ছোট মেয়ে ডা. কাউসার ফেরদৌস ইন্নির হাতে তুলে দেয়া হয়।
ফয়েজ আহমেদ মন্টুর ঘনিষ্ঠজন মেম্বার সুভাস সাহা, নন্দন স্টুডিওর টিটো, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার মিতা ঘোষ, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ধ্রুব রাজ বণিকসহ সংস্কৃতি ও ক্রীড়া অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।