বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুরে রাজনৈতিক মামলায় আসামীদের আটক অভিযান অব্যাহত। যুবলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫ নেতা-কর্মী আটক
  •   ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল যুবকের
  •   চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
  •   রাজধানীতে কচুয়ার কৃতী সন্তানদের সংবর্ধনা
  •   সম্প্রীতির চমৎকার নিদর্শন আমাদের বাংলাদেশ --------------জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২১, ০০:০০

চাঁদপুর বন বিভাগে ফলদ, বনজ অনেক চারা নেই, বজ্রপাত থেকে বাঁচার তাল গাছের চারাও নেই

৩ উপজেলায় অফিসার নেই ৪ বছর

দেলোয়ার আহমেদ
চাঁদপুর বন বিভাগে ফলদ, বনজ অনেক চারা নেই, বজ্রপাত থেকে বাঁচার তাল গাছের চারাও নেই

ডিজিট্যালের এ যুগে সব সরকারি অফিস-আদালত এগিয়ে গেলেও চাঁদপুর বন বিভাগ তেমন এগিয়েছে বলা যাবে না। মুজিব জন্মশতবর্ষের নেই কোনো চিহ্ন, ছোঁয়া, নেই বঙ্গবন্ধুর ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি, নেই সাজসজ্জা বা ছবি বা লাইটিং বা লেখাজোখা। এ অফিস চত্বরে অতি সম্প্রতি গিয়ে এমনটাই দেখা গেলো। এখানে মাত্র কয়েক রকমের ফলদ ও বনজ গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে। যেসব ফলদ গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো অতীব সাধারণ। বজ্রপাত থেকে রক্ষার জন্যে নেই তাল গাছের চারা। নেই বিভিন্ন জাতের আম, বরই, লিচু, কাজী পেয়ারা, নারিকেল, জলপাই, আমড়া, জামবুরা, কামরাঙ্গা, ডেউয়া, বেতুইন, নুইন্বা, কাউ, লইসহ আরও কিছু গাছের চারা, যেসব ফল সম্পর্কে আগামী প্রজন্ম অজ্ঞই থেকে যাবে। এখানে আছে কাঁঠাল, ডালিম, কালোজাম, লেবু ও লটকন গাছের চারা। শুকনো মওসুমে পেঁপে গাছের চারা পাওয়া যায়। এখানে বনজ গাছের চারাও কম পাওয়া যায়। আছে কেবল অর্জুন, আকাশমণি, বেলজিয়াম ও মেহগনি। আছে কিছু ওষধি গাছ নিম, বয়রা ও হরিতকির চারা। এর মধ্যে আকাশমণির চারা মোটামুটি বেশি বিক্রি হয় বলে জানান অফিস স্টাফ আহমদ উল্লাহ পাটোয়ারী ও ফিল্ড স্টাফ হুমায়ুন কবীর পাটোয়ারী।

নাই রেইনট্রি, শিশু, সেগুন, চাম্বলসহ আরও মূল্যবান বনজ গাছের চারা। এখানে কোনো ফুল গাছের চারা পাওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না। বজ্রপাত রোধে তাল গাছের চারা-নার্সারির কোনো সরকারি আদেশ বা বরাদ্দ পাইনি বলে জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ তাজুল ইসলাম।

জনগণের চাহিদানুযায়ী কাক্সিক্ষত চারা নেই বিধায় অফিস আঙ্গিনায় ঢুকে অনেককে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে দেখা যায়। কথা বললে, অনেকে এ কথা জানান।

এখানে প্রতিটি চারা গাছের সরকারি মূল্য ৯ টাকা। মাসে গড় বিক্রি ২০ হাজার টাকা। কখনো ৩০ হাজার টাকা হয় বিশেষ মওসুমে-বিশেষ করে জুন, জুলাই, আগস্ট মাসে। এ সময় মানুষজন বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করে থাকে বলে জানান বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এলাকার আবদুল্লাহ (৩০) ও আঃ খালেক (৬০)সহ অন্যরা জানান, এ সময় অনেক বৃক্ষপ্রেমিক ও ব্যবসায়ী অটোবাইক ভর্তি করে চারা নিয়ে যায়। অনেকে আবার সস্তায় চারা কিনে লোকদের কাছে এসব চারা বেশি দরে বিক্রি করেন।

তাজুল ইসলাম আরও জানান, এবার এ জেলার জন্যে ৭৫ হাজার চারা বরাদ্দ পেয়েছেন। এর মধ্যে সদরের জন্যে ৩০ হাজার, হাজীগঞ্জের জন্যে ২০ হাজার, শাহরাস্তির জন্যে ৮ হাজার, ফরিদগঞ্জ ও কচুয়ার জন্যে ৫ হাজার করে ১০ হাজার, মতলব দক্ষিণের জন্যে ৪ হাজার, হাইমচরের জন্যে ২ হাজার ও মতলব উত্তরের জন্যে এসেছে এক হাজার চারা। এসব বিতরণও হয়েছে। তাছাড়া শাহরাস্তিতে সামাজিক বনায়নের অংশ হিসেবে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের দু পাশে দশ মাইল পর্যন্ত মোট ১০ হাজার মেহগনি, আকাশমণি, অর্জুন ও বহেরা গাছ লাগানোর জন্যে বরাদ্দ পেয়েছেন। চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের জগতপুর থেকে মৌতাবাড়ি এলাকা পর্যন্ত এ মাসের শেষের দিকে এসব চারা রোপণ করার কথা।

জেলার অন্য আঞ্চলিক মহাসড়কের বা অন্যান্য উপজেলা লিংক সড়কের দু পাশে সামাজিক বনায়ন হবে কিনা জানতে চাইলে এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সরকারি বরাদ্দ না আসলে, আমরা কী করবো? ’

তিনি আরও জানান, জনবল সংকটে তার অফিসের কাজে ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে। এজন্যে তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত থাকেন। সারা জেলার দায়িত্ব তার ওপর। জেলা অফিসের দায়িত্ব ছাড়াও তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি ও কচুয়া উপজেলার। তিনি আরও জানান, গত প্রায় চার বছর যাবৎ এ তিন উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। ৪ বছর যাবৎ এ তিন উপজেলায় বন কর্মকর্তাদের পদায়ন না হওয়ায় তার নিজের কাজ ও উপজেলা অফিসের কাজ-কর্ম মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে।

জেলা শহরের খলিসাডুলী এলাকায় চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের ঠিক উত্তর পাশেই প্রবেশের রাস্তাসহ বিশাল জায়গা (দু একরের বেশি) নিয়ে অবস্থিত এ অফিস। মহাসড়ক থেকে এ অফিসে যাবার রাস্তাটিও এ অফিসের নিজস্ব। কিন্তু এ অফিসের প্রবেশপথে অফিসের সাইনবোর্ডটি নামকাওয়াস্তে আছে। এটা ছোট, মলিন, অনেক পুরানো হয়ে আছে। কারো চোখেও পড়ে না। অথচ সেখানে বিদ্যমান একটি মাদ্রাসার সাইনবোর্ড ঝকঝকে, সবার চোখে পড়ে। অন্যসব সরকারি অফিসের সাইনবোর্ড ডিজিটাল। রাতেও বিদ্যুতের আলোয় ঝলমল দেখা যায়, কিন্তু এখানে সেটা নেই। সরকারের কোনো স্লোগান যেমন, ‘বেশি করে গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’ চোখে পড়ে না। ‘বঙ্গবন্ধু নিজে গাছ রোপণ করছেন’ এমন ছবিও নেই পুরো আঙ্গিনার কোথাও। বঙ্গবন্ধুর কোনো বাণীও লেখা নেই অফিস আঙ্গিনায় বা বেষ্টনী প্রাচীরে। শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিও নাই। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বীকার করে বললেন, ‘আমাদের অফিসটাতো একটু ভিতরে’। তিনি অবশ্য বলেন, ‘হ্যাঁ, এগুলো করবো’।

অফিস বাউন্ডারির ভেতরে অনেক জায়গা অব্যবহৃত ও ফাঁকা পড়ে আছে। ঘন জঙ্গলে ভরে গেছে। ভেতরে দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ পড়ে আছে পুরানো একটি হাজামজা ছোট পুকুর। যার পানি ব্যবহারের অযোগ্য। বিশ্রী দুর্গন্ধ ও রোগ ছড়াচ্ছে। দেখা গেছে, বৃক্ষপ্রেমিকগণ এখান থেকে হতাশ হয়ে ফিরে গিয়ে ফলদ ও বনজ গাছের চারা কিনছেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত নার্সারিগুলো থেকে।

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত অফিসার মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো সরকারি নিয়মের বাইরে যেতে পারি না’। পক্ষান্তরে চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী কৃষি অফিসার নরেশ চন্দ্র দাস ও আঃ মান্নান জানান, ‘গতবার ও তার আগেরবার বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাবার জন্যে আমরা কৃষকদের তালগাছ রোপণের জন্যে উদ্বুদ্ধ করছি। তালের বীজও রোপণের ব্যবস্থা করেছি জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। এ ব্যাপারে লোকদের উদ্বুদ্ধ করছি। এবার জেলায় এ কর্মসূচি এখনো শুরু হয়নি’।

জেলা শহরের এখানে সেখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা নার্সারিগুলোতে মানুষের ভিড় লেগেই আছে। জেলা পুলিশ লাইন্স-এর পাশেই নার্সারিতে আছে শতশত হরেক রকমের ফুল, ফল ও বনজ গাছ। মহাসড়কের পাশে বিধায় সারাক্ষণ আছে ছোট-বড় বৃক্ষপ্রেমিকদের আনাগোনা। শহরের ডিসি অফিসের আশপাশে, ওয়্যারল্যাস মোড়, প্রেসক্লাব সড়ক ও ঈদগাহ ময়দানের কাছেও নার্সারিতে জমজমাট বেচা-বিক্রি চলছে। জেলা ও উপজেলার আনাচে-কানাচে আছে আরো অনেক নার্সারি। ভ্যানগাড়িতে করে অনেক লোক ফুল ও বিভিন্ন ফল গাছের চারা পাড়া-মহল্লায় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বন বিভাগে ফলদ, বনজ ও ওষধিসহ সব রকমের চারার ব্যবস্থা রাখার আবেদন জানান সচেতন মহল।

সূত্র : ইউএনবি, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়