শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪  |   ৩১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০৬

চাঁদপুর স্টেডিয়ামে নিয়মিত খেলাধুলা চান খেলোয়াড়রা

চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম
চাঁদপুর স্টেডিয়ামে নিয়মিত খেলাধুলা চান খেলোয়াড়রা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে এ দেশের সকল কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন করা হয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরের ক্রীড়া সংস্থাগুলোর নেতৃত্ব । বিসিবিসহ বাফুফেরও কমিটি হয়েছে নতুনভাবে। দীর্ঘদিন ধরে আঁকড়ে রাখা চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার পকেট কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে নির্বাহী আদেশে। বর্তমানে জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বে রয়েছেন চাঁদপুরের নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বেই চাঁদপুর স্টেডিয়ামে নিয়মিত খেলাধুলা চান খেলোয়াড়রা।

চাঁদপুর স্টেডিয়ামে গত ১৭ বছর ধরে বিভিন্ন ক্লাবের কয়েকজন প্রতিনিধি জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে নিজেদের মতো করে কমিটি করে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। ৪ বছর পরপর নতুন কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও পছন্দের লোকদের কাছ থেকে অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে পুতুল (সাধারণ সম্পাদক) হিসেবেই অনেক লোকদেরকে চেয়ারে বসিয়ে রেখেছিলেন। বিভিন্নভাবে ওই সমস্ত লোককে টোকেন দিয়ে আসার কারণে কখনোই নিয়মিতভাবে মাঠে খেলা চালাতে পারেননি। তবে স্টেডিয়ামের অর্থের হিসাব রাখার কাজটি ঠিকই চালিয়ে যেতেন দায়িত্বরত কেরানী।

চাঁদপুরের বেশ কয়েকজন ক্রীড়া সংগঠক এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের এ জেলাতে অনেক খেলোয়াড় রয়েছে। কিন্তু ঠিকমতো জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে খেলাধুলার আয়োজন না করার কারণে অনেক উদীয়মান খেলোয়াড় মাঠ ছেড়ে চলে গেছেন অভিমান করে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিভিন্ন উপ-কমিটিতে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা তাদের মতো করে দলকে বেছে নিয়ে খেলাধুলার কাজ চালিয়ে যেতেন। ফুটবল উপ-কমিটির দায়িত্ব যার কাছে ছিলো তার ব্যক্তিগত ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদককে চাপ প্রয়োগ করে ফুটবল কোচ ও খেলোয়াড় বাছাই করতেন। গণমাধ্যমকর্মীরা এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে চাইলে ওই সময়ের ফ্যাসিবাদী সরকারের জেলা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব থেকে ফুটবল উপ-কমিটির সেক্রেটারী নানাভাবে হুমকি দিয়ে যেতেন।

ক্রীড়া সংগঠক ও খেলোয়াড়রা আরো বলেন, ক্রিকেট উপ-কমিটির সম্পাদক হিসেবে যার ওপর দায়িত্ব ছিলো, তিনি ছিলেন তৎকালীন স্থানীয় সাংসদের আস্থাভাজন। ক্রিকেট উপ-কমিটির মিটিং হতো না ঠিকমতো তার কারণে। যখন তার ঘুম ভাঙ্গতো, তখন তিনি আসতেন ক্রিকেটের মিটিং করার জন্যে। তার জন্যে ক্রিকেট আম্পায়ার ও ক্রিকেটাররা ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতেন। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পুতুলের মতো বসে থাকতেন তার অপেক্ষায়। ক্রীড়া সংস্থাতে রাজনৈতিক প্রভাব এতোটাই ছিলো যে, বয়সে ছোট ক্রিকেট উপ-কমিটির সম্পাদককে চেয়ার ছেড়ে দিতে হতো সাবেক জেলা ক্রীড়া সংস্থার সেক্রেটারীকে। খেলাধুলা করেননি ঠিকমতো এমন লোককে বিসিবির কাউন্সিলর হিসেবে পাঠাতে হয়েছে।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট খেলাটিকে মৃত্যুর পথে নিয়ে যাচ্ছিল তৎকালীন ক্রিকেট উপ-কমিটি। ওই কমিটির কোনো সদস্য নয় খেলাধুলার সামগ্রী বিক্রি করা দোকানদার পরামর্শ দিতো ক্রিকেটের ব্যাপারে। তিনি ছাত্রলীগের সাথে জড়িত ছিলন বলেই ক্রিকেট খেলার সকল সরঞ্জম তার থেকেই নিতো হতো। ক্রিকেট খেলার দিন নির্ধারিত হলেও তার অর্ডার করা ড্রেস না আসাতে সময়মতো খেলা চালানো হয়নি। দলীয় পদ ব্যবহার করে খেলাধুলার দোকানদারকে পাঠানো হয়েছে জেলার ক্রিকেট দলের টিম ম্যানেজার হিসেবে। তাকে স্টেডিয়াম এলাকায় দেখা গেলেই সে বলতো, ভাইয়ের নির্দেশেই আমরা সকল কিছু করতেছি। তার বাড়ি ছিলো ফরিদগঞ্জ উপজেলাতে। আর এ কারণেই বড়ো ভাইয়ের দোহাই দিয়ে চাঁদপুর ক্রিকেটকে ধ্বংস করার সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

চাঁদপুর স্টেডিয়ামে নিয়মিত আসা বেশ কয়েকজন ক্রীড়ামোদী দর্শক এ প্রতিবেদককে বলেন, চাঁদপুর জেলা কার্যকরী কমিটিতে সবসময়ই কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকতেন প্রভাবশালী কর্তাব্যক্তি। যদিও ওই ব্যাক্তিটি যে ক্লাবের প্রতিনিধি ছিলেন, সেই ক্লাবের খেলাধুলায় তেমন অংশগ্রহণ ছিলো না জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রীড়া ভিত্তিক বিভিন্ন ইভেন্টে। তাকে বাদ দিয়ে নতুনভাবে যাকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ (সদ্য বিলুপ্ত) কমিটির ছিলেন, তাকে ছাড়া তো জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোনো কিছুই হতো না। তাকে প্রায়ই দেখা যেতো জেলা ক্রীড়া সংস্থার সেক্রেটারীর চেয়ারে বসে থাকতে। তিনিও যেই ক্লাবের প্রতিনিধি হিসেবে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য ছিলেন, তার ক্লাবকে কখনো আউটডোরের কোনো ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এ সমস্ত কর্তাব্যাক্তিকে ম্যানেজ করতে করতেই জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বরত সেক্রেটারী ব্যস্ত থাকতেন, খেলাধুলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা করতে পারতেন না।

জেলার ক্রীড়া সংগঠকরা আরো বলেন যে, আমরা ধারণা করছি যে, গত কয়েক বছর ধরে জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বরত ব্যক্তিদের অপকর্ম ঢাকতেই তারা ৫ আগস্ট তাদের লোকজনদেরকে দিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থাতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। আর এ আগুন লাগানোর কারণেই তাদের সকল দুর্নীতি পুড়ে গেছে। তারা এতোটাই দলীয় প্রভাব খাঁটিয়েছেন যে, তারা তৎকালীন সরকার দলের একজনের নাম করে ক্লাব বানিয়ে সেই ক্লাবকে শুধুমাত্র অনুশীলন করা এবং তাদের জন্যে রুমও দিয়েছিলেন। ৫ আগস্টের পর সেই ধ্বংসকারী (ক্রিকেট) ক্লাবের লোকজন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং তাদের কিছু লোকজন নতুন একটি ক্লাবের নাম দিয়ে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অর্থাৎ খেলার মাঠে তারা পুরানো রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করবে।

চাঁদপুর আউটার ও চাঁদপুর স্টেডিয়ামে নিয়মিত অনুশীলনকারী ফুটবল ও ক্রিকেটারসহ বিভিন্ন ইভেন্টের খেলোয়াড়রা অনুশীলন করে যাচ্ছেন। তাদের দাবি, চাঁদপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক খেলাধুলাকে অনেক ভালোবাসেন। ইতোমধ্যে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাথে জড়িত কর্মকর্তাদেরকে নিয়ে সভা করেছেন। তিনি চাঁদপুর জেলার ক্রীড়াঙ্গনকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন ক্লাবের কর্মকর্তারা ও খেলোয়াড়রা জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রধানের কাছে আশা করছেন, তার নেতৃত্বেই নতুন আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে মাঠে নিয়মিত খেলাধুলা চালিয়ে যাবেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়