মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫  |   ৩৫ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   উত্তরায় স্কুল ভবনে বিমান বিধ্বস্ত, মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
  •   উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তে নিহত ১৯, জানালো ফায়ার সার্ভিস
  •   উত্তরায় বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত
  •   চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীতে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার
  •   রোগীর চাপে বেসামাল চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল!

প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৭

এক সময় চাঁদপুরের ফুটবলে দক্ষ ডিফেন্ডার ও ক্রিকেটে চার ছক্কার মাস্টার হারু ঘোষ

স্পোর্টস রিপোর্টার
এক সময় চাঁদপুরের ফুটবলে দক্ষ ডিফেন্ডার ও ক্রিকেটে চার ছক্কার মাস্টার হারু ঘোষ

চাঁদপুরের ক্রীড়াঙ্গনে অতি পরিচিত ফুটবল ডিফেন্ডার থেকে ক্রিকেটার, তারপর দৌড়বিদ। বয়স সত্তরের কোঠার কাছাকাছি হলেও ২২ বছরের তারুণ্যের ভাব এখনো তাঁর। নাম হারু ঘোষ। দেখতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ক্যারিবিয়ান গ্রেট ভিভ রিচার্ডসের মতো। তাই ক্যারিবিয়ান গ্রেট ভিভ রিচার্ডসের প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা, ভক্তি এবং শ্রদ্ধা। এখনো ভিভ রিচার্ডসের ছবিটি তাঁর দোকানে সাঁটানো আছে। তাঁর মতে, যে কোনো কন্ডিশনে, যে কোনো উইকেটে ভিভ রিচার্ডস আমার দেখা সবচেয়ে কমপ্লিট ব্যাটসম্যান। তিনি শুধু রান করতেন না, বোলিংয়েও ধ্বংস করে দিতেন। আমার জীবনে আমি ভিভ রিচার্ডসের চেয়ে ভালো কোনো ব্যাটসম্যান দেখিনি। শচীন খুবই ভালো ব্যাটসম্যান। তাই ভিভ রিচার্ডসের সবকিছুকেই তিনি ফলো করতেন। প্রিয় ক্রিকেটারের নামের সাথে মিল রেখে হারু ঘোষ তাঁর একমাত্র পুত্র সন্তানেরও নাম রেখেছেন ভিভিয়ান ঘোষ। ছেলে তাঁর মতো খেলোয়াড় না হলেও জেলার নামকরা বিতার্কিক ও জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক সংগঠক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। বর্তমানে ঢাকাতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অফিসিয়াল জব করছেন। হারু ঘোষের স্ত্রী আদর্শবান একজন গৃহিণী। এক ছেলে, দুই মেয়ের জনক তিনি। বড়ো মেয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। ছোট মেয়ে গৃহিণী। স্ত্রী, ছেলে মেয়ের নাতিপুতি এবং নিজের পুরোনো মিষ্টির দোকান--এসব নিয়েই কেটে যাচ্ছে তাঁর সময়।

চাঁদপুর শহরের পুরাণ বাজারের নিতাইগঞ্জে হারু ঘোষের বসবাস। একসময় বেশ দাপটের সাথে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলেছেন এবং অনেক সুনাম অর্জন করেছেন। তারপরও তাঁর খেলোয়াড়ি জীবন থেমে থাকেনি। প্রতিদিন নিয়মিত শহরে দৌড়াতেন। এই দৌড় চর্চা থেকে চাঁদপুর-হাজীগঞ্জ পর্যন্ত দৌড়িয়েছেন একাধিকবার। ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীতে আয়োজন ছিলো ম্যারাথন দৌড়ের। চাঁদপুর জেলা বিএনপির নেতা জসিম উদ্দিন খান বাবুলের মাধ্যমে চাঁদপুর থেকে দুজন দৌড়বিদ ডাক পান । চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে সেই ম্যারাথন দৌড়ে হারু ঘোষ ও ডা. সুব্রত অংশ নেন এবং ঢাকা স্টেডিয়াম থেকে মিরপুর স্টেডিয়াম পর্যন্ত দৌড়ে অংশ নেন তাঁরা। হারু ঘোষ কখনো মনে করতেন না যে তাঁর বয়স বাড়ছে। পঞ্চাশের অধিক বয়স পেরুলেও তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে নিজেকে অভিজ্ঞ ক্রীড়াবিদ হিসেবে ধরে রাখেন। হঠাৎ পায়ের হাঁটুর ব্যথা অনুভব করায় বন্ধ করে দেন দৌড়। পুরো খেলোয়াড়ি জীবন থেকে সরে যান তিনি।

হারু ঘোষ জানান, স্বাধীনতার পর থেকে খেলতেন ফুটবল। তখনকার সময় ফুটবল খেলার মান ও জনপ্রিয়তা ছিলো আকাশচুম্বী। সব বয়সী মানুষ প্লেয়ার দেখলে খুব সম্মান করতো। ১৯৭৪-৭৫-এ ঢাকার মাঠে খেলার সুযোগ হয়। তবে চাঁদপুরের ফুটবলের মাঠ গরম রেখেছেন তিনি। এখানেই বছরের পর বছর জেলা লীগ ও টুর্নামেন্ট এবং বাইরের জেলা-উপজেলাগুলোতে খেপ খেলেছেন। দু-তিন জোড়া বুট ছিলো, বুট শুকানোর সময়ও পেতেন না। তৎকালীন সময় চাঁদপুরের ফুটবল কোচ

অমল দত্ত ও সিনিয়র ফুটবলার দেবুদা তাকে ‘খেপের মাস্টার’ বলতেন। চাঁদপুর মোহামেডান ক্লাবের রক্ষণভাগের নিয়মিত ফুটবলার ছিলেন তিনি।

চাঁদপুর স্টেডিয়ামে যারা চ্যাম্পিয়ন ফাইট দিতো, তাদের কোনো না কোনো দলের হয়ে হারু ঘোষের খেলা হতো। তখন স্ট্রাইকার ছিলেন মনোয়ার চৌধুরী। অনেক লম্বা প্লেয়ার ছিলেন তিনি। প্লেয়ার হিসেবে দেখতে হিসেবে খুবই মানানসই।

হারু ঘোষের রক্ষণভাগের ফুটবল খেলা এখনো অনেকের মনে আছে। মূল স্টপার ব্যাগ হিসেবে বিপক্ষ দলের স্ট্রাইকারের আক্রমণ প্রতিহত করতে হারু ঘোষের বল উড়িয়ে শর্ট নিয়ে ক্লিয়ার করাটাকে গ্যালারি শো হিসেবে দেখতো দর্শকরা। টানা ২০ বছর ফুটবল খেলেছেন। চাঁদপুর মোহামেডান, বিষ্ণুদী ক্লাব, পূর্ব শ্রীরামদী ক্লাবের হয়ে সাব ডিভিশন, জেলা ফুটবল লীগ ও কুমিল্লাতে বাংলাদেশ ইউনাইটেড দলের হয়েও খেলেছেন। এছাড়া নোয়াখালী, ফেনী, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলা, উপজেলা এবং চরাঞ্চলে আয়োজন করা অসংখ্য ফুটবলে হায়ার করা প্লেয়ার হিসেবে খেলেছেন ফুটবল। সেই সময়ে দেবুদা, ববি, ঝন্টু দা তাঁকে বেশ উৎসাহ দিতেন বলে জানান।

ফুটবল থেকে হারু ঘোষ বনে যান ক্রিকেটার। ফুটবলের জনপ্রিয়তা যখন প্রায় শূন্যের কোঠায়, তখন চারদিকে কেবল ক্রিকেটের জয়জয়কার। বাংলাদেশেও শুরু হয় তুমুল ক্রিকেট চর্চা। সে থেকে বাদ যায়নি চাঁদপুরও। এলাকার ক্লাব নিতাইগঞ্জ ক্রীড়া চক্রের হয়ে টানা আট-দশ বছর ক্রিকেট খেলেছেন হারু ঘোষ। মিডিয়াম পেস বোলার এবং দ্বিতীয় ধাপে ব্যাটসম্যান অলরাউন্ডার পজিশন ছিলো তাঁর। বোলার হিসেবে উইকেট পাওয়ার পাশাপাশি ব্যাটিং করার সময় হারু ঘোষের চোখ ধাঁধানো চার ছক্কা মারার রেকর্ড ছিলো চাঁদপুর স্টেডিয়ামে। জেলা ক্রিকেট লীগের এক ম্যাচে মোহামেডানের বিপক্ষে বোলার বিশুর বলে এক ওভারে পরপর তিনটা ছয় মেরেছেন তিনি। তাঁর ক্রিকেট খেলার সময় নিতাইগঞ্জ ক্লাব চাঁদপুর জেলা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে পরপর তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

হারু ঘোষকে তাঁর এখন বয়স কতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, বয়সের কথা জিজ্ঞাসা করবেন না। আমার বয়স ২২ বছর। খেলাধুলা ছাড়ার পরও ২০ বছর ধরে রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা দৌড়িয়ে নিজেকে একজন দক্ষ ক্রীড়াবিদের জায়গায় ধরে রেখেছি। তিনি বলেন, আমার জীবনে আমি যা দৌড়াইছি, এ দৌড়গুলা একত্রিত করলে মনে হয় আমেরিকায় যাইতে পারতাম। হারু ঘোষ ফুটবলার থেকে ক্রিকেটার এবং দৌড়বিদ। এমন দক্ষ ক্রীড়াবিদ চাঁদপুরে খুবই বিরল। তিনি চাঁদপুরের ক্রীড়াঙ্গনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়