শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫, ০১:১৫

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না হলেও উত্তাপ ছড়াচ্ছে ফরিদগঞ্জে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬

নুরুল ইসলাম ফরহাদ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হয়নি। তারপরও চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচনী উত্তাপ ছড়াচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থী এবং তাঁদের কর্মী সমর্থকরা। বহু বছর সত্যিকারের নির্বাচনী আনন্দ পায়নি উপজেলাবাসী। ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচনের অপেক্ষার ক্ষণ যেনো শেষই হচ্ছে না। ভোট যেনো সাধারণের কাছে সোনার হরিণ। ৫ আগস্টের পর নির্বাচনের আমেজেও ভিন্নতা আসছে। আগে এক ঘরে ভোটের আনন্দ থাকলেও এখন একাধিক ঘরে আনন্দ বিরাজ করছে।

প্রধান উপদেষ্টার কথা যদি ঠিক থাকে তাহলে আগামী বছরের শুরুর দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার মানে এখনো নির্বাচনের বাকি ৭ থেকে ৯ মাস। দিনের হিসেবে দীর্ঘ সময় হলেও চাঁদপুর-৪ তথা ফরিদগঞ্জ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা আরো আগে থেকেই ভোট চেয়ে মাঠ গরম করে রাখছেন।

৫ আগস্টের পর থেকেই বিএনপির প্রায় অনুষ্ঠানে নেতারা নির্বাচনী বক্তব্য রেখে আসছেন। ব্যতিক্রম ছিলো জামায়াত। তারা শুরু থেকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা না করলেও গত ২/৩ মাস ধরে জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এদিকে তারা বিএনপি থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে আছে। বিশেষ করে বিএনপির এখনো প্রার্থী নির্ধারণ না হলেও জামায়াত কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে। সে আলোকে তারা ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করছে।

অন্যদিকে উপজেলা বিএনপি বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কর্মসূচি পালন করছেন। বিশেষ করে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এমএ হান্নানের নেতৃত্বে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল কর্মসূচি পালন করছে। তিনি দীর্ঘদিন ফরিদগঞ্জ বিএনপির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। অন্যদিকে সাবেক সংসদ সদস্য, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, কেন্দ্রীয় বিএনপির ব্যাংকিং ও রাজস্ব বিষয়ক সম্পাদক লায়ন হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সাবেক নেতা-কর্মীগণ কর্মসূচি পালন করছেন। ফরিদগঞ্জে ক্লিন ইমেজের রাজনৈতিক নেতা হিসেবে খ্যাত, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোতাহার হোসেন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপি, যুবদল এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সাবেক এবং বর্তমান নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। এই তিনজনকে বলা হয়ে থাকে ফরিদগঞ্জের হেভিওয়েট প্রার্থী।

তাদের পাশাপাশি বাংলাদেশের আলোচিত কর আইনজীবী অ্যাড. আব্বাস উদ্দিন অনেকটা নীরবে বর্তমান এবং সাবেক কিছু নেতা-কর্মীকে নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আলহাজ্ব এমএ হান্নানের গ্রুপে রাজনীতি করলেও বিএনপির নমিনেশন চাইবেন বলে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতা এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শরীফ মো. ইউনুছ। এছাড়া বিএনপি থেকে সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীরা হলেন : কাজী রফিক, নাজিম উদ্দিন, লায়ন ফখরুল আহমেদ ফয়সাল, তরুণ প্রার্থী লায়ন আল আমিন ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হুমায়ুন কবির বেপারী।

ফরিদগঞ্জ উপজেলাটি মূলত বিএনপির বিপুল সমর্থক অধ্যুষিত এলাকা। বিগত তিনটি নির্বাচন ছাড়া বাকি নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে এটা প্রমাণিত হয়। বলা হয়ে থাকে 'ফরিদগঞ্জ থেকে যদি কলাগাছকেও বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে কলাগাছই পাস করবে'। যদিও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতে ইসলামী দুবার চমক দেখিয়েছে। একবার তারা বিজয়ী হয়েছে। আরেকবার বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। সে নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক ছিলো। বিশেষ করে জামায়াত দাবি করছে তাদেরকে জোর করে পরাজিত করা হয়েছে

২০২৪-এর ৫ আগস্টের আগে উপজেলা বিএনপি সদরের বাইরে টুকটাক কর্মসূচি পালন করলেও জামায়াতে ইসলামী মাঠে দাঁড়াতেই পারেনি। বর্তমানের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন আওয়ামী লীগ ছাড়া সব রাজনৈতিক দলই সভা-সমাবেশ, মিছিল, মিটিং করতে পারছে। তবে এখানে বিএনপি, জামায়াত ছাড়া অন্য দলগুলোর অবস্থান তেমন একটা নেই। যখন মাওলানা এমএ মান্নান জাতীয় পার্টির টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত তাদের কিছু জনসমর্থন ছিলো। কিন্তু বর্তমানে তাদের অবস্থা খুবই খারাপ।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী, জাতীয় পার্টির বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ সাজ্জাদ রশিদ সুমন জামানত হারিয়েছেন। এ নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ৯৫ হাজার ৮৪০টি। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মোট ভোট পেয়েছেন ৫৯০টি। তাদের প্রার্থী কে হবেন তা এখনো জানা যায়নি। জাতীয় পার্টি নিয়ে নির্বাচনী মাঠে তেমন একটা আলোচনা নেই। তাদের থেকে ইসলামী আন্দোলনের জনসমর্থন অনেক বেশি। মূলত এখানে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে লড়াই হবে।

জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হলেন মাওলানা মো. বিল্লাল হোসেন মিয়াজী। যিনি চাঁদপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীরের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরারও সদস্য।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রার্থী শাইখুল হাদিস মুকবুল হোসাইন। তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশর কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া এই দলের হাফেজ দেলোয়ার হোসেনের নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের উপদেষ্টা।

গণঅধিকার পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন জেলা কমিটির সদস্য সচিব মো. মাহমুদুল হাসান। এছাড়া প্রার্থী হিসেবে একই দলের সিএমএ গালিবের নামও শোনা যাচ্ছে। এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম এখনো শোনা যাচ্ছে না।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়