শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫  |   ৩৫ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৫, ০৬:২২

পাথর মেরে ব্যবসায়ীকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল দেশ

সিসিটিভি ফুটেজে বর্বরতা, ভাইরাল ভিডিও, গ্রেপ্তার ৪–তবুও জনমনে অশান্তি!

বিশেষ প্রতিনিধি
পাথর মেরে ব্যবসায়ীকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল দেশ
ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে (লাল চাঁদ নামে পরিচিত) পাথর ও হাতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনাটি সারাদেশে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে জনতা। ভাইরাল হওয়া ফুটেজে দেখা যায়, চারজন ব্যক্তি রাস্তার মাঝেই নির্মমভাবে তাকে পাথর ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠেছে—এই হত্যার পেছনে কারা? কেন এতটা প্রকাশ্য বর্বরতা? প্রশাসনের নীরবতায় কার স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে?

“এটি কোনো সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়—এটি একটি পরিকল্পিত নির্মূল অভিযান।”

– চাঁদপুর জেলা বিএনপি’র তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক

ঘটনার বিবরণ : ২০২৫ সালের ৯ জুলাই, বুধবার বিকেলে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের গেট–৩ এর সামনে ঘটে বিভৎস এক ঘটনা। ব্যবসায়ী মো. সোহাগ প্রতিদিনের মতো নিজের দোকানে ছিলেন। প্রতিপক্ষের কয়েকজন ব্যক্তি, যারা তামা, লোহা ও তারের ব্যবসায় আধিপত্য কায়েমের চেষ্টায় দীর্ঘদিন সোহাগকে হুমকি দিয়ে আসছিল, তার উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, চারজন ব্যক্তি রাস্তায় ফেলে পাথর, হাতুড়ি ও রড দিয়ে তার মাথা থেঁতলে দেয়। একপর্যায়ে সে নিথর হয়ে গেলে হামলাকারীরা চলে যায়। লোকজন দৌড়ে গিয়ে উদ্ধার করলেও ততক্ষণে সোহাগ নিস্তেজ। এ দৃশ্য মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

গ্রেপ্তার ও তদন্ত : ডিএমপি ও কোতোয়ালি থানার যৌথ অভিযানে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রধান অভিযুক্ত মাহমুদুল হাসান মহিন, তারেক রহমান রবিনসহ দুইজনের কাছে পাওয়া যায় অস্ত্র। রবিনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৭–৮ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। তবে স্থানীয়রা বলছেন, মহিন দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় চাঁদাবাজি করে আসছিল। প্রশাসন বিষয়টি জানলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

বিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, “আজ যদি বিচার না হয়, কাল আমরা সবাই শিকার হবো।”

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল।
  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: শতাধিক শিক্ষার্থী হাসপাতালের গেটে অবস্থান নেয়।
  • বুয়েট: ছাত্ররা নিজেরাই ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রতিবাদপত্র তৈরি করে।
  • রাজশাহী, চট্টগ্রাম, পাবিপ্রবি: একযোগে বিক্ষোভ ও দাবিসনদ পেশ।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “এই নৃশংসতা সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের অপরাধ সংস্কৃতিরই অংশ।”

মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), মানবাধিকার ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন এই হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে। তারা বলছে, “বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলতে থাকলে এরকম হত্যাই ভবিষ্যতের নিয়ম হয়ে দাঁড়াবে।”

সাংবাদিকদের অনুসন্ধান

স্থানীয় সাংবাদিকদের তদন্তে জানা গেছে, প্রধান আসামি মহিনের বিরুদ্ধে পূর্বে একাধিক মামলা থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কোনোটিই বিচারে যায়নি।

এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আবারো স্পষ্ট হলো—প্রশাসন যখন নিরব থাকে, তখন অপরাধীরা প্রকাশ্যেই খুন করতে সাহস পায়।

সাধারণ ব্যবসায়ী সোহাগের ওপর বর্বর হামলা শুধু একটি খুন নয়, এটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা ও বিচারহীনতার একটি নগ্ন প্রমাণ। এখনই যদি এই ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এমন হত্যাকাণ্ড আরও বাড়বে। সরকারকে অবিলম্বে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

– মো. জাকির হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, চাঁদপুর জেলা বিএনপি

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়