রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

কার কারণে খাল দখল সম্ভব হচ্ছে?
অনলাইন ডেস্ক

সাগরের সৈকতের মতো নদীর তীর সংলগ্ন ঢালু জায়গা থাকে, যেখানটা জোয়ারে প্লাবিত হলেও ভাটায় পানি নেমে যায়। এমন জায়গাকে ফোরশোর ল্যান্ড বলে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই ল্যান্ড দখলমুক্ত থাকে না বললেই চলে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং পানিতে ফুলে ফেঁপে উঠলে অস্বাভাবিক আচরণ করে তথা ভাঙ্গনসহ জলাবদ্ধতা ও বন্যা সৃষ্টি করে। এমন যখন নদীর অবস্থা, ধতখন খালের অবস্থা কী? খালের পাড় তো দখল করেই, মূল খালেও দখলদাররা তাদের থাবা বিস্তার করে। খালের মধ্যেই ক্ষমতাধর, প্রভাবশালীরা গড়ে তোলে স্থায়ী স্থাপনা। আর এমন দখলদারিত্ব নানা কারণে চেয়ে চেয়ে দেখে সরকারের অধিকাংশ ভূমি কর্মকর্তা-কর্মচারী। বাকিরা ব্যবস্থা নিতে চাইলেও প্রতিরোধ, নিরুৎসাহ, হয়রানি, হুমকি, বদলির সম্মুখীন হন। ফলে দখল হতে হতে নদী সঙ্কীর্ণ ও শীর্ণকায়া হয়ে যায়, আর অনেক খাল অস্তিত্ব হারায় কিংবা নালা-নর্দমা তথা ড্রেনে পরিণত হয়। এমন একটি খাল নিয়ে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ফরিদগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চাঁদপুর কণ্ঠের ব্যুরো ইনচার্জ প্রবীর চক্রবর্তী একটি সরেজমিন প্রতিবেদন পরিবেশন করেছেন। যেটি শীর্ষ সংবাদের মর্যাদা পেয়েছে।

‘দখলকৃত সেচ খাল এখন ড্রেন’ শিরোনামের সংবাদটিতে প্রবীর চক্রবর্তী লিখেছেন, বর্ষাকালে এক সময়ে এই খাল দিয়ে ছোট আকারের হলেও নৌকা চলাচল করতো। কিন্তু পর্যায়ক্রমিক দখল প্রক্রিয়ার কারণে সেই খালটিই এখন ড্রেনে পরিণত হয়েছে। সেই ড্রেন দিয়ে পানি চলাচলেও ঘটছে বিঘ্ন। আর বর্ষাকালে জলাবদ্ধতায় ড্রেনে পরিণত হওয়া খালের পানি রাস্তায় উঠে আসে। আবার শুষ্ক মৌসুমে ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে সেচকার্য চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের। শুধু তা-ই নয়, খালের মুখের উপর পাকা স্থাপনা তৈরি করে অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে খালটিকে। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পশ্চিম লাড়ুয়া ও নলডুগি গ্রামের। ইতিমধ্যে নিরবচ্ছিন্ন আবাদ করতে এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্যে স্থানীয় লোকজন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী, ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয় বিষয়টি আমলে নিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে ব্যবস্থাগ্রহণ করার নির্দেশনা দেয়।

অভিযোগে প্রকাশ, গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের রামপুর বাজারের দুশ’ গজ উত্তর-পাশের পশ্চিম লাড়ুয়া ও নলডুগি খালের ওপর পাকা ব্রিজের সরকারি রাস্তাটি ৪৭০২ দাগে এবং পাশেই ৪৭০১ দাগে সরকারি খালটি। আবার ৪৭০০ দাগে খালের ওপর পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ৪৬৮৭, ৪৬৭৮, ৪৬৭৯, ৪৬৮০, ৪৬৮১, ৪৬৮৮, ৪৬৮৯ দাগসহ আশপাশের অনেক দাগের মধ্যে থাকা খালটি এক সময়ে ১১-১২ ফুট থাকলেও বর্তমানে তা প্রায় পুরোটাই দখল হয়ে গেছে। এতে ইরি মৌসুমে সেচ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। আবার বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে দখল হতে থাকলে দুই গ্রামের সেচ কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরেজমিনে গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পশ্চিম লাড়ুয়া ও নলডুগি গ্রামে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে এবং তাদের অভিযোগে বর্ণিত স্থানে পাকা স্থাপনা নির্মাণসহ এক সময়ের ১১-১২ ফুটের খাল যে দখল হয়ে এখন সর্বোচ্চ তিন ফুটের খালে পরিণত হয়েছে, সেটি দেখে গেছে। পশ্চিম লাড়ুয়া ও নলডুগি গ্রামের সেচ ম্যানেজার আব্দুল মান্নান মুন্সি ও আমিনুল হক ভূঁইয়া জানান, এক সময়ে দু গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীর সাথে সংযুক্ত খালটি বর্তমানে ড্রেনে পরিণত হয়েছে। এই খাল দিয়ে বর্ষাকালে নৌকা চলতো। কিন্তু এখন সেচ মৌসুমে পানিশূন্যতা দেখা দেয় এবং বর্ষাকালে পানি উপচে পড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের সেচের পানি সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একই কথা জানালেন গ্রামের ইব্রাহিম বেপারী, রফিকুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, নাজমুল হোসেনসহ গ্রামের ভুক্তভোগী বেশ কিছু লোক। তাদের দাবি, জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড উদ্যোগে নিলে তিন ফসলি জমিগুলোতে যেমন আবাদ বাড়বে, তেমনি খালটি আগের রূপে ফিরলে এলাকার জলাবদ্ধতা হ্রাস পাবে। যে যার মতো করে খাল দখল করে বাড়ি-ঘর তৈরি করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। এ ব্যাপারে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ খাল দখলকারীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্যে চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের দপ্তরে দেয়া অভিযোগটির তদন্তের জন্যে ফরিদগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) ফরিদগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুন্নাহার জানান, জেলা প্রশাসকের দপ্তরের দেয়া দায়িত্ব অনুযায়ী তিনি তদন্ত করে পরে ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন।

আমাদের পর্যবেক্ষণ ও জানা মতে, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় অবৈধভাবে সরকারি-বেসরকারি জায়গা দখলের ঘটনা অন্যান্য উপজেলার চেয়ে বেশি। সেজন্যে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রায়শই দেখা যায়। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণের খবর খুব একটা পাওয়া যায় না। এখানকার ভূমি কর্মকর্তারা অধঃস্তন কর্মচারী কিংবা ক্ষমতাধর প্রভাবশালীদের কাছে জিম্মি (!) বলে অনেক ক্ষেত্রে মনে হয়। আর ব্যবস্থাগ্রহণের প্রশ্নে গণমাধ্যমে তাদের বক্তব্য হয় কৌশুলি। সে কারণে খালসহ অনেক কিছুই দখল হয় বিনা বাধায়, নির্বিবাদে। আমরা জানি না, সরকারি খাস ভূমির আওতাধীন খালগুলো সহ অন্যান্য সরকারি খাস জায়গা দখলে কঠোর বাধা দেয়ার ক্ষেত্রে এবং দখলদার উচ্ছেদের ব্যাপারে সরকারের স্থানীয় পর্যায়ের ভূমি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্থপূর্ণ নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা অবলম্বনকে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ সবসময় এড়িয়ে যান কেন? গা-সওয়া ভাব দেখান কেন? আসলে সর্ষেই কি ভূত, না অন্য কারণ?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়