রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

ব্রিজ নির্মাণ কাজ সম্পন্নের কৌশল তাঁর কাছে জানা দরকার
অনলাইন ডেস্ক

আমাদের দেশে ব্রিজ নির্মাণের কাজ টেন্ডারে উল্লেখিত সিডিউল ও প্রাক্কলিত ব্যয় মোতাবেক সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কৃতিত্ব বিরলই বলা চলে। নির্ধারিত সময়ের কয়েক মাস পরে কিংবা এক বছর পরও যদি কোনো ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে সেটি চলাচল উপযোগী করা হয় কিংবা উদ্বোধন করা হয়, তাতেও জনসন্তোষ থাকে তুঙ্গে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও যখন কোনো ব্রিজের কাজ সম্পন্ন হয় না, তখন জনমনে অসন্তোষ, বিরূপ সমালোচনা হয় প্রকট। আর কোনো ব্রিজের কাজ যদি শুরুতেই হোঁচট খায়, তাহলে জনমনে সৃষ্টি হয় হতাশা ও নানা প্রশ্ন। রোববার চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত 'শুরুতেই বন্ধ হয়ে গেছে উটতলী ব্রিজের চলমান কাজ!' শিরোনামের সংবাদটি পড়ে পাঠকমাত্রেরই মনে হয়েছে, গোড়ায় গলদ রেখে শীর্ষে ওঠার প্রয়াস কিংবা তাড়াহুড়োর কাজে আসে না সফলতা। তারপরও ব্রিজটির ক্ষেত্রে ভুলগুলো (!) কেনো করা হলো?

সংবাদটিতে প্রতিবেদক এমরান হোসেন লিটন লিখেছেন, শুরুতেই বন্ধ হয়ে গেলো বহুল প্রতীক্ষিত, আলোচিত এবং কাঙ্ক্ষিত ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জের মধ্যে সেতুবন্ধনের একমাত্র উপলক্ষ উটতলী ব্রিজের কাজ। কাজ শুরু করে মাত্র উত্তর পাশে দু-তিনটি পিলারের পাইলিংয়ের কাজ চলছিলো। কিন্তু বিভিন্ন রকম ইস্যু সৃষ্টি করে বন্ধ হয়ে গেছে এই ব্রিজের কাজ। সরেজমিনে গেলে স্থানীয়দের অনেকে বলেন, ব্রিজের কাজ কয়েকদিন চলেছিলো। কিন্তু ব্রিজ করতে স্থানীয়দের যে সম্পত্তি ব্যবহার করতে হবে তা অধিগ্রহণ না করেই কাজ শুরু করে। এমতাবস্থায় স্থানীয় সাইদুজ্জামান শিমুলসহ আরো ক’জন ক’টি মামলা দায়ের করেন। যে কারণে ব্রিজের কাজ বন্ধ আছে। অন্যদিকে আরো ক’জন বলেন, ব্রিজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কাজের ধীরগতির কারণে এলজিইডি কাজ বন্ধ করে রেখেছে। বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আউয়ালের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি সেখান থেকে চলে এসেছি। এলজিডি আমাদেরকে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে, তাই কাজ বন্ধ। নির্বাহী প্রকৌশলী এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন বলে তিনি জানান। ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবরার আহমেদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কাজের ধীরগতি এবং ঠিকাদারের কিছু অনিয়মের কারণে আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। বস্তুত তাদেরকে দিয়ে আমরা কাজ করাতে চাই না। মামলা নিষ্পত্তি হলেই আবার কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, ডাকাতিয়া নদীর দুই পাড়ের সেতুবন্ধন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে এবং দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ পথ না ঘুরে এখান দিয়ে সরাসরি যাতায়াতের সুব্যবস্থার উদ্দেশ্যে উল্লেখিত স্থানে লতিফগঞ্জ বাজার-পশ্চিম সুবিদপুর ইউনিয়ন (উটতলী) ভায়া গুহের বাজার সড়কে ডাকাতিয়া নদীর উপর ৫৫০মিটার এ সেতুর দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয়। ব্রিজের জন্যে মোট নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১০৭ কোটি টাকা। মূল সেতুর নির্মাণ কাজের জন্যে প্রাক্কলিত মূল্য ৬৩ কোটি ৪৪ লাখ ৬ হাজার ১শ’ ৯ টাকা। ১৬ অক্টোবর ২০২২ সালে কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহাম্মদ শফিকুর রহমান। সেতুর কাজ দেয়া হয় মেসার্স সুরমা এন্টারপ্রাইজ-মোহাম্মদ আমিনুল হক প্রাঃ লিঃ, ঢাকাকে। ব্রিজটির কাজ শুরু করার তারিখ ছিল ৮ জুন ২০২২ এবং কাজ সম্পাদনের তারিখ ছিল ২২ মে ২০২৪ খ্রিঃ। বাস্তবায়নে রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), চাঁদপুর।

প্রসঙ্গক্রমে অবশ্যই উল্লেখ করা দরকার যে, চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী এলজিইডির ‘ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ সেতু’টির ডাকাতিয়া নদীর উপরস্থ মূল অংশ যথাযথভাবে নির্মিত হলেও এপ্রোচ রোড সংক্রান্ত জটিলতায় পাঁচ বছরেরও অধিক সময়ে সেতুটির কাজ শেষ হয়নি। তাই দুপাড়ের দু উপজেলাবাসীর অপেক্ষার যন্ত্রণা শেষ হচ্ছে না বলে জনঅসন্তোষ বেড়েই চলছে। অপরদিকে ডাকাতিয়া নদীর ওপর হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি এলাকায় এলজিইডি ও সওজের ১০টি ব্রিজ নির্মাণে অপেক্ষার যন্ত্রণাকে প্রলম্বিত না করার কৃতিত্ব রয়েছে। এক্ষেত্রে এই দুটি বিভাগের অবদান যতোটা, তারচে' অনেক বেশি অবদান স্থানীয় এমপি মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের। সেজন্যে ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ সেতু এবং উটতলী সেতুর কাজ বিলম্বিতভাবে হলেও কীভাবে শেষ করা যায়, সে ব্যাপারে জানতে সংশ্লিষ্ট সকলে মেজর (অবঃ) রফিকের পরামর্শ নিতে তাঁর দ্বারস্থ হওয়া দরকার বলে মনে করি। স্মর্তব্য, অর্থ, সময় ও মেধার চেয়ে অভিজ্ঞতা অনেক ক্ষেত্রে অনেক কার্যকর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়