প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

ক’বছর আগে চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড় ‘শপথ চত্বরে’ একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন ঘেঁষে। এটা নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখির পরও ভবন মালিকের টনক নড়েনি। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের টনক নড়ায় তাদের হস্তক্ষেপে ভবন মালিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করেছেন। ততক্ষণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সতর্ক করার পরও আবার কোথাও কোথাও ভবন মালিকরা সতর্ক হন না। যার ফলে প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনাই ঘটে। যেমনটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার বিকেলে চাঁদপুর শহরে।
এই ঘটনায় চাঁদপুর কণ্ঠে ‘নাজিরপাড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে স্কুল ছাত্রের মৃত্যু’ শিরোনামের সংবাদে লিখা হয়েছে, চাঁদপুর শহরের নাজিরপাড়া এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে জুনায়েদ আহমেদ মজুমদার (১৫) নামে স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার ১০ অক্টোবর বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে ওই পাড়ার সুফিয়া মঞ্জিলের ছাদে খেলাধুলা করতে গিয়ে বিদ্যুতের তারে হাত দিলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। জুনায়েদ ওই বাসার ভাড়াটিয়া বিজিবির ওয়ারেন্ট অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন মজুমদারের ছেলে। তাদের গ্রামের বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার দলমগর গ্রামে। জুনায়েদ আল-আমিন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্র। প্রতিবেশী মারুফ হোসেন জানান, প্রতিদিনই ওই বাড়ির বেশ ক’জন শিক্ষার্থী ছাদে খেলতে যায়। আজও তারা খেলতে গিয়েছে। কিন্তু জুনায়েদ দুষ্টুমি করে বিদ্যুতের লাইনে হাত দিলে সেখানে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। স্বজনরা পরে তার মরদেহ বাসায় নিয়ে আসেন।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)-এর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ চাঁদপুরের সহকারী প্রকৌশলী জানান, সংবাদ পেয়ে আমাদের লোকজন গিয়েছে। যাওয়ার পূর্বে ওই স্কুলছাত্রের স্বজনরা মরদেহ ছাদ থেকে নিচে নামিয়ে নেয়। যে কারণে ঘটনার কোনো দৃশ্য আমরা দেখতে পাইনি। তিনি আরো বলেন, এই মহল্লার বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন গত এক সপ্তাহ পূর্বে নতুন করে টানানো হয়েছে। যে কারণে লাইনের তারগুলোর কভার এখনো লাগানো হয়নি। তবে মহল্লাবাসীকে আমরা পূর্ব থেকেই সতর্ক করে দিয়েছি।
সংবাদটিতে প্রদত্ত ছবিতে দেখা যায়, ভবনের ছাদ ঘেঁষেই গেছে বিদ্যুৎ লাইন, যেটি শিশুসহ সকলেরই নাগালের মধ্যে রয়েছে। এমতাবস্থায় বিউবো নূতন সরবরাহ লাইন টানিয়ে কভার না লাগিয়ে সতর্ক করলেই কী বা না করলেই কী। দুর্ঘটনা ঘটায় যে শিশু-কিশোররা তারা সেটি ঘটিয়েই ফেলে। যেমনটি ঘটিয়েছে চাঁদপুর শহরস্থ নাজিরপাড়ার জুনায়েদ নামের কিশোর। ফলে অকালে প্রাণ গেলো তার, হারিয়ে গেলো একটি সম্ভাবনা। বিউবোর যে ঠিকাদার নূতন সরবরাহ লাইন টানানোর কাজটি করেছে, তার উচিত ছিলো ভবন ঘেঁষা লাইনের তারে কভার সাথে সাথে লাগিয়ে দেয়া। কিন্তু তিনি সেটি না করায় কিংবা তাকে সেটি করতে জোর তাগিদ না দেয়ায় প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা ঘটেই গেলো।
এই দুর্ঘটনা থেকে বিউবোকে শিক্ষা নিয়ে আবাসিক এলাকায় বিদ্যুতের নূতন সরবরাহ লাইন টানাবার ক্ষেত্রে দ্রুততা ও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। অন্যথায় জুনায়েদের মতো শিশু/কিশোররা সতর্কতা না মেনে দুর্ঘটনা ঘটাবেই এবং অকালে হারাবে প্রাণ। আমরা প্রাণহানিসহ বিদ্যুৎজনিত যে কোনো প্রকার দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়টিতে অনেক বেশি যত্নবান বা সিরিয়াস হতে মনোযোগী হবার নির্দেশনা জারি করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছি।