শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:২২

‘রাঙ্গামাটির রঙে চোখ জুড়ালো’

অনলাইন ডেস্ক
‘রাঙ্গামাটির রঙে চোখ জুড়ালো’

তিন

লঞ্চে সাংস্কৃতিক পর্ব

হাছান আহমেদ বাবলু শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের একজন নিবেদিতপ্রাণ সদস্য। তিনি সাংবাদিকতা করেন সৌখিনভাবে। পেশাগতভাবে তিনি ও তাঁর স্ত্রী দুজনেই শিক্ষক। 'হাছান মাস্টার' ভোলদিঘি মাদ্রাসার এবং তাঁর স্ত্রী গুলশান আরা রত্না নিজ মেহার মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের আনন্দ ভ্রমণ ২০২৫-এ তিনি প্রকাশনার মূল দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বেশ সংস্কৃতি মনস্ক। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণকালে তিনি লঞ্চে একটি জমজমাট সাংস্কৃতিক পর্ব পরিচালনা করেন। এই পর্বে আনন্দ ভ্রমণে অংশগ্রহণকারীরা জারা ও জুঁই নামে দু সহোদরার বহুমুখী প্রতিভা লক্ষ্য করেছেন। এরা দুজন গজল, গান, আবৃত্তি ও বিতর্কে চৌকষ। তাদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা কাপ্তাই হ্রদের ভ্রমণকে বেশ রাঙিয়েছে। 'হাছান মাস্টারে'র সহধর্মিণী এই পর্বে 'রাঙ্গামাটির রঙে চোখ জুড়ালো' গানটি গেয়ে বেশ মাতিয়েছেন। তাঁকেও স্বামীর মতোই সংস্কৃতি মনস্ক মনে হলো।

জানানো দরকার, মায়েশা শেখ জুঁই ও

মেহজাবিন শেখ জারা শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সদস্য মোসাদ্দেক হোসেন জুয়েলের কন্যা। জুয়েল একজন দন্ত চিকিৎসক। তাঁর দাঁত সুন্দর। লক্ষ্য করা গেছে, তিনি তাঁর দাঁতের মতো অন্যদের দাঁতও যাতে সুন্দর থাকে সেজন্যে আনন্দ ভ্রমণকালে অংশগ্রহণকারীদের বিনা ফিতে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু পানখোর মুরুব্বি হাসানুজ্জামান ও লম্বায় সিনিয়র জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে ফি নিয়ে চিকিৎসা দিলেও তাদের দাঁত থেকে পানের রং উঠবে কিনা সেটা দেখার বিষয়।

‘লাখে ৯০০’ কাপ্তাই হ্রদে ভ্রমণকালে প্রথম যাত্রা বিরতিতে উপজাতীয়দের মার্কেটে যেতে লঞ্চ থেকে নামার সময় অনেকের কানে আসলো 'লাখে ৯০০'। জানা গেলো, যিনি এ কথাটি বলছেন তিনি বিশ্বের বৃহৎ এনজিও ব্র্যাকের একজন কর্মকর্তা। নাম তাঁর সুমি রাণী কর্মকার। তিনি শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সেক্রেটারী স্বপন কর্মকার মিঠুনের ঘরের লক্ষ্মী। নিজের আয়-রোজগারে স্বপনের নানান স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি করেন সহযোগিতা। তিনি মিশুক। পেশাগত কারণে তিনি ভাবীদেরকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে 'লাখে ৯০০' বলে বোঝাতে চেয়েছেন যে, তাঁর এনজিওতে লাখ টাকার স্থায়ী আমানতে ৯০০ টাকা লাভ পাওয়া যায়। তাঁর 'লাখে ৯০০' কথার ঢংয়ে সবাই বিনোদন পেয়েছে, ইতোমধ্যে ক'জন লাখ টাকা জমা রাখতে যোগাযোগ করেছেন সেটা মুখ্য বিষয় নয়।

মাহমুদ হাছানের মানবিকতা

কাপ্তাই হ্রদে ভ্রমণকালে লঞ্চের খাড়া সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা কম-বেশি ছিলো ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকি নিরসনে যাকে বেশি ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়, তিনি হচ্ছেন মাহমুদ হাছান। তিনি ধরে ধরে লেখক সহ অনেককে নামিয়েছেন, আবার উঠিয়েছেনও। লেখক যখন কাপ্তাই হ্রদে ভ্রমণশেষে লঞ্চ থেকে নেমে হোটেল স্কয়ার পার্কে যাচ্ছিলেন, তখন পায়ের ভারসাম্য হারিয়ে দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে যাচ্ছিলেন, এ সময় দ্রুত এগিয়ে এসে উদ্ধার করেন মাহমুদ হাছান। অথচ এক হাতে তাঁর কোলে ছিলো শিশু সন্তান। মিতভাষী মাহমুদ নীরবে কাজ করাতেই সুখ খোঁজেন কিনা জানি না, তবে দায়িত্ব যে পালন করেন সেটা বোঝা গেলো।

নাতি-নাতনিদের নিয়ে হাসানুজ্জামানের সে কী ব্যস্ততা! দেখতে ছোটো মানুষ। পাতলা গড়ন। চুল ও দাড়িগুলো কুচকুচে কালো। এই কালোর রহস্যটি রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক তাঁকে দেখামাত্রই জানতে চেয়েছেন। নাম তাঁর হাসানুজ্জামান। দেখে কারো মনেই হবে না যে তিনি একজন বয়স্ক মানুষ। শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মঈনুল ইসলাম কাজলের দু মুরুব্বি-সঙ্গী সজল পাল ও মীর হেলালের বাইরে আরেক মুরুব্বি হাসানুজ্জামান । ইতোমধ্যে তিনি দাদা ও নাতি হয়ে গেছেন। অথচ তাঁকে দেখলে অজানা কারো সেটা মনেই হবে না। কারো মনে হোক বা না হোক, তিনি কিন্তু আনন্দ ভ্রমণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সরাসরি সম্প্রচার ( লাইভ)-এর পাশাপাশি নাতি-নাতনিদের ভালোই সময় দিয়েছেন, ব্যস্ততা দেখিয়েছেন, জমিয়ে রেখেছেন পরিবেশ। তিনি লেখক ও তাঁর স্ত্রীর যুগল ছবি তুলে তাৎক্ষণিক ছড়া লিখে ফেসবুকে যে পোস্ট দিয়েছেন, সেটা উল্লেখ করে বিব্রত হতে চাই না। তাঁকে হাসিখুশি আমুদে মানুষ ও সাহিত্য রসিক বলেই মনে হলো।

ফয়েজের কথা মনে হয়েছে বারবার শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সকল কার্যক্রমে সভাপতি কাজল ও সেক্রেটারী স্বপনসহ অন্য সকলকে যিনি অনেক সহযোগিতা দিয়ে থাকেন, অনুষ্ঠান সঞ্চালনার মুখ্য দায়িত্বপালন করেন, তিনি প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্যের দায়িত্বে থাকা ফয়েজ আহমেদ। গত বছরের আনন্দ ভ্রমণকে তাঁর স্ত্রী-সন্তান অনেক মাতিয়ে রেখেছিলেন বলে শুনেছি। অথচ এবার তিনি নেই। 'কারণ কী' জানতে চাইলে সভাপতি বললেন, তাঁর মেয়ের ক্যাডেট কলেজে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত হওয়ার প্রেক্ষিতে অনিবার্য ব্যস্ততায় এবারের আনন্দ ভ্রমণে তাঁর অনিচ্ছাকৃত অনুপস্থিতি। তাঁকে লেখকসহ অনেকেই বারবার মনে করেছেন, বেশ মিস করেছেন।

বুকে কষ্ট পুষেও জসিম স্বাভাবিক

সভাপতি কাজলকে অনেকটা ছায়ার মতো অনুসরণ করেন দৈনিক ইত্তেফাকের শাহরাস্তি প্রতিনিধি জসিম উদ্দিন। তিনি আর যুগান্তরের ফয়সাল গ্রুপ ছবিতে দাঁড়ালেই হলো, তাদের ছবি মিস হয় না উচ্চতার কারণে।

ভ্রমণকালে জসিম প্রায় সময় ছবি তোলা কিংবা লাইভে ব্যস্ত থাকেন। আবার সুযোগ বুঝে পান খেতে গিয়ে সভাপতির মৃদু বকা খান। তাঁর ব্যস্ততায় তাঁর সাথে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছিলেন না লেখক। অবশেষে স্কয়ার পার্ক হোটেলের লবিতে কথা হলো তাঁর স্ত্রী নাজমুন নাহার মীম এবং দু সন্তান জোবায়ের আল নাহিয়ান ও নূরউদ্দিনের সাথে।

জানা গেলো, জসিম একজন শোকাহত পিতা। তাঁর বড়ো ছেলে খুনের শিকার হয়েছেন ক'বছর আগে। গলিত লাশ পাওয়া যায় জলাশয়ে। খুনের রহস্য উদঘাটন হয়নি এখনও, খুনিদের বিচার তো দূরের কথা।সে কষ্ট বুকে পুষেও জীবনের প্রয়োজনে জসিম থাকেন স্বাভাবিক। একটি ছেলেকে বানাচ্ছেন কোরআনে হাফেজ, ইতোমধ্যে ১৫ পারা মুখস্থ হয়েছে তার। আরেক ছেলে পড়ে স্কুলে, যার তীক্ষ্ণ নজরে ধরা পড়া একটি ভুল লেখকসহ অনেককেই করেছে বিস্মিত।

সন্তানবৎসল প্রিন্স

শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের দাতা সদস্য নুরুজ্জামান প্রিন্স, যিনি ফাহিয়া নীট কম্পোজিটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক/ মালিক। আনন্দ ভ্রমণে মাইল্ড কালারে পোলো টি-শার্টগুলোর স্পন্সর হয়েছেন। যে কালারটি দেখে আমি (লেখক) নস্টালজিক হলাম। কেননা এমন কালারের কাপড়েই জীবনে প্রথম ফুল পেন্ট বানিয়েছিলাম।সভাপতি কাজলের প্রিয়ভাজন হচ্ছেন প্রিন্স। তিনি বাস ও লঞ্চে চলাকালে বারবার কথা বলে ভ্রমণসঙ্গীদের চাঙ্গা রেখেছেন। এজন্যে তাঁকে পুরস্কৃত করা যায়। কারণ, এমন গুণ সবার থাকে না।

কথক প্রিন্স কিন্তু অনেক সন্তানবৎসল। তাঁর স্ত্রী রোকসানা আক্তার লুবনাকে স্বস্তি দিতে তিনি কোলের শিশুপুত্র আজরাপ জামান ফাহিম ও কিশোরী মেয়ে ফাহিয়া জামান অহিকে যেভাবে আগলে রাখতে দেখা গেছে, অন্য অনেককে সেভাবে সেটা করতে দেখা যায়নি। এজন্যে ঈর্ষা কিংবা রসিকতার ছলে দু-একজন তাকে 'আপনি ভাবীকে ভীষণ ভয় পান' বললেও তিনি কেবল হেসেছেন। কেননা তাঁর স্ত্রীর আচরণে ভয় পাওয়ার মতো কিছু দেখা যায়নি।

জুনিয়র কাজলের চপলতা

সভাপতি কাজলের একমাত্র পুত্র সন্তান মোহাইমিনুল। বয়স পাঁচ হবে। মেয়ে মুসকান বিনতে ইসলাম রাইফা পড়ে শাহরাস্তি বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের ৮ম শ্রেণীতে। মায়ের মতো মেয়েটা কিছুটা অন্তর্মুখী, তবে স্মিতহাস্যে প্রাণচঞ্চল। বিপরীত কাজলের ছেলেটা। ভীষণ চপল-চঞ্চল। লেখক তাকে জুনিয়র কাজলই বলেছেন। কারণ, বাবা কাজলের আচরণে যে চঞ্চলতা দেখা যায়, সেটা তার মধ্যে বেশি দেখা যায়। অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল হাতে না পেলে তার জেদের বহিঃপ্রকাশ কীভাবে ঘটে, সেটা দেখা গেছে বারবার।

মায়েরা ছেলের পক্ষে থাকবেই। মোহাইমিনুলের মা তার ব্যতিক্রম হতে যাবেন কেন? পেদা-টিং-টিং রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার ছেলের মুখে তুলে দিতে দিতে তিনি বললেন, মোহাইমিনুল এমন ছিলো না। কিছুদিন পূর্বে আমাদের বাসায় আগত এক মেহমানের শিশু সন্তানকে মোবাইল দেখে দেখে খাবার গ্রহণের বিষয়টি দেখে তারপর থেকে সেও মোবাইল দেখে দেখে খাবারের বায়না ধরে চলছে। আর যখনতখন মোবাইল হাতে পেতে চাইছে।

লক্ষ্য করা গেছে, কাজলের স্ত্রীর হাতে নিজস্ব অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল নেই। সেটা কি কাজল কিনে না দেবার কারণে, না মোবাইলজনিত ব্যস্ততা এড়াতে, সেটা আর জানা যায় নি। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়