প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৩০
১৪ রোগের বিশেষজ্ঞ সেই চিকিৎসক নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড়
চাঁদপুরের কথিত ১৪ রোগের সেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা ঝড় বইছে। সমাজ সচেতন মানুষজন ও সোস্যাল মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর যেসব কমেন্টস করেছেন, তার কয়েকটি পাঠকদের উদ্দেশ্যে হুবহু তুলে ধরা হলো :
|আরো খবর
মাসুদ আখন্দ নামে একজন লিখেছেন : সত্যি দুঃখজনক ঘটনা। হয়তো এমন ডাক্তারদের সংখ্যা আরো অনেক আছে চাঁদপুরে। কিন্তু দুর্ভাগ্য সাধারণ মানুষের, কারণ এসব বিষয়গুলো দেখার কেউ নেই। যদি কেউ থেকেই থাকে তাহলে কেন এতো অনিয়ম, আমরা কি ধরে নিবো। ধন্যবাদ চাঁদপুর কন্ঠকে।
সফিক আলী লিখেছেন : এই জানোয়ারটার কঠিন বিচার হওয়া চাই।
আশিক বিন রহীম লিখেছেন : একজন চিকিৎসক অনেক বেশি মর্যাদাবান ব্যক্তি। অথচ তার আচরণ যেন কসাইর মতো।
মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন লিখেছেন : জেলা উপজেলার প্রত্যন্ত হাসপাতলে এরকম হাজারো চিকিৎসক রয়েছে, জনসাধারণের ক্ষমতা নেই তাদের নজর দেওয়ার তারা বড় বড় নেতাদের কর দিয়ে বড় বড় ডিগ্রিধারী সার্টিফিকেট বানাচ্ছে।
রোঃ আল-আমিন লিখেছেন : আপনাদের বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। এই ডাক্তার সাহেব পর্যায়ক্রমে সবগুলো রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তো যখন যে রোগ হয়েছে, উনি ঐ রোগের চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ঐ রোগে অভিজ্ঞ হয়েছেন। এই হিসেবে আমরা সবাই মুসলমানি, জ্বর, হাচি-কাঁশি, পেট ব্যাথা বিশেষজ্ঞ ও সার্জন।
উল্লেখ্য, ৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার চাঁদপুর কণ্ঠসহ বেশ কটি অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে সেই চিকিৎসকের ব্যানার-ফ্যাস্টুন থেকে ডিগ্রির পরিচয় মুছতে শুরু করেছেন '১৪ রোগের বিশেষজ্ঞ' চিকিৎসক ডাঃ মোঃ ইফতেখার উল আলম। চাঁদপুর শহরের স্টেডিয়াম রোডে নিউ আল কারিম ডায়াগণস্টিক সেন্টারের সামনে সাঁটানো বিশাল ব্যানার থেকে তিনি ডিগ্রিগুলো রঙ দিয়ে মুছে দেন। ৮ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে এই দৃশ্য দেখা যায়। এরপর আবারও রাতের আঁধারে আরেকটি ডিগ্রি মুছে ফেলা হয়।
এর আগে বুধবার সকালে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠসহ জেলার দৈনিক পত্রিকাগুলোতে ১৪ রোগের ভুয়া ডিগ্রি বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। যা টক অব দ্যা টাউন হিসেবে রূপ পায়। একটি সূত্র থেকে জানা যায়, প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে কথিত ১৪ রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ মোঃ ইফতেখার উল আলমকে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ডাকা হয়।
প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, একজন এমবিবিএস চিকিৎসক, নাম তার ইফতেখার উল আলম। ভিজিটিং কার্ড, ব্যানার-ফেস্টুনে ব্যবহার করছেন জটিল ও কঠিন ১৪টি রোগের বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি। ভিজিটিং কার্ডে এসব বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি দেখে গ্রামাঞ্চল থেকে আসা সাধারণ রোগীরা আকৃষ্ট হয়। কিন্তু সচেতন মহলের কাছে বিষয়টি ভাবনার। ওই চিকিৎসকের দাবি, তার সকল কাগজপত্র রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁদপুরে দীর্ঘ সময় ধরে একাধিক প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখছেন ডাঃ মোঃ ইফতেখার উল আলম। তার ভিজিটিং কার্ডে মার্ক করে লেখা রয়েছে মেডিসিন, বক্ষব্যাধি, শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ, কামজ্বর, কিডনী, গ্যাস্ট্রোলিভার, পরিপাকতন্ত্র, ব্রেন, প্যারালাসিস, ডায়াবেটিস, বাতব্যথা, চর্ম-যৌন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। এই ১৪টি ডিগ্রি আদৌ ঠিক, নাকি প্রতারণা তা জানতে চাঁদপুর সিভিল সার্জন ও চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহর শরণাপন্ন হন একজন ভুক্তভোগী। এ সময় ১৪টি জটিল রোগের বিশেষজ্ঞ ডিগ্রির কথা শুনে চমকে যান খোদ জেলার স্বাস্থ্যবিভাগের শীর্ষ এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, এই নামে চাঁদপুরের কোনো চিকিৎসককে তিনি চিনেন না। একজন চিকিৎসক এত রোগের বিশেষজ্ঞ ডিগ্রিধারী হওয়াটা খুবই কঠিন বিষয়। এত ডিগ্রির বৈধ কাগজপত্র না থাকলে তিনি এগুলো ব্যবহার করতে পারেন না। তবে সত্যিই যদি তার এত ডিগ্রি থেকে থাকে তবে ভিন্ন কথা।
এ বিষয়ে ডাঃ মোঃ ইফতেখার উল আলম বলেন, ভিজিটিং কার্ডে উল্লেখিত ১৪টি বিষয়েই তার উচ্চতর ডিগ্রি রয়েছে। যার সকল সার্টিফিকেট বা কাগজপত্র সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন তিনি। অথচ ওই চিকিৎসক তার কোনো কাগজপত্র সেখানে জমা দেননি বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
বিষয়টি তদন্ত করে তার ১৪টি ডিগ্রি সঠিক কি-না তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রতারণার প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা কিংবা মফস্বল শহরগুলোতে অনেক চিকিৎসকই প্রেসক্রিপশন ও ভিজিটিং কার্ডে বিচিত্র সব ডিগ্রি লিখে থাকেন। যার মধ্যে পিজিটি, বিএইচএস, এফআরসিপি, এফআরএইচএস, এফআইসিএ, এফআইসিএস, এফএএমএস, এফআইএজিপি’র মতো বিভিন্ন ডিগ্রি ও ট্রেনিং কোর্সও রয়েছে। এসব ডিগ্রি ও কোর্সকে প্রতারণামূলক উল্লেখ করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এসব ডিগ্রি বিএমডিসি স্বীকৃত নয়।
উল্লেখ্য, চাঁদপুরে ভুয়া ডিগ্রি কিংবা ভুয়া ডাক্তার শনাক্তকরণে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার নজির নেই বললেই চলে। ফলে কে আসল বা কে নকল সেটি জানার কোনো সুযোগ না থাকায় সাধারণ রোগীরা প্রতারিত হয়ে আসছে। পাশাপাশি এমন চিকিৎসকদের কারণে চাঁদপুরের অনেক স্বনামধন্য চিকিৎসকের অর্জনগুলো ম্লান হচ্ছে।