প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
আজকাল দিনগুলো সব বিভিন্ন দিবসে নামাঙ্কিত। প্রতিটা দিনেই কোনো না কোনো দিবস উদ্যাপনের উপলক্ষ থাকে। অক্টোবরেও চিকিৎসা বিজ্ঞানজনিত দিবস উদ্যাপনের উদ্যোগ কম নয়। দশ অক্টোবরে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস এবং বারো অক্টোবরে বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস পালনের আয়োজন রয়েছে। ঊনিশশো বিরানব্বই সাল হতে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস এবং ঊনিশশো ছিয়ানব্বই সাল হতে বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস উদ্যাপনের রীতি প্রচলিত হয়েছে।
কেবল দৈহিক সুস্থতা একজন মানুষকে জীবনে সচল রাখতে পারে না। মানুষকে পূর্ণ মাত্রায় সচল রাখতে হলে মানসিক সুস্থতাও জরুরি। উদ্বেগ, অনিদ্রা, মানসিক চাপ, সাংসারিক সংকট ইত্যাদি বিবিধ উপাদান ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। আর এ কারণেই এবারের মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে, ‘কেয়ার ফর অল : লেটস মেক ইট অ্যা রিয়েলিটি’। মানসিক স্বাস্থ্যে বিচ্যুতি ঘটলে জীবন ভারসাম্য হারায়। কোভিডোত্তর ও কোভিডকালীন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরাট এক চাপ আপতিত হয়েছে। মুক্ত স্বাধীন মানুষ ঘরে থেকে কাটাতে হয়েছে বিশাল সময়। সঙ্গনিরোধের নিষেধাজ্ঞায় মানুষ ছিলো একাকী নিঃসঙ্গ এক জীবের মতো। শিশুরা যেমন অবরুদ্ধ ছিলো গৃহে, তেমনি অবরুদ্ধ ছিলো বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরা। তরুণ ও যুবকদের ওপর চাপ ছিলো অধিক। ফলে মানসিক ভারসাম্যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে অনেকের। মানসিক অসুস্থতা সাধারণত পুরুষের চেয়ে নারীদের অধিক হয়। বয়ষ্কদের মধ্যে শতকরা আঠারো ভাগ মানুষের আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হয়। আর শিশুদের শতকরা ষোল ভাগ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তৈরি হয় একই ধরনের প্রবণতা। বিষণ্নতার মতো খারাপ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে খারাপ সময় পার করেছে তরুণ-তরুণীদের অনেকেই। সিজোফ্রেনিয়া দিনকে দিন চেপে বসছে সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনগোষ্ঠীর মধ্যে। অ্যাংজাইটি নিউরোসিস, পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার, কনভারসন ডিজঅর্ডার, হিস্টিরিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, ফোবিয়া, পোস্ট নাটাল স্ট্রেসে ভুগতে থাকা মানুষদের জন্যে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষত বাংলাদেশের মতো কুসংস্কারাচ্ছন্ন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্যে এ দিবস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এখনও এদেশের গ্রামে-গঞ্জে আলগায় পাওয়া, খারাপ বাতাস লাগা কিংবা বদ নজরের ধারণা ও তাবিজ-টোনার প্রভাব প্রগাঢ়। অথচ এসব প্রতিটা ক্ষেত্রেই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে সহজেই রুগ্নতা হতে পার পাওয়া যায়। তাই ঝাড়-ফুঁক নয়, ওঝা-বৈদ্য নয়, উপযুক্ত মানসিক রোগের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াটাই বিজ্ঞানসম্মত। একাকি থাকতে চাওয়া, বাইরে বের হতে না চাওয়া, অলীক কিছু দর্শন ও ভাবনা, ঘন ঘন মুড স্যুইং হওয়া, খিটখিটে মেজাজ হওয়া ইত্যাদি সবই মানসিক রোগের লক্ষ্মণ। এমন হলেই উপযুক্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। প্রাথমিক অবস্থায় মন প্রফুল্ল রাখার ও মাথা ঠাণ্ডা রাখার ঔষধ সেবন করা যায়। কিন্তু উচ্চতর সমস্যায় বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা নিতে হয়।
মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি চলাফেরায় স্বাচ্ছন্দ্য না থাকলে জীবন অচল হয়ে পড়ে। এজন্যে চলনতন্ত্রের যত্ন নেয়া জরুরি। বার্ধক্যে চলনতন্ত্রের যে রোগটি পর্যুদস্ত করে তোলে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে বলে আথ্রাইটিস। প্রতি বছর বারো অক্টোবর বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস পালিত হয়। বহু প্রাচীনকাল থেকে এই রোগটির অস্তিত্ব থাকলেও ৪৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকেই এটি নথিভুক্ত হয় এবং সবাই জানতে শুরু করে। ১৮৫৯ সালের দিকে রোগটিকে ‘আর্থ্রাইটিস’ হিসেবে নামকরণ করা হয়। এবারের বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবসের প্রতিপাদ্য হলো, ‘It’s in your hands, take action’ অর্থাৎ আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধ আপনারই হাতে। আর্থ্রাইটিসে গিঁটে গিঁটে ব্যথা হয়। গিঁট ফুলে যায়। সকালে ঘুম থেকে জাগার পর বিছানা ছাড়ার সময় থেকে প্রায় ঘণ্টাখানেক তীব্র ব্যথা বোধ হয়। জ্বর জ্বর অনুভব হয়। বড় গিঁট, ছোট গিঁট সবই ব্যথা করে। হাঁটার সময় খোঁড়াতে হয়। হাতে কিছু ধরা কষ্ট হয়। উঁচু-নিচু জায়গায় ওঠানামা করতে কষ্ট হয়। ব্যথার ঔষধ সেবন করতে গিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। অনেকের কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন প্যারাসিটামল সেবন করতে হয়। কিছু কিছু ডিজিজ মডিফাইং ড্রাগ সেবন করা যায়। আর্থ্রাইটিস জাতীয় রোগের সম্পূর্ণ নির্মূল নেই, কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। ফিজিওথেরাপি এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
মানসিক রোগ ও আর্থ্রাইটিসে ভুক্তভোগীরা জানে কী পরিমাণ কষ্টে তাদের জীবন যায়। কাজেই সময় থাকতেই মানসিক রোগ ও আর্থ্রাইটিস বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।
* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখা পাঠানোর
ই-মেইল : [email protected]