বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৩ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

কণ্ঠস্বর ভঙ্গের কারণ ও করণীয়

ডাঃ মোঃ তৌহিদুল ইসলাম খান
কণ্ঠস্বর ভঙ্গের কারণ ও করণীয়

ঠাণ্ডা লেগে বা খুব চেঁচামেচি করে গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যাওয়া খুবই সাধারণ উপসর্গ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে গলার স্বরে পরিবর্তন হলেও অনেকে সজাগ হন না। কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন বড় রোগের লক্ষণ হতে পারে। গলা বসে যাওয়া, কথা ফ্যাসফেসে হয়ে যাওয়া আপাতদৃষ্টিতে খুবই সাধারণ স্বাস্থ্য-সমস্যা মনে হলেও আদতে তা না-ও হতে পারে। যদি সাধারণ ঠাণ্ডা লেগে গলা বসে যায় বা কণ্ঠস্বর পাল্টে যায়, তা দিনকয়েকের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা না হলে ইএনটি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ করতে হবে।

ল্যারিংক্স বা স্বরযন্ত্রের অবস্থান স্পর্শকাতর জায়গায়। বাইরে থেকে এটি দেখা যায় না। আপার এয়ারওয়ে এবং লোয়ার এয়ারওয়ের সংযোগস্থলে থাকে দুটি ভোকাল কর্ড। এর পরে শুরু হয় ট্র্যাকিয়া বা শ্বাসনালি, যা ফুসফুসের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। অর্থাৎ স্বরযন্ত্রের কারণে আমরা কথা বলতে পারি। আবার শ্বাসনালির প্রবেশদ্বারে এর অবস্থান হওয়ায় সুস্থভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চলাচলের সঙ্গে ভোকাল কর্ডের সম্পর্ক রয়েছে। গলার স্বর পাল্টে যাওয়া মানে ভোকাল কর্ডের ছন্দে সমস্যা হচ্ছে।

গলা ভাঙাকে অনেকেই খুব একটা গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। কিন্তু এই গলা ভাঙাই অনেক সময় মারাত্মক কোনো রোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে। এমনকি সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা বা দীর্ঘক্ষণ জোরে কথা বললেও গলার স্বর ভাঙতে পারে। তবে দীর্ঘদিন এই সমস্যা হচ্ছে, কিছুতেই সারছে না, বিশেষ করে আপনি যদি ধূমপায়ী হয়ে থাকেন, তবে সতর্ক হোন।

কারণ

১. ল্যারেনজাইটিস : গলার স্বর পরিবর্তনের সবচেয়ে প্রচলিত কারণ হল ল্যারেনজাইটিস বা শ্বাসনালিতে সংক্রমণ। এটি দু প্রকার হতে পারে। অ্যাকিউট এবং ক্রনিক। অ্যাকিউট ল্যারেনজাইটিস সাধারণত ঠাণ্ডা লেগে বা হঠাৎ খুব জোরে চিৎকার করে কথা বলার কারণে হয়। এসি এবং নন-এসির মধ্যে দ্রুত পরিবর্তন, ঠাণ্ডা কিছু খাওয়া থেকে অ্যাকিউট ল্যারেনজাইটিস হতে পারে। বিশ্রাম এবং নিয়মিত ভেপার নিলে অ্যাকিউট ল্যারেনজাইটিস সেরে যায়। বাড়াবাড়ি হলে অ্যান্টি-বায়োটিক বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। তবে মূলত এর চিকিৎসা, গলাকে বিশ্রাম দেয়া।

ক্রনিক ল্যারেনজাইটিস : পেশার কারণে জোরে বা বেশি কথা বলতে হয় যাদের, তাদের ল্যারেনজাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কারও কারও ক্ষেত্রে বিষয়টি ক্রনিক, সারা বছরের। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় অন্তর ব্যক্তির গলার স্বর বসে যায়। সাংবাদিক, আইনজীবী, ডাক্তার, গায়ক, এমনকি ট্রেনের হকারদেরও এই সমস্যা হতে পারে। সমস্যাটি যদি ক্রনিক হয়, তবে ভয়েস থেরাপিস্টের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। তাঁদের পরামর্শ মতো নিয়মিত ভেপার নিয়ে, ভোকাল হাইজিনের দিকটিও মাথায় রাখতে হবে।

২. ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের ক্যানসারে ভোকাল কর্ড বা এর স্নায়ু আক্রান্ত হয়ে গলা বসে যেতে পারে।

৩. থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যায়ও অনেক সময় গলার স্বর বসে যায়।

৪. এছাড়া গলার কোনো অস্ত্রোপচারে ভোকাল কর্ড বা স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গলা বসে যেতে পারে।

সাধারণ চিকিৎসা

১. লবণপানি দিয়ে গড়গড়া করাটা সবচেয়ে সাধারণ এবং একই সঙ্গে কার্যকর পদ্ধতি। দিনে অন্তত চারবার লবণপানি দিয়ে গড়গড়া করতে হবে। গলা ভাঙা উপশমে ভালো আরেকটি পদ্ধতি হলো গরম বাষ্প টানা। ফুটন্ত পানির বাষ্প যদি দৈনিক অন্তত ১০ মিনিট মুখ ও গলা দিয়ে টানা হয়, তবে উপকার হবে।

২. ভাঙা গলায় হালকা গরম লেবু পানি ও আদা বেশ কার্যকর। শুকনো আদায় ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী উপাদান রয়েছে, যা গলার বসে যাওয়া স্বরকে স্বাভাবিক করে তুলতে পারে।

৩. যাঁরা জোরে কথা বলেন, যাঁদের সর্বদা কণ্ঠ ব্যবহার করতে হয়, যেমন সংগীতশিল্পী, রাজনীতিবিদ- তাঁরা কিছুদিন কণ্ঠের বিশ্রাম নেবেন। এই বিশ্রামের ফলে শ্বাসনালিতে প্রদাহ কমে আসবে। তবে এমন সব চিকিৎসা অনেক সময় কাজে দেয় না। দিনের পর দিন ধরে গলার স্বর বসে থাকে। গলা দিয়ে কথা বের হতে চায় না। স্বর বদলে যায়। ফ্যাসফেসে আওয়াজ হয়। এ ধরনের রোগীদের মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ আরও বিপজ্জনক কোনো রোগের সম্মুখীন হন। তাই জেনে নিতে হবে বিপদচিহ্নগুলো।

কখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাবেন

১. গলা একবার বসে যাওয়ার পর তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়।

২. যদি রোগী ধূমপায়ী হয়।

৩. যদি রোগী পান-সুপারি-জর্দা খায়

৪. বয়স ৪০ বা বেশি হলে

৫. গলা বসার সঙ্গে দীর্ঘদিনের কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত, ওজন হ্রাস বা অন্যান্য উপসর্গ যদি থাকে।

কণ্ঠনালী ও কণ্ঠস্বরের যত্ন

১. প্রথমেই উচ্চস্বরে কথা বালা ও চিৎকার-চেঁচামেচি থেকে বিরত থাকতে হবে।

২. কথা বলা বন্ধ করতে হবে বা কমিয়ে দিতে হবে।

৩. ধূমপান ও পান-সুপারি-জর্দা গলার যে কোনো সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দেয় বা জটিল করে তোলে। তাই এসব বদঅভ্যাস থেকে বিরত থাকতে হবে।

উপদেশ

রোগী সময়মত আসলে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আধুনিক পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে ধরতে পারেন যে, ক্যানসার হয়েছে কি না।

হঠাৎ করে কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে গিয়ে ক্যানসারের তৃতীয় বা চতুর্থ স্টেজে গিয়ে যদি ধরা পড়ে, তখনও চিকিৎসা সম্ভব। কিন্তু তা বেশ জটিল এবং রোগীর পক্ষে কষ্টকর। মনে রাখতে হবে, ভোকাল কর্ডের ক্যানসারের চিকিৎসা সম্ভব।

প্রথম বা দ্বিতীয় স্টেজে ভোকাল কর্ডের ক্যানসারের/ম্যালিগন্যান্সি ধরা পড়লে, তার চিকিৎসা করিয়ে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। তাই অযথা যেমন আতঙ্কিত হবেন না, তেমনই কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হলে সময় থাকতে সজাগ হন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়