প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
মুখোশহীন মুখ আজ বিপজ্জনক। যার নাকে-মুখে মাস্ক নেই সে আজ তার চারপাশের প্রিয় মানুষের জন্যে ভীতিকর। কে যে করোনার জীবাণু বহন করছেন তা কেউ বলতে পারে না। করোনার কোনো প্রতিষেধক আজও আবিষ্কৃত হয়নি। তাই প্রতিকার নয়, প্রতিরোধই এখন আমাদের কাছে করোনামুক্তির একমাত্র পন্থা। করোনা নামের জীবনঘাতী ভাইরাসের ব্যাস ৫০ ন্যানোমিটার থেকে ১৪০ ন্যানোমিটার। কিন্তু রেসপিরেটরি ড্রপলেট, যা থেকে করোনা ছড়ায়, তাদের ব্যাস ৪-৫ মাইক্রোমিটার বা ৪০০০-৫০০০ ন্যানোমিটার। অর্থাৎ করোনাবাহী মুখগহ্বর বা নাসিকা ছিদ্র হতে নিঃসৃত ড্রপলেট বা এরোসলের ব্যাস করোনাভাইরাস হতে অনেক বেশি। পক্ষান্তরে আমাদের ব্যবহৃত মাস্কে যে ছিদ্র থাকে তার ব্যাস ৮০-৫০০ মাইক্রোমিটার। কাজেই কেবল একস্তরবিশিষ্ট মাস্ক দিয়ে কখনোই জীবাণু সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হবে না। আমাদের দেশে যারা বোরকার নেকাবকে কিংবা হিজাব বা ওড়নাকে মাস্ক হিসেবে বিকল্প ব্যবহার করতে চান, তাদের জন্যে এটা স্পষ্ট যে, এসব কাপড়ের ছিদ্রের ব্যাস জীবাণুবাহী ড্রপলেটের ব্যাসের চেয়ে অনেক বড়। ফলে জীবাণু খুব সহজেই দেহে অনুপ্রবেশ করতে পারে। এজন্যে কাপড় নয়, মাস্কই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ ও কার্যকর।
মেডিক্যাল মাস্কের প্রকারভেদ
ঘ৯৫ মাস্ক
এটি জীবাণুর অনুপ্রবেশ রোধে অত্যধিক কার্যকর। তবে যারা সরাসরি কোভিড রোগীর চিকিৎসা-কার্যক্রমে নিযুক্ত আছেন তারাই এই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। একটানা দীর্ঘক্ষণ এই মাস্ক ব্যবহার করলে ব্যবহারকারী নিজেই শ্বাসকষ্টে ভুগতে পারেন। তাই যাদের শ্বাসকষ্ট আছে তারা এই মাস্ক না ব্যবহার করাই উত্তম। এটা দৃঢ়ভাবে বাতাস নিরোধী।
সার্জিক্যাল মাস্ক
এটি তিনস্তরবিশিষ্ট মাস্ক। যা সাধারণত সার্জনরা অপারেশনরুমে ব্যবহার করেন, নিজেদের কথা, হাঁচি, কাশি, নিঃশ্বাসে নির্গত জীবাণু যাতে রোগীর ক্ষতি না করতে পারে সেজন্যে। তবে এই মাস্ক নাকে-মুখে আঁটোসাঁটো হিসেবে ফিটিং থাকে না। ভেতরের সাদা স্তরটি ফিল্টার হিসেবে কাজ করে যা ক্ষুদ্র কণিকাগুলো আটকে দেয়। এই মাস্ক একবারই ব্যবহার করা যায়। তারপর ফেলে দিতে হয় নিরাপদ জায়গায়।
কাপড়ের মাস্ক
সাধারণ জনগণ যারা করোনারোগীর চিকিৎসার সাথে সংশ্লিষ্ট নন তারা এই কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করবেন। এটি দ্বি-স্তর হতে ত্রিস্তরী হতে পারে। এটি বার বার ধুয়ে ব্যবহার করা যায়। এটি নাকে-মুখে চমৎকারভাবে আঁটসাঁট হয়ে লেগে থাকে। থুতনি হতে কানের গোড়া পর্যন্ত এটি বিস্তৃত থাকে।
মাস্ক পরাকালীন নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড
মাস্ক পরাকালীন নিঃশ্বাস বায়ুতে যে কার্বন ডাই অক্সাইড থাকে তার কণার ব্যাস ভাইরাসের ব্যাসের চেয়ে অনেক ক্ষুদ্র। ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড সহজেই মাস্কের ছিদ্র ভেদ করে বের হয়ে আসতে পারে। এতে প্রশ্বাস গ্রহণে কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু ভাইরাস অনুপ্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হয়। স্বাভাবিক ডিটারজেন্ট দিয়ে কাপড়ের মাস্ক পরিষ্কার করে আবার পরিধান করা যায়।
মাস্ক কারা পরবেন না, কখন পরবেন না
* দুই বছরের নিচে শিশুদের মাস্ক পরানো যাবে না।
* নিজে কোনো ভিড়হীন মুক্তাঙ্গনে থাকলে মাস্ক পরার দরকার নেই।
* যাদের তীব্র শ্বাসকষ্ট আছে কিন্তু কোভিড পেশেন্ট না।
যাদের মাস্ক পরতেই হবে
* দুই বছরের ওপরে বয়সী সকল সুস্থ মানুষ।
* কোভিডাক্রান্ত (করোনাভাইরাসে আক্রান্ত) রোগী।
* সকল স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসক।
* যারা রাস্তায় ভিড়-ভাট্টায় চলাফেরা করেন তারা সবাই।
* বাস-ট্রেন-উড়োজাহাজ-জাহাজে ভ্রমণকারী সবাই।
মাস্ক পরার উপকারিতা
* কোভিড সংক্রমণ হতে রেহাই পাওয়া যায়।
* বাতাসে ভেসে থাকা ধূলাবালি, ফুলের রেণুর অ্যালার্জি হতে দূরে থাকা যায়।
* কার্বনবাহী গাড়ির নির্গত কালো ধোঁয়ার হাত থেকে বাঁচা যায়।
* নিজের মুখের দুর্গন্ধ অন্যের নাকে পৌঁছে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়া থেকে বাঁচা যায়।
* যাদের ক্রনিক টনসিলাইটিস আছে বা সাইনুসাইটিস আছে তাদের সংক্রমণ ও প্রদাহ কমে আসে। অর্থাৎ রোগের উপসর্গ হ্রাস পায়।
* ধূমপায়ীদের মুখের ধূমপানের গন্ধকে এড়ানো যায়।
* যাদের ত্বক সূর্যকিরণ সংবেদী তাদের মুখের ত্বক সূর্যালোকে কালো হয়ে যাওয়া বা পুড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়।
মাস্ক নিয়ে যা করা বিপজ্জনক
* মাস্কের মাঝখানে হাত দিয়ে বার বার স্পর্শ করা।
* মাস্ক থুতনিতে রাখা।
* মাস্ক কপালে উঠিয়ে রাখা।
* মাস্ক মুখে-নাকে না পরে পকেটে রাখা।
* মাস্ক নাকের নিচে পরা।
* একজনের মাস্ক আরেকজনে পরা।
* একজনের মাস্কের সাথে আরেকজনের মাস্ক মিলিয়ে রাখা।
* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখা পাঠানোর
ই-মেইল : [email protected]