রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

বিষাদের কালো রং
অনলাইন ডেস্ক

আজকের দিনে ফোন রিসিভ করবেন ভাবিনি, বিয়ের দিনে, নতুন বউকে রেখে কেউ ফোন রিসিভ করে? স্পষ্ট শুনতে পেলো নিলয়। ফোনের ও পাশ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে নিলা আবার বলল, বিয়ে কি হয়ে গেছে? নতুন বউ কোথায়? আশেপাশে আছে? কথা বলা যাবে?

নিলয় চুপ করে আছে, কোন কথা বলছে না, এক ধীধায় শুনছে শুধু কথা গুলো মনে হচ্ছে তার কথা বলার মতো কিছুই নেই। সে কথা খুঁজেই পায় না কি বলবে? কিভাবে বলবে?আজ তার কাছে কোন কথাই নেই, নিলয়ের বুক ভারী হয়ে আসছে, খুব কান্না পাচ্ছে তবে কান্না করা যাবে না আজ শরীর কাঁপছে, কথা বলার মতো শক্তি ও পাচ্ছে না এক ফোঁটা।

নিলয়ের কোন কথা শুনতে না পেয়ে কিছুটা অবাক হলো নিলা। সাথে কিছুটা চিন্তা হতে লাগলো নিলার।

নিলা ছোট বেলা থেকেই একাই বসবাস করছে, কারণ নিলার মা-বাবা ছোট বেলাতেই কোন এক দুর্ঘটনায় মারা যায় তখন নিলা ক্লাস নাইনে উঠেছে মাত্র। নিলার আত্মীয় বলতে কেউ ছিল না। নিলার মা-বাবা পালিয়ে বিয়ে করেছিল। যার কারণে নিলার দাদা-দাদু নানা মামা কারো সাথে তাদের যোগাযোগ নেই। শুধু একটা আন্টিকে চিনে নিলা। যাকে ছোট বেলা থেকে আন্টি বলে আসছি। নিলার বাবা-মাও ওনাকে বোন বলতো তাই নিলা ছোটবেলা থেকেই ওনাকে আন্টি বলে। তাই নিলার মা বাবা মারা যাওয়ার পর ওই আন্টির বাসায় উঠে এবং সাথে কিছু টিউশনও করায়, যেন তার হাত খরচটা উঠে যায়। এখানে থেকেই পড়াশোনা ও টিউশন করায় নিলা। যখন নিলা দশম শ্রেণিতে উঠে তখন নিলয়ের সাথে পরিচয়। নিলা বাসায় গিয়ে গিয়ে টিউশন করতো। আর নিলার এক ছাত্রীর বড় ভাই নিলয়, একই এলাকায় ছিলো, নিলা থেকে নিলয় তিন বছরের বড়। এভাবেই তাদের বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায়। নিলা এখন কলেজে পড়ে তাই এখন মেচে উঠবে চিন্তা করে নিলা। আর কতদিন থাকবে অন্যের বোঝা হয়ে। তাই নিজেই কিছু একটা করার কথা ভাবতেছিলো। নিলা অবশেষে মেচে উঠার জন্য নিজেই এলাকা থেকে চলে আসে তবে নিলয়ের খুব মন খারাপ হয়। কারণ নিলার কলেজ ছিল তার এলাকা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। এতে নিলা ও খুব কষ্ট পেয়েছিল। সে এখন থেকে যাওয়ার আগে একা রুমে অনেকক্ষণ কান্না করেছিলো। দুই বছর যেখানে ছিল সব কিছুই দুহাত বুলিয়ে দেখছিল। যেখানে মা বাবার পর যাদেরকে নিজের করে নিয়েছিলো সেখানে তাদের কেই ছেড়ে যেতে খুব খারাপ লাগছিলো নিলার। খুব খারাপ লাগছিলো মন চায় না নিলার এখান থেকে চলে যেতে। তবে নিয়তি যে বড্ড বেমানান, যেতে তো হবেই, কতদিন অন্যের বোঝা হয়ে থাকা যায়।

সব কিছু ছেড়ে এসে মেচে উঠে খুব খারাপ লাগছে নিলয়ের জন্য। তার কথা খুব মনে পড়ছে, অনেক্ষণ চুপ করে দাঁতে দাঁত রেখেও কান্না যেন থামতেই পারছে না। এখানে অনেকগুলো রুম মেট আছে। তারা সবাই আমার সাথে আশার পরেই খুব ভালো করে মিশে গিয়েছে। নিলার কষ্ট গুলো তাদের কাউকে বুঝতেই দেই নি তার কতটা মন খারাপ হয়েছে। তবে রাতে আর চেপে রাখতে পারেনি, সারারাত কাঁদতে কাঁদতে ভোরে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ে।

মেচে উঠার পর থেকে নানান সমস্যা নতুন করে দেখা দিলো নিলার উপর। আগে তো থাকা, খাওয়া নিয়ে তেমন কোন চিন্তা ছিলো না, তবে এখন খুব চিন্তা হয় টিউশনি করিয়ে। প্রতিমাসের সবাই একটু দেরি হয় বেতন দিতে। সেই সেই মাসেই অনেক সমস্যা পড়তে হয় নিলাকে। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হলো নিলয় বুঝতে পারতো। নিলা কখনোই নিলয় থেকে টাকা নেয় নি, আর নিলার এই আত্মণ্ডসম্মানের জন্যেই নিলা নিলয়ের কাছে অনেক দামি। নিলয় তাই প্রতি মাসের শেষে নিলার সাথে দেখা করতো। দেখা করে, চলে যাওয়ার সময় একটা লাল খাম নিলার কাছে এগিয়ে দিতো। আর বলতো এটা আমার পক্ষ থেকে একটি উপহার। নিলা নিতে চাইতো না। তাই অনেক বার না নেওয়ায় কারণে এবার খামে করে দিয়েছে। যেন সে এটা না ভাবে যে এটাতে তার আত্মসম্মান নষ্ট হবে। তবে এবার নিলয়ের এমন জোড়াজোড়িতে না নিয়ে পারলো না। মাঝে মাঝে নিলা নিলয়ের দিকে এক নজর তাকিয়ে থাকে। আর ভাবে এই ছেলে কিভাবে আমাকে এত ভালো বুঝে। কি করে পারে সে এভাবে বুঝতে? কি করে পারে এত সুন্দর করে ভাবতে? যেইদিন আমার বাড়ির খাবার কথা ইচ্ছে প্রকাশ করি সেদিন বাড়ি থেকে চুরি করে খাবার নিয়ে বিকেলে চলে আসে দেখা করতে। আর যত্ন সহকারে খাবিয়ে দিয়ে দায় খুব সুন্দর করে। হঠাৎ খুব ইচ্ছে হলো নিলার খাসির মাংস খাওয়ার নিলয়কে বলে নিলা। নিলয় বাজারে এই প্রথম গিয়ে খাসির মাংস কিনে নিয়ে এসে তার মাকে দিয়ে রান্না করিয়ে বন্ধুর নাম করে আমার জন্য মাংস নিয়ে হাজির। তার এই পাগলামো গুলোকে খুব বেশি ভালবাসতো নিলা। নিলা জানে, নিলয় তাকে খুব ভালোবাসাতো। তবে তাদের মধ্যে এত যত্নের মধ্যে ও কেউ কাউকে কখনো ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেনি। কখনো কেউ কাউকে প্রকাশ করেনি যে ভালোবাসে। কখনো কেউ কাউকে প্রপোজ করেনি। তাদের দুজন দুজনে প্রতি বিশ্বাসেই তারা এখন পর্যন্ত অনুভূতিতেই দুজন দুজনের মনে রেখেছে। তবু ও দুজনেই জানে দুজন ঐ প্রতি ভালোবাসা কতটুকু।

নিলা কখনো নিলয়কে কোন কিছুতে বাধা দেয় নি, কোন কিছুতে জোর করেনি। ঠিক তেমনি ভালোবাসাটা ও কখনো প্রকাশ করেনি। তবেও নিলা জানে, বুঝে নিলয়ের ভালোবাসার কথা। নিলা এটাও বুঝে, মা-বাবা হারিয়ে যাদের কাছে আশ্রয় পেয়েছিল।যারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের কখনো অসম্মান করবেনা। তাদের অপমান হক এমন কোন কাজ কখনো করবে না। তাই তার ভালোবাসা ও এই ভয়ে প্রকাশ করে নি। তবে নিলা কখনো নিলয়ের উপর রাগ দেখায় নি, সব সময় মিষ্টি সুরে কথা বলে যেতো। কারণ নিলার আপন বলতে তেমন কেউ ছিলো না। তাই সে নিলয়ের সাথে সব সময় ভালো করে কথা বলতো।

‘বিয়ে কি ভেঙে গেছে?’ অনেকক্ষণের নিস্তব্ধতা নীলার কথা প্রশ্ন ভেঙে গেল। নিলয় উত্তর দিল। বিয়ে হয়েছে।

‘বিয়ে হয়েছে’ কথাটা তীরের মত এসে নিলার বুকে বিধলো। আজ প্রথম নিলা রাগান্বিত চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশে কোথাও একটু মেঘ আছে কিনা দেখছে। তবে না কোথাও একটু মেঘ নেই। নিলার খুব রাগ হচ্ছে আকাশের উপর, মানুষের মতো আকাশটাও স্বার্থপর। সে ভাবলো, ভালোই আছে মেঘটুকু আমার বুকে দিয়ে আকাশটা, সুখেই আছে। নিলার হঠাৎ মনে হলো, নিলয়ের দেখা কষ্ট গুলো ঠিক মেঘের মতো। না চাইতেই হুটহাট বৃষ্টি নামে চোখে। চোখও খুব স্বার্থপর। আমার কথা শুনতেই চায় না। অবাধ্য হয়ে, সে শুধু বৃষ্টি নামতেই ভালোবাসে, এই যে আকাশ, চোখ মানুষ তার সাথেই কোন এমন করে? এই উত্তর নিলা খুঁজে পায় না। নিলয়ের বিয়ে হয়েছে তা ভুলে গিয়ে নিলার খুব ইচ্ছে করছে, মেঘে ভিজতে। যেন কষ্টগুলো ধুয়ে যায় একটু হলেও। পৃথিবীর মানুষগুলো বড় বেইমান। বড্ড স্বার্থপর। ছোটবেলা থেকে মা -বাবা ছাড়া আর কেউ আপন বলে পাই নি। তারাও ছেড়ে চলে গেল এখন আপন বলতে সে ছিল সেও হারিয়ে গেলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে তবে তাকাতেই আমার সবকিছু মনে পড়ে যায়। নিলয় বিবাহিত এখন, নিলয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।

নিলা সব ভুলে সব কষ্ট লুকিয়ে কথাবার্তা কিছুটা স্বাভাবিক করার জন্য বলল,

-এটা তো খুশির খবর, তাহলে আপনার এই অবস্থা কেন? ভয় লাগছে এখন?

-বিয়ে হয়েছে, তবে অন্য জনের সাথে। এই কথাটা বলার সময় নিলয় মনে হলো একটা আস্ত পাথর তার বুকের ওপর এসে পড়েছে। বুকে ঘুমন্ত মেঘদলেরা হঠাৎ উতাল পাতাল ঝড় শুরু করেছে। চোখ থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে কয়েক লক্ষ্য বৃষ্টির ফোঁটা। যেন তা বাধা মানতে চাচ্ছে না।

এতকিছু নীলা বুঝতে পারল না। এত গুলো কথা মনে হলো নিলার মাথার ওপর দিয়ে গেছে। আজ তো নিলা আর নিলয়ের বিয়ে হবার কথা ছিল, নিলয় কি সব বলছে? বিয়ে হয়েছে মানে?

তিন বছর আগের ঘটনা।

আমাকে বইমেলায় নিয়ে যাবেন? নিলা সব সময় মতই নিলয়য়ের সাথে দেখা হলে আগে সালাম দিত, যদিও মডার্ন মেয়ে নিলা তবুও তার ধর্মকে যথেষ্ট সম্মান করতো, তবে প্রথমেই তার একটা প্রশ্ন থাকবে, আচ্ছা তবে একটু ব্যস্ত আছি। কদিন পরে গেলে সমস্যা নাই তো? না সমস্যা নেই, নিলা একটু মন খারাপ করেই বললো।

নিলা অপেক্ষা করতে থাকে নিলয়ের ফোনের। সে জানে নিলয়ের প্রয়োজন ছাড়া তাকে ফোন দেয় না, এই সব নিয়ে নিলার অনেক মন খারাপ হয়। তবে নিলয়কে কখনো কিছু বলে না। কি বলবে কিছু বলার মতো অধিকার যে নেই! দিন দিন যত অতিবাহিত হতে লাগলো ততই যেন নিলার ভালোবাসা ও বেড়েই যাচ্ছে। নিলা ফোনের অপেক্ষায় থাকতে না পেরে সে নিলয়কে কয়েকবার কল ও দিয়ে ফেলছে। তাদের মধ্যে ফোনে কথা হতো না। সব সময় মেসেজেই কথা বলে গেছেন। নিলয় ও নিলার কল পেয়ে বেক করতো তবে সেও কখনো প্রকাশ করে নি। তার ভালোবাসা যত বারি কল দিতে ততবারি কোন না প্রয়োজনে নিলাকে বলে দিত, তার এটা পর্যন্ত ওটা পছন্দ। একদিন নিলয় নিলাকে অনেক ব্যস্ততা দেখায়, নিলা কল দিলেও নিলয় কল বেক করে নি। এতে নিলার খুব কষ্ট হয়। নিলার অনেক কান্না পেয়ে ছিলো। রাতে নিলা ঘুমানোর সময় অনেক কেঁদেছে। চোখের পানিতে বালিশের এক কোনা ভিজে গিয়েছিলো।

অনেকদিন পর নিলা আবার ফোন করলো। এবার নিলয় তড়িঘড়ি করে রিসিভ করলো।

সে বললো :

-আপনি কি আমাকে সত্যি বই মেলায় নিয়ে যাবেন?

-কেন নিয়ে যাবো না। ব্যস্ত আছি বলে কল দেওয়া হয় নি। ফ্রি হলেই নিয়ে যাব।

-আচ্ছা তবে আপনি আমাকে যতদিন না নিয়ে যাবেন ততদিন আমি কিছুই খাবো না।

-(নিলয় বুঝতে পারলো, সে রাগে, অভিমান নিয়ে কথা গুলো বললো। নীলয় বলল) পাগলামি করো না।

-‘আচ্ছা’ (বলেই নীলা চুপ হয়ে গেল। নিলয় আবার বলল)

-আচ্ছা নিয়ে যাবো। অভিমান করো না। তুমি আমার কাছে কখনই কিছু জেদ করো নি। আজ করছো কিন্তু আজ তো আমি একদমি ব্যস্ত।

-নিলা আবারো বললো আচ্ছা তবে এবার নিলা কান্নাই করে দিলো তবে নিলয়কে তা বুঝতে দিলো না। নিলা নিস্তবে কান্না করেই যাচ্ছে। তার কন্ঠ এখন খুব ভারি হয়ে উঠেছে। তবু ও কিছুই বলছে না নিলয়কে ফোন কাটার পর নিলা খুব কষ্ট পেল। তার কেন যানি কষ্ট লাগছে। একটু আজকের জন্যই তো মেয়েটি বের হতে চেয়েছিলো। এমন কেউ নেই যে তাকে সে বলবে কোথাও নিয়ে যাবার কথা। নিলয়কে ছাড়া নিলা আর কাউকেই, কারো সাথেই কোন কিছু শেয়ার করতো না।

নিলা চুপ করে বারান্দায় এসে বসে আছে। বাসার সামনেই মেইন রোড। তাই সে ব্যস্ত সমাজে ব্যস্ততার মানুষদের দেখছে। আর ভাবছে মানুষ কতই না ব্যস্ত। ব্যস্ততা মানুষকেই আগড়ে রেখেছে। ব্যস্ততা মানুষকে যেন ছাড়েই না। তখনি মনে পড়ে যায়:-

জীবন সেতো কিছুই নয়, যদি তা হয় শুধুই কর্মময়

আমাদের দাঁড়ানোর ও তাকানোর নেই সময়

গাছের নিচে জিরিয়ে হয় না আমাদের সময়

যদিও গরু ছাগল তা সময় পায়।

এই ব্যস্ত সমাজে, ব্যস্ত শহরে আপন লোক ও ব্যস্ততাতেই হারিয়ে যায়। তাদের প্রিয় লোকদের পারে না সময় দিতে। তারা পারে না মন খুলে কথা বলতে। তারা তাদেরকে গুরুত্ব দিলেও পারে না প্রকাশ করতে। তাদের কতটা ভালোবাসে কথাটি বলতে।

নিলা এত কিছু ভাবতে ভাবতে কতক্ষণ যে তিন ঘণ্টা কেটে গেল সে বুঝতেই পারেনি। ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে। সে আর সাত পাঁচ না ভেবে সে ঘুমিয়ে পড়ল।

নিলয় অনেকগুলো মেসেজ দিয়েছে। তবে সে এত কিছু ভাবতে ভাবতে ফোনের দিকে একটা বারের জন্যেও দেখেনি। নিলয় অপেক্ষায় ছিল সে দেখা করতে আসবে সে পুরনো পার্কে তবে নিলা আসেনি।সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখে নিলয় এর অপেক্ষা করার কতগুলো মেসেজ।নিলা তার মেসেজ পেয়েই নীল শাড়ি পড়ে তার সামনে এসে দাঁড়ালো। নিলা জানে নিলয়ের নীল শাড়ি খুব পছন্দ তাই আজ নিলা নীল শাড়ি, হাতে এক মুঠ চুড়ি , চোখে কাজল কপালে একটা টিপ হালকা লিপস্টিক চুলগুলো খোপা বেঁধেছে। খোপায় রজনীগন্ধা ফুলের গেঁথেছে। হালকা সাজে নিলাকে অপরূপ সুন্দর লাগছে। নিলয়ের আজ মনে হচ্ছে নিলা আজ অনেক বড় হয়ে গেছে। আজ শাড়িতে পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর লাগছে নিলাকে।নিলয় এক নজর তাকিয়ে আছে যেন চোখের পলক নামছে না। আজ ও দূর থেকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েছে। তাকিয়ে থেকেও কাছে আসার পর দৃষ্টি নামিয়ে ফেলল।যেন না বুঝতে পারে নিলা। নিলা দিন দিন যেন পরি হচ্ছে।

-যাবেন না? নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন?

-দাঁড়িয়ে থাকলে কি তোমার অসুবিধা?

-না মানে! আপনি যেভাবেই থাকবেন আমার ভালোই লাগে বলেই নিলা হেঁসে দিলো।

-হ্যাঁ চলো। নিলার কথা শুনে নিলয় কিছুটা লজ্জা পেলো সে দ্রুত চোখ অন্য দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো।

-‘আজকে বড্ড ভীর’ নিলয় নিলাকে রাগানোর জন্য কথা বললো। কিন্ত নিলার আজ ভালোই লাগছে।

-শেষের সপ্তাহে একটু ভির থাকবেই।

-কোন বই তো কিনলে না খালি পুরো মেলা ঘুরাঘুরি করলাম।

-আপনি পছন্দ করে একটা কিনে দেন।

-হুম (নিলয় গল্প , উপন্যাস বই পড়ে না। পছন্দ ও করে না বই পড়া। তাই সে বই ভালো করে চিনে ও না।) আচ্ছা তুমি তো বই পড় তুমি ভালো জানো কোন বই টা ভালো। নিজে পছন্দ করে একটা বই নিয়ে নাও।

নিলয়ের কথা শুনে নিলা মনে মনে বলে এত বড় হয়েছেন এখনও বই চিনে না। অথচ এ নাকি অনার্সে পড়ে। ধূর আনরোমান্টিক ছেলে একটা।

-নিলা চলো ঐ দোকান টা ঘুরে দেখি বই পছন্দ হয় কিনা। দোকানে যাওয়ার পরেই নিলয়ের ফোনটা বেজে উঠলো।

-আচ্ছা তুমি বই দেখো আমার একটা জরুরী কল আসছে বলেই দোকানের বাহিরে বেরিয়ে গেলো।

নিলার খারাপ লাগলে ও কিছু বলে না। সে বই গুলো দেখতে লাগলো।

নিলয় কথা শেষ করে এসেই বলে আজ কি আর থাকবা? আমার এক জায়গায় যেতে হবে খুব আর্জেন্ট। এই বলেই নিলাকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়েই তার হাত ধরে ভীরের মধ্য দিয়েই বেরিয়ে এলো।

মেয়েটা অচেনা একটা ছেলের পিছে পিছে হাঁটছে। ছেলেটা তার হাত ধরে আছে। সে কিছু বলছে না। ছেলেটা এত সুন্দর কেন? ওহহ কি হ্যান্ডসাম! কালো শার্ট , চোখে একটা কালো চশমা , হাতে কালো ব্যাল্টের একটা ঘড়ি। উহহহ কি সুন্দর লাগছে। ঘড়ির কাটা গুলো কিট কিট শব্দ করে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের চপল গতিতে। আর প্রতিটি শব্দে আমার মন কেড়ে নিচ্ছে। জিজ্ঞাসা করবো? না থাক। ছেলেটা এত আলতো করে কিভাবে অপরিচিত একটা মেয়ের হাত ধরে হাঁটতে পারে? মনে হচ্ছে ছেলেটার মেয়েদের হাত ধরে হাঁটার অভিজ্ঞতা আছে। তার খুব জানতে ইচ্ছে করলো, ছেলেটা সত্যিই কি মেয়েদের হাত ধরে হাঁটার অভিজ্ঞতা আছে কিনা?

অনেকক্ষন পর!

‘আমরা কোথায় যাচ্ছি?’ অপরিচিত একটা মেয়ের কণ্ঠে প্রশ্ন শুনে, নিলয় দাঁড়িয়ে গেলো এবং পিছনে তাকিয়েই বিব্রত বোধ করলো। সেই সাথে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। হাত ধরা ছিলো। দ্রুত হাত ছেড়ে দিলো।

-হাত ছাড়লেন কেন? মেয়েটি হাসিমাখা কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো।

-সরি, সরি (লজ্জিত কন্ঠে বললো নিলয়)

-সমস্যা নাই। বললেন না তো আমরা কোথায় যাচ্ছি?

নিলয়, কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। নীল শাড়িতে মেয়েটাকে একদম নিলার মতোই লাগছিলো। তাই এত ভীরে ও তাড়াহুড়ার মধ্যে দিয়ে নিলা ভেবে এই মেয়ের হাত ধরে নিয়ে এসেছে। আর এই মেয়ে ও কোন ভাবে না যাওয়ার কথা বলে নি কোন আওয়াজ করে নি। যার কারনে নিলয় ও বুঝতে পারে নি। এখন কি বলবে।

-কি ভাবতাছেন?

-সরি, আসলে আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে আপনাকে গুলিয়ে ফেলার জন্য। আপনি নীল শাড়ি পড়া আর সেও আজ নীল শাড়ি পড়ে এসেছে। এই জন্য মিস্টেক হয়েছে।

-এই জন্য না দেখে অন্য মেয়েকে টেনে নিয়ে আসবেন? (রাগি কণ্ঠে)

-দুঃখিত, আমি সত্যিই দুঃখিত।

-মেয়েটা কিছু একটা ভেবেই, হঠাৎ নিলয়ের হাত ধরে হাঁটতে লাগলো। নিলয় বাকরুদ্ধ হয়ে তার পিছনে পিছনে যাচ্ছে। থেমে যাওয়া উচিত নাকি পিছন পিছন যাওয়া উচিত নিলয় বুজতেই পারছে না। কি করবে এখন সে? কি করা উচিত এখন তার? মেয়েটাকে বুঝার চেষ্টা করছে। তবে বুঝে উঠতে পারছে না। মেয়েটা কি পাগল নাকি?

-পাগল বলুন আর যাই বলুন এখন চলুন।

-নিলয় ভেবে পাচ্ছে না। মনের কথা কি করে বুঝতে পারলো মেয়েটি। না না, আপনাকে পাগল কেন বলবো? নিজেকে বাঁচাতে তাড়াহুড়া করেই উত্তর টা দিলো।

-আমাকে পাগল না ভাবলে, আপনি শিউর পাগল। এখানে কোন ভুল নাই।

-আপনি কি সত্যিই পাগল?

-পাগল কথাটি বলেই মেয়েটি হেসে দিলো।না না, নিলয়ের কথা শেষ করার আগেই এই আপনি এত না না করছেন কেন? আপনার নানাকে কি খুব মিস করতেছেন?

মেয়েটার এত জোর খাটানো দেখে নীলয় হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলো আর খুব রাগী গলায় হাত জারি দিয়ে বলে উঠলো হাত ছাড়ুন " আমি তো আগেই বলেছি আমি আপনাকে অন্য একজনের সাথে গুলিয়ে ফেলেছি। তার এত জোরে কন্ঠের কারণে আশপাশ সবাই দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনতেছে। নিলয় আবার বলা শুরু করলে, আমি তো বলছি আমি সরি। তো কেন এত কথা বলছেন আর কেন এত জোড় খাটাচ্ছেন। কেন, কি?

মেয়েটা নিলয়ের এমন রাগী চেহারা দেখে অনেক ভয় পেয়েছে। মেয়েটার কিছু বলছে না। চুপচাপ হয়ে তার কথাগুলো অনবরত শুনেই যাচ্ছে।

-সে কে, যার সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলছেন? আপনার গার্লফ্রেন্ড বুঝি।

-সে কে, আমি আপনাকে কেন বলবো, যদি ভাবেন যে সে আমার গার্লফ্রেন্ড তো তাই আর কিছু।

নিলয় মেয়েটির উপর খুব বিরক্ত।

নিলয়ের ফোন বেজে উঠলো,নিলা কল দিছে, ধমক দিয়ে বললো নিলা,

-কোথায় আপনি?

-বাইরে চলে এসেছি তুমি চলে আসো গেইটে দাঁড়িয়ে আছি। -আমাকে না নিয়ে চলে গেলেন? নীলা আরো কিছু বলার আগেই ফোন কেটে যায়। নিলার মেজাজ খুব গরম হয়ে গেলো। পারে না সে সেখানের সব কিছুই ভেঙে ফেলে তবে, সব কিছুর মধ্যে ও নিজেকে সামনে নিলো।

-সে ফোন দেয়েছে কি?

কে ফোন দিয়েছে তা জেনে আপনি কি করবেন।

-আপনার কি মেজাজ খারাপ। আচ্ছা আমি ও দুঃখিত। মজা করার জন্য, আসলে আমি বুঝেছিলাম আপনি অন্য কারোর সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলেছেন।

-‘আসলে ভুলটা আমারি তাড়াহুড়া করে না দেখে এভাবে। সরি আবারো

-সমস্যা নাই আমি ও সরি। আমার নাম নিহা, আর আপনি?

-আমি নিলয়।

নিলা গেটের সামনে এসে অন্য মেয়ের সাথে নিলয়কে দেখে তার মেজাজ যেন আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো, কাছে আসতেই দেখলো নিহা ও তার মতোই নীল শাড়ি পড়া। মেয়েটা দেখতেও বেশ সুন্দর। নিলা নিজের সাথে নিহার তুলনা করলো। হঠাৎ যেনো নিলার চোখের কোনে পানি চলে আসলে। নীলা এই চোখের পানির কারণ জানে না।

-মেয়েটি কে?

-নিলয় বলার আগেই নিহা বললো আমি নিহা। শাড়ি পড়েছি বলে আপনার সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলে। এবং আপনাকে ভেবে আমার হাত ধরে টেনে এখানে নিয়ে আসে।

-নিলার মাথা ঘুরে গেলো, হাত ধরে এনেছে শুনেই। নিলার বুক গলা ধীরে ধীরে ভারী হয়ে আসছে। নিলার মন চাচ্ছে সবকিছু ভেঙে ফেলতে তবে পাচ্ছে না। নিলা পারে না মেয়েটিকে ইচ্ছেমতো কয়েকটা বকা দেয়। হ্যাঁ ভুল করে ধরেছে তাই বলে এতদূর চলে আসতে হবে।

নিলা নীরবে কান্না ছাড়া কিছুই করতে পারছে না। এমন একটি আওয়াজ আছে যা শব্দহীন। নিলার ও আজ তাই অবস্থা। কান্না আসছে তবে শব্দ হচ্ছে না। পানি বের হচ্ছে না। তবে শুধুই বুক ভেজা কান্না।

নিলয় নিহার রিকুয়েসটে তার ফোন নাম্বার নিহাকে দিলো নিলার সামনেই, তবে নিলা আজ মানা ও করতে পারছেনা। নিলা আর কথা বললো না। নিলয় কথা বললেও নিলা চুপচাপ শুনে গেছে। নিলার আজ কোন কথাই মুখ থেকে আসছে না।

নিলার নিজের উপর প্রচুর মন খারাপ হয়েছিলো। কেন সে নীল শাড়ি পড়তে গেলো। কেনো, কেনো, কেনো? আজ নিলা প্রোমিজ করলো। আর কোন দিন শাড়ি পড়বে না। মেচে এসে গভীর রাতে অনেক কান্না করেছিলো।

-কার সাথে বিয়ে হয়েছে? নিলা ভাবনার জগত থেকে বাস্তবে ফিরে এসে জানতে চাইলো।

-জানি না কার সাথে বিয়ে হয়েছে। তবে গতকাল বিয়ে হয়েছে। আজ সকালে সে চলে গেছে তার নতুন ঠিকানায়, বলেই কান্না করে দিলো নিলয়।

-কিভাবে কি হলো? আপনার সাথে না আজকে বিয়ে হবার কথা ছিলো? নিহার মাই তো আজকের দিনটা ঠিক করেছিলো। নিলা বেশ কৌতুহল হয়ে জানতে চাইলো!

-নিলয় বলতে লাগলো। নিহার মা আমাকে কখনোই পছন্দ করেনি। আমি বেকার, আর আমি এখনো তেমন কিছুই করি না। এমন ছেলেকে কেইবা পছন্দ করবে। এবং তাদের একমাত্র মেয়ের সাথে কি বিয়ে দিবে? সব কিছু নিহার মায়ের সাজানো ছিলো। আমার সাথে নিহার বিয়ে ঠিক করেছে শুধু নিহার পাগলামোর জন্য। সব কিছু যখন স্বাভাবিক তখন নিহার মা অসুস্থ হয়ে পরে। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এবং অসুস্থতা দেখিয়ে নিহার মা নিহাকে গতকাল রাতেই নিহার মায়ের পছন্দ করার ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়।

নিলয় কথা গুলো বলেই চুপ করে গেলো। নিলা চুপ করে আছে।

-নিলয় আবার বলা শুরু করলো -আমার সাথে কেন এমন হলো, বলতে পারো? যাকে পেয়েছিলাম তাকে অবহেলা তাকে ছেড়ে দিলাম। আরেক জনের মায়ায় পরে। আর এখন হুট করে একজন এসে স্বপ্ন দেখালো ভালোবাসতে বাদ্য করলো। তাকে ভালো ও বাসলাম। অথচো সে এভাবে চলে গেলো। আজ আমার জন্যই আমাকে এত বড় শাস্তির মুখোমুখি হলাম।

-নিলা কি বলবে সে নিজেই জানে না। কি বলা উচিত তাও জানে না নিলা। নিলা আজ নিজের মনের কথা গুলো খুব করে ভাবছে। তবুও সে নিলয়কে বলে, এত মন খারাপ করবেন না। আল্লাহ আছেন, নিশ্চই আপনার জন্য ভালো কিছু রেখেছেন। একদিন আপনি খুব সুখে থাকবেন, আনন্দে থাকবেন।

-আমার জন্য মা-বাবাকে কত অপমানিত হতে হলো। এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি নাহ। নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে।

-এতো মন খারাপ করবেন না, যা হবার ছিলো তাই হয়েছে।

-আমার আগেই বোঝার উচিত ছিলো । এই বেকার ছেলের হাতে কেনই বা তার মেয়েকে তুলে দিবে।

-নিজেকে এত ছোট ভাববেন না। আপনি যেমন তেমনি ভালো।

-আচ্ছা এখন রাখি ভালো লাগছে না।

-কি করবেন এখন? কোথায় যাবেন?

-জানি না কোথায় যাবো। কি করবো? তবে বাসায় যাবো না। যেদিকে যেতে ইচ্ছে করে সেদিকেই চলে যাবো। দূরে কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে করছে। তবে আমি একা, শুধুই একা।

নিলার খুব ইচ্ছে করছিলো নিলয়ের সাথে কথা বলতে। তবে তার আগেই কলটা কেটে দিলো নিলয়। নিলার ইচ্ছে করছিলো নিলয়ের কষ্ট গুলো ভাগ করে নিতে। কিন্ত নিলয় কখনো নিজের কষ্ট গুলো কখনোই কাউকে বলে না। নিজের মধ্যেই রেখে দেয়। এবং সেই কষ্ট তাকে একটু একটু করে ক্ষয় করে দেয়। নিলা নিলয়কে খুব ভালোবাসে। নিজের থেকেও বেশি। যা সে কখনোই প্রকাশ করতে পারে নি, এবং পারবে ও না। মরে গেলে ও না।

নিলা নিলয়কে যেমনটা ভালোবাসতো , নিলয় তাকে ততটা ভালোবাসতোনা। নিলয় নিলাকে শুধু দয়াই দেখিয়ে গেছে। নিলার কেউ নেই এই পৃথিবীতে। তাই নিলাকে শুধু বন্ধুর মতোই দেখতো। তবে নিলা নিলয়ের কর্ম কান্ড দেখে ভাবতো যে নিলয় নিলা অনেক ভালোবাসে। তা যে শুধুই মিথ্যা ছিলো তা নিলা কোন মূল্যেই বুঝতে পারে নি। তবে নিলা তো তখনই বুঝতে পারে যখন নিলয় নিহাকে পেয়ে তাকে ভুলে যায়। নিহার ক্ষনিকের মায়ায় নিলয় তার হয়ে যায়। নিলয়ের সব পাগলামো গুলোকে সত্যি ভাবতে নিলা। নিলা ভাবতো যে নিলয় তাকে ভালোবেসে এসব করছে। তবে সবই মিথ্যা ছিলো , সবই শুধু দয়া ছিলো।

নিলয় ছন্নছাড়া। পাগলের মতো এলোমেলো হয়ে উঠছে। হঠাৎ পা একটা ইটের সাথে লেগে পড়ে গেলো। তবে কোন অনুভুতি হলো না। স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আবারও অনিশ্চিত ঠিকানায় হাটা শুরু করলো।

এখন বেশ অন্ধকার।সব কিছু নিরব, কোন শব্দ হচ্ছে না। একদম স্তব্ধ হয়ে আছে শহরটা। নিলয় এই রাতে একা একা বসে আছে। এখন কটা বাজে সে জানে না। আজ কেন জানি জানতে ইচ্ছে ও করছে না তার। তার মনের মাঝে এই রাতটা যেন খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায়, খুব তাড়াতাড়ি। কিন্ত কেন জানি রাত কাটছেই না। কিন্ত কেন তা আজ নিলয়ের কাছে অজানা। নিলয়ের জানা নেই আসল ঠিকানা। হাটতে হাটতে মনের অজান্তেই ক্লান্ত শরীর নিয়ে একটা বাসের সিটে এসে বসে পড়ে। কখন চোখ রেগে এসেছে তা জানা নেই নিলয়ের। ঘুম থেকে উঠে দেখে চারদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। কেন তাকে কেউ ডাকে নি। সে বুঝে উঠতে পারে না। গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে এক অচেনা বনের মধ্যে চলে এসেছে। বসে আছে একা।

নিলয় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশে তারা নেই। নেই চাঁদ। একদম নিস্তব্ধ একটা আকাশ। মনে হচ্ছে আকাশের বুক থেকে চাঁদটা আজ হারিয়ে গেছে। আজ নিলয়ের খুব জানতে ইচ্ছে করছে ! আমারই মত কি তার বুক থেকে চাঁদ হারিয়ে গেছে? তবে আকাশ থেকে চাঁদ হারিয়ে গেলে ও আকাশ জানে তার চাঁদ তার কাছে ফিরে আসবে। তবে নিলয়ের চাঁদ কি আবার ফিরে আসবে ! নাহ, আজ নিলয় জানে তার চাঁদ আর কখনো ফিরে আসবে না, তার কাছে। তার বুকের অন্ধকার দূর করতে আসবে না। এই অন্ধকার চাঁদ বিহীন একটা জনম কেটে যাবে তার।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়