প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০০:১৬
মব জাস্টিস প্রতিরোধে প্রযুক্তির ব্যবহার
‘মব জাস্টিস’ হলো জনগণের দ্বারা কোনো অপরাধীকে ধরে নিজের হাতে আইন চালিয়ে দেওয়া। সাধারণত কোনো ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং অভিযুক্তকে শাস্তি দেওয়ার জন্যে উদ্ধত হয়। এই ধরনের ঘটনা সাধারণত গ্রামীণ এলাকায় বেশি দেখা যায়, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি কম এবং জনগণের আস্থা আইন ব্যবস্থার প্রতি কম থাকে।
মব জাস্টিসের অনেক নেতিবাচক দিক রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই নিরাপরাধী মানুষ মব জাস্টিসের শিকার হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করে এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। মব জাস্টিস এক প্রকার মানবাধিকার লঙ্ঘন। এছাড়াও মব জাস্টিস সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত সাড়ে ছয় বছরে গণপিটুনিতে কমপক্ষে ২৮৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যানটি মব জাস্টিসের ভয়াবহতার একটি পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরে। এছাড়াও মব জাস্টিসের শিকার হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে থাকেন নারী, পাগল, ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ অনেকেই। এমনকি এর স্বীকার আমি- আপনিও হতে পারি।
তথ্য-প্রযুক্তির অন্ধকার দিক : তথ্য-প্রযুক্তির অগ্রগতি মানবসভ্যতাকে বহু গুণে এগিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এই অগ্রগতির ছায়ায় লুকিয়ে রয়েছে গুজব ও ভুল তথ্যের একটি বিপজ্জনক দিক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অবাধ বিস্তারের ফলে মিথ্যা তথ্য মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং সমাজে বিভ্রান্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আজকাল স্বার্থান্বেষী মহল মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং সমাজকে বিভক্ত করার চেষ্টা করে। এই গুজব প্রায়ই মব জাস্টিসের মতো ভয়াবহ পরিণতি ঘটিয়ে থাকে, জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যাহত করে।
মব জাস্টিস : গুজবের ফলে সৃষ্ট সবচেয়ে ভয়াবহ পরিণতি হলো মব জাস্টিস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো ঘটনা ভাইরাল হওয়ার সাথে সাথে জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং অভিযুক্তকে নিজের হাতে শাস্তি দিতে উদ্ধত হয়। অনেক সময় নিরাপরাধ মানুষও এই গণপিটুনির শিকার হয়। মব জাস্টিস আইনের শাসনকে দুর্বল করে এবং সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। কোনো তথ্য বা খবর শেয়ার করার আগে তার সত্যতা যাচাই করা একান্ত আবশ্যক।
গুজবের বিরুদ্ধে লড়াই : গুজবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সরকার, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষ সবাইকে মিলে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
সরকারের ভূমিকা : সরকারকে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং আইন প্রয়োগ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে একটি কার্যকর ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি বিকাশ করতে হবে। তাদেরকে সত্য ও মিথ্যা আলাদা করতে শিখাতে হবে।
সাংবাদিকতার ভূমিকা : সাংবাদিকদের সত্য সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে গুজবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
সাধারণ মানুষের ভূমিকা : সাধারণ মানুষকে কোনো তথ্য শেয়ার করার আগে তার সত্যতা যাচাই করে নিতে হবে।