প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
হরিসভা মেঘনার তীরে মহাঅষ্টমীর পুণ্যস্নান উৎসবে পুণ্যার্থীদের ঢল
পাপ মোচনের আশা নিয়ে চাঁদপুর পুরাণবাজার হরিসভা মন্দির মেঘনা নদীর তীরে সনাতন হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মহাঅষ্টমীর পুণ্যস্নান উৎসব সম্পূর্ণ হয়েছে। ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পুণ্যার্থীর ঢল নেমেছিলো সেখানে। এই পুণ্যস্নানে চাঁদপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে হাজার হাজার পুণ্যার্থী নারী-পুরুষ অংশ নেয়। পুণ্যার্থীরা নদীতে নেমে ধর্মীয় পুরোহিতদের মাধ্যমে মন্ত্র উচ্চারণ করেন : ‘হে মহা ভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য আমার পাপ হরণ কর। এর পর স্নানের পূর্বে ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরিতকি, ডাব, আম পাতা ইত্যাদি পিতৃকূলের উদ্দেশ্যে নদীর জলে অর্পণ করেন। সবশেষে তারা পাপ মোচনের আশায় নদীর জলে পুণ্যস্নান করেন।
প্রতিবছর চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তত্ত্বাবধায়নে হরিসভা মন্দির কমপ্লেক্সের অধীনে এই স্নান উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে হরিসভা মন্দির প্রাঙ্গণে রাস্তার দুই পাশে মেলা বসে।
স্থানীয় পুণ্যার্থীদের মতে, চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে হিন্দু সম্প্রদায় পবিত্র অষ্টমী স্নানে অংশ নেয়। কারণ এই সময় জগতের সব পবিত্র স্থানের পুণ্য ব্রহ্মপুত্রে মিলিত হয়। তখন নদীর জলের স্নান করলে পাপ মোচন হয়। আগত ভক্তরা জানান, শত বছর ধরে মেঘনার তীরে পুণ্যস্ন্যান উৎসব হয়ে আসছে। তাদের বিশ্বাস বহ্মপুত্রসহ সব নদীর জল মেঘনা নদীতে এসে মিশেছে।
এবার পুণ্যস্নানের লগ্ন শুরু হয় ১৫ এপ্রিল সোমবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে। আর শেষ হয় ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৫৬ মিনিটে।
দুপুরে স্নান উৎসব পরিদর্শন করেন চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ। তারা আগত ভক্তবৃন্দদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। জেলা জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক সরকারের পরিচালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর আব্দুল মালেক শেখ, পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজিব শর্মা, চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন সাহা, দপ্তর সম্পাদক রঞ্জিত সাহা মুন্না, চাঁদপুর পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নেপাল সাহা।
এ সময় হরিসভা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক উমেশ সাহা, জেলা পূজা পরিষদের সদস্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোপাল সাহা, সদস্য গোবিন্দ সাহা, বেবীন্টন দাস, বলাই, হরিসভা স্নান আয়োজক কমিটির শম্ভু, চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস ডুবরী দলের প্রধান আলী হোসেনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অষ্টমী স্নানে অংশ নিতে আসা পুণ্যার্থীরা বলেন, এই দিনে নদীতে স্নান করলে ভগবান সব পাপ থেকে মুক্ত করে দেন। তাই পাপমুক্তির আশায় প্রতি বছর এখানে আসি। দেশ ও জাতি যেন সকল দুর্যোগ থেকে মুক্তি লাভ করে এবং ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে আমরা সবাই যেন জাতির কল্যাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারি এই কামনাই করেছি সৃষ্টিকর্তার কাছে।
উল্লেখ্য, এবার প্রচণ্ড গরমের মধ্যে এই স্নান উৎসব শুরু হয়। পুণ্যার্থীদের তৃষ্ণা মিটাতে দাসপাড়া শিব মন্দির কমিটি শরবত পরিবেশন করে। তাদের এই আয়োজন বেশ প্রশংসিত হয়।